পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করতে লাগল। এবং তার পরই এই স্কুলে চালান দেওয়া। এই ত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তার। সে-দিন ভোর হতেই সে ভাবছে, এমন কপাল নিয়েও মানুষ জন্মায়। তার শেষ এই আশা হয়েছিল যে এই স্কুলটায় কিছু লেখাপড়া আর কিছু হাতের কাজ শিখে নিজের সংস্থান সে নিজে কোন রকমে ক’রে নিতে পারবে। কিন্তু এ কি বিড়ম্বনা । কাল যে রকম কড়া ক'রে প্রধান শিক্ষয়িত্রী বলেছেন—তার ইচ্ছা হচ্ছে যে সে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে, যেদিকে দু-চোখ যায় সেই দিকে চলে যায়। স্কুল বসতে ক্লাসে গিয়ে ডেস্কের উপর মাথা লুকিয়ে প্রথম ঘণ্টা দিলে কাটিয়ে। দ্বিতীয় ঘণ্টার প্রারম্ভে আপিস-ঘরে তার ডাক পড়ল। সেখানে যেতেই প্রধান শিক্ষয়িত্রী একটা পোষ্টকার্ড ও ইনসিওর-পাশেল তার হাতে দিয়ে বললেন, “এ তোমার ?” সে তাড়াতাড়ি চিঠিটা পড়ে মনে মনে অবাক হ’ল কিন্তু প্রকাশ্বে বললে, “হ্যা।” সই করে পার্শেলটা নিয়ে চলে গেল একেবারে নিজের ঘরে। গিয়েই সেটাকে খুলে দেখলে এক ছড়া সোনার হার। চিঠিটা আবার পড়লে, একবার না, বার বার। অবাক কাও ৷ তার যে এমন স্নেহময়ী দিদি একজন জগতে আছে তা ত জানা ছিল না। এমন স্থধামাখা চিঠি ও সোনার হার । পিতৃ-ও মাতৃ- কুলের ডালপালার নিকট দূর আত্মীয় খুজে কিছুই ঠাহর করতে পারলে না। যাই হোক, এটা ঠিক যে এই যে দিদি তার, সে অনেক কাল তার কোনও খবরই রাখে না। বিদেশে অনেক দিন আছে নিশ্চয়। নইলে তাকে হার পাঠায় এতদিন পরে ? তার যে কপাল পুড়েছে সে খবর দিদির কাছে যায় নি। হার গলায় ঝোলাবার কি আর দিন আছে তার ? দিদির প্রেরিত হার তার কাছে আজ অর্থহীন, কিন্তু তার যে সস্নেহ আহবান তার কাছে যাবার জন্তে সেইটেই তাকে নাড়া দিলে । আজি যখন পৃথিবীর সকলে তার প্রতি বিমুখ, এই দুদিনে দিদির আশ্রয় তাঁকে প্রলুদ্ধ করে তুললে। তীব্র সঙ্কটের সঙ্গে যদি একটা অদম্য আশা জড়িত হবার সুযোগ পায়, তবে দুয়ে মিলে দুৰ্ব্বল ও অৰ্ব্বাচীনকেও কোথা হতে প্রবল শক্তি ও স্বতীয় বুদ্ধি এনে সহায়ৰূপে প্রদান করে। কি করে এক বঞ্চিত করে বঁাচালে ՋԵաs রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল সে, সেকরার দোকানে হারছড়া বাধা রেখে টাকা ধার করলে, তার পর ষ্টেশনে এসে ঠিক গাড়ীতে চড়ে একেবারে ঠিক "দিদির বাড়ীতে গিয়ে হাজির—সে-সব বর্ণনা করতে গেলে আলাদা একটা গল্প হয়ে ওঠে। যে অঞ্জলি রায়ের উদ্দেশ্যে হারছড়া প্রেরিত হয়েছিল শিক্ষয়িত্রী তাকেই প্রথমে ডেকে পোষ্টকার্ড ও পার্শেলট দিয়েছিলেন, কিন্তু সে বলেছিল, “এ-সব আমার না।” সে মনে করেছিল, ঐটুকু বলাতে জিনিষটা প্রেরিকার কাছেই ফেরৎ যাবে। কিন্তু তার জানা ছিল না যে আর একজন অঞ্জলি রায় কয়েকদিন আগে তার নীচের ক্লাসে এসে ভত্তি হয়েছে এবং বোডিঙে আছে। শিক্ষয়িত্রী তখন এই নূতন অঞ্জলি রায়কে ডাকেন। তার পর যখন তার পলায়নবার্তা প্রচারিত হয়ে গেল, পুরাতন অঞ্জলি এসে বললে, তারই ছিল পার্শেলট—তার গ্রহণ করবার ইচ্ছা ছিল না তাই আমন করে বলেছিল। স্কুল হতে তৎক্ষণাৎ চিঠি গেল হিরণের কাছে এই মৰ্ম্মে যে, র্তার প্রেরিত পার্শেল ভুল মেয়ে সই করে নিয়ে পালিয়েছে এবং তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করলেই পুলিসে খবর দেওয়া হবে। কিন্তু হিরণ তার উত্তরে স্কুলের কর্তৃপক্ষকে জানাল যে ভুল মেয়ে পার্শেল নেয় নি—তার বোনই পার্শেল পেয়েছে এবং সে-বোন এখন তারই কাছে আছে—মুতরাং কারুর কোন উদ্বেগ বা উত্তেজনার কারণ নেই। হিরণ ভাবলে এই হ’ল ভাল, তার ভালবাসার ভাও উজাড় ক'রে দেবার একটি পাত্র ভগবান জুটিয়ে দিলেন, যে সত্যিই ভালবাসার ভিখারী। স্বামীর হৃদয়রঞ্জন করবার প্রবৃত্তি জাগে নি তার, গৃহস্থালীতে মন বসে নি, বাগান সাজানোর কাজে সে নিজেকে নিযুক্ত করে নি, আজ একাধারে এই বিধবা দুঃখিনীর উপর সব সাধ মেটাবার একটা উগ্র আগ্রহ এসে ভর করলে। এমনভাবে করলে যে সমাজের সংস্কার ভেঙে তাকে কুমারীর বেশে সজ্জিত করে তুললে। একজন আশ্রয় ও ভালবাসা পেয়ে খুলী, অপরে দিয়ে খুনী। মাসখানেক পরে একদিন সন্ধ্যার সময় রমেশের এক পুরাতন বন্ধু এসে হাজির, কি গোপন কথা কইতে। বাইরের