পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇb-S ঘরে রমেশ তার কাছে যেতেই হিরণ গিয়ে দরজায় কান পেতে রইল—কি এত গোপন কথা ! যা শুনলে তাতে হিরণের অন্তরে নূতন চাঞ্চল্যের স্বষ্টি হ’ল। রমেশের এই বন্ধু অবিনাশের সঙ্গে রমেশের শ্যালিকা অঞ্জলির বিবাহপ্রস্তাব এসেছে। অবিনাশ অঞ্জলির সম্বন্ধে একটু খোজ-খবর নিতে এসেছে। দুই বন্ধুর মধ্যে দিব্যি যখন রসালাপ জমে উঠেছে হিরণ আর স্থির থাকতে পারলে না । প্রলয়ঙ্কর খেয়াল মেয়েদের মনে গজিয়ে উঠতে বোধ হয় পলকের বেশী সময় লাগে না। চট্‌ ক’রে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে নমস্কার ক’রে সে অবিনাশকে বললে, “এই যে, আপনি কখন এলেন ?” অবিনাশ কোন কথা বলবার আগে রমেশ সোৎসাহে বলে উঠল, “অবিনাশের যে বিয়ে ঠিক হচ্ছে অঞ্জলির সঙ্গে।” “তাই নাকি ? শুনছি। তুমি একবার অঞ্জলির কাছে যাও ত ভেতরে, আমি অবিনাশ বাবুর কাছ থেকেই শুনি মুখবরের ব্যাপারটা ।” রমেশ ভিতরে চলে গেল এবং অবিনাশ অবাক হয়ে হিরণের দিকে ফ্যালফ্যাল ক'রে তাকিয়ে রইল। হিরণ হাসি চাপতে না পেরে বললে, “অঞ্জলি যে এখন আমাদের এখানেই আছে তা বুঝি উনি বলেন নি আপনাকে এতক্ষণ ? আচ্ছ, আপনি একটু বক্ষন, আমি আসছি।” বলেই হিরণও চলে গেল। ভিতরে গিয়েই রমেশকে গ্রেপ্তার ক'রে আড়ালে নিয়ে হিরণ বলতে লাগল এক বিপুল যড়যন্ত্রের কথা । তার প্রস্তাবনার মৰ্ম্ম এই যে, অবিনাশের সঙ্গে এই বিধবা অঞ্জলির বিয়ে দিতে হবে, তার প্রধান যুক্তি—অবিনাশ বিপত্নীক এবং হিরণ বিধবা। আশ্চৰ্য্য প্রকাশ করলে—রমেশ দ্বিতীয়বার ধিয়ে করেছে বলে না অঞ্জলির পিতা বিরক্ত ছিলেন, এখন আবার নিজের মেয়েকেই কি ক’রে একজন বিপত্নীকের হাতে সপে দিতে উদ্যত । মন্ত্রপড়ার মত সমস্ত বিধান রমেশকে পড়িয়ে দিয়ে হিরণ বললে, “এইবার স্বাও, অবিনাশ বাবু অনেকক্ষণ একলা বসে আছেন। অঞ্জলির ভার সম্পূর্ণ অামার উপর রইল। তুমি ও-দিকটা সামলিয়ো ।” রমেশ অবিনাশের সঙ্গে আবার কিছুক্ষণ কথা কয়বার প SN93-9 হিরণ ও তার পিছনে অঞ্জলি, ছু-জনে দুই হাতে কিছু জলযোগের আয়োজন নিয়ে এসে হাজির । "এর নাম অঞ্জলি রায়, অবিনাশ বাবু” হিরণ বললে। অবিনাশ এতটা ভাবে নি। স্বপ্ন দেখছে কিনা সন্দেহ হ’ল। 磷 磷 蠱 অবিনাশের কাছে যখন রহস্য উদঘাটন করা হ’ল তখন তার মনটা এই অঞ্জলিতে এতটা ঝুকেছে যে এ-বিবাহে আর আপত্তির কারণ রইল না। অবিনাশের সঙ্গে দ্বিতীয়-অঞ্জলির বিয়ে হয়ে যাবার কিছু দিন পরে প্রথম-অঞ্জলির এক চিঠি এল হিরণের নামে — শ্ৰীচরণকমলেষু দিদি, যখন আপনার স্নেহোপহার ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তখন জানতাম না আপনার মুল্য। আপনাকে সত্যিই চিনি নি তখন । * অাজ কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা আপনার পায়ে লুটোতে চাইছে কিন্তু লজ্জায় ত পারছি না। আমার জীবনের কত বড় দুর্ভাগ্যকে যে আপনি দূর করলেন তা আপনি যেমন বোঝেন আমিও তেমনি বুঝতে পারছি। আমায় ক্ষম। ক'রে আমার শত শত প্রণাম গ্রহণ করবেন । ইতি আপনার স্নেহের বোন অঞ্জলি হিরণ চিঠিখানাকে একবার পড়ে শেষ করেছে,–চোখের কোলের সঞ্চিত অশ্রুকে মুছে আবার পড়তে যাবে, এমন সময় রমেশ এসে পড়তেই সে ওখানাকে দুমড়ে মুড়ে ফেললে । “কার চিঠি দেখি ” রমেশ জিজ্ঞাসা করলে। “দেখতে হবে না।” সাফ জবাব । হিরণের মুঠোর ফাক দিয়ে দু-চারটি অক্ষর দেখতে পাচ্ছিল রমেশ। বললে, “কার জীবনের দুর্ভাগ্যের কথা আবার লেখা রয়েছে ?” হিরণ দৃঢ়তার সঙ্গে বললে, “মেয়েদের ব্যথা মেয়েরাই বোঝে—তোমরা কেউ-ই তা বোঝ না, তোমাদের গুনেও কাজ নেই।” সঙ্কুচিত নারী-হস্তাক্ষর পুরুষের দৃষ্টি এড়াতে হিরণের মুঠোর ঘোমটায় আর একটু মুখ ঢাকল।