পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

قل. - $ কালিম্পঙ থেকে গ্যাণ্টক * ঐনন্দলাল চট্টোপাধ্যায় এম-এ, পিএইচ-ডি এবার এপ্রিল মাসে য়ুনিভার্সিটির দীর্ঘ গ্রীষ্মের ছুটি আরম্ভ হওয়া মাত্র হাফ ছেড়ে লক্ষ্মেী থেকে পাড়ি দিলাম বাংলার পানে ; প্রকৃত উদ্দেশ্য, দিন কয়েক আত্মীয়বন্ধুদের কাছে থেকে, হিমালয় ও আসামের যে-সব প্রান্তে পূৰ্ব্বে যাওয়া

থেকে সিকিম যাওয়াও সহজ ।

পাসের হাঙ্গামা আছে। হয় নি সেগুলি এবার দেখে আসব। বহরমপুরে গিয়ে স্থির করে ফেললাম আগে কালিম্পঙ যেতে হবে, কারণ সেখান দাঞ্জিলিঙ পূৰ্ব্বেই দেখা হয়েছে, তা ছাড়া আজকাল সেখানে যেতে হ’লে আবার সেই জন্য দাৰ্জিলিঙ যাওয়ার কথা মনেও আসে নি। তখন কিন্তু জানতাম না যে, কালিম্পঙ যেতে হলেও পুলিসের পাস লাগে, জানা থাকলে লক্ষ্মেী

| i থেকেই পাস জোগাড় ক’রে নিয়ে যেতে পারতাম। বিশেষ ভাবনায় পড়া গেল । দেখলাম, পাসের জন্য অপেক্ষা করতে হ’লে কয়েক দিন বৃথা বিলম্ব হয় । ইতিমধ্যে শুনলাম বহরমপুরের পুলিস স্থপারিন্টেনডেন্ট বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় অতি ভদ্র লোক। ভাবলাম, র্তার সঙ্গে সোজাস্বজি একবার দেখা করেই আসি, দেখি তিনি কি বলেন। সুপারিন্টেনডেন্ট মহাশয়ের বাড়ী গেলাম সকালে । অল্পক্ষণ কথাবাৰ্ত্তার পর যখন চলে এলাম তখন উদ্দেগুসিদ্ধির জন্য তৃপ্তি যত না হয়েছিল, তার চেয়ে বেশী আনন্দ পেয়েছিলাম শ্রদ্ধাস্পদ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের মত একজন অমায়িক ও সহৃদয় পুলিস-অফিসারের সহিত আলাপ করে।

পাস পেয়ে পর দিন সকালেই যাত্রা করলাম । রাত্রে রাণাঘাটে দাৰ্জিলিঙ-মেল ধরে ভোরে যখন শিলিগুড়ি পৌছালাম তখন মেঘাচ্ছন্ন বর্ষণক্লাস্ত আকাশ, আর পাহাড়ে ঠাও বাতাস জানিয়েদিলে যে,সমতলভূমির তাপধিক্য হতে এবার নিষ্কৃতি পাব। প্লাটফরমেই আমার পাস দেখাতে i হ'ল। দেখলাম, পুলিস-কর্মচারীদের খুব কড়া নজর, পাস না দেখিয়ে বাঙালী ছেলেদের পরিত্রাণ লাভ অসম্ভব। যাক, অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে যখন ষ্টেশনের বহির্ভাগে এলাম তখন দেখি কালিম্পঙগামী সব ট্যাক্সিগুলিই ভৰ্ত্তি। মহা মুন্ধিল, তখন ছোট লাইনের ট্রেন ছাড়-ছাড়, ট্রেনে যাওয়াও আর সম্ভব নয় । তল্পিতল্পা নিয়ে এক রকম হতাশ হয়েই দাড়িয়ে আছি, ইতিমধ্যে এক ট্যাক্সিওয়ালা ডাকলে, “বাবুজী, ইধার আইয়ে, ফ্রান্ট সিটু খালি হ্যায়ু, ছা রূপেয় দেন।” কাছে গিয়ে দেখি, গাড়ীর ভিতর তিনটি সুবেশী নেপালী মহিলা । তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি, তিনি বেশ সপ্রতিভ ভাবে হিন্দীতে আমাকে বললেন, “আমরা গোটা ট্যাক্সিই রিজার্ত করেছিলাম, তবে আমাদের একজন সঙ্গীর যাওয়া হ’ল না, আপনি আসতে পারেন এই গাড়ীতে, ট্যাক্সিওয়ালা ছ’টাকা চাইছে, আপনি পাচ টাকাই দেবেন, বুঝলেন?” “না” বলবার কোন কারণ ছিল না, তাই চটু ক’রে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলাম । গাড়ী চলল দ্রুতবেগে পিচ-ঢালা রাস্তার উপর দিয়ে অনেক দূর । দু-পাশে নিবিড় শালবন, সমস্ত সরকারী সম্পত্তি। মাঝে মাঝে কাঠবোঝাই গরুর গাড়ী মন্থর গতিতে চলেছে । মহিলারা কলম্বরে বিশ্রম্ভালাপ করছিলেন, তাদের উচ্চ হাসি নির্জন পথের নীরবতাকে যেন নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করছিল ৷ অজানা অচেনা মনোহর পাৰ্ব্বত্য পথ দিয়ে চলেছি, সার্থী অনাত্মীয়া তিনটি পাহাড়ী মেয়ে—সুন্দরী, রসিক, আলাপনীয়া । মনে হচ্ছিল, তিনটি পৰ্ব্বত তনয় আমার মত নিঃসঙ্গ পান্থকে যেন হিমাচলের বুকে সাদরে অভ্যর্থনা করবার জন্যই আজ আবিভূতা। কয়েক মাইল সমতল পথ অতিক্রম করে আমরা চড়াইয়ের মুখে যখন এসে পৌছালাম তখন অদূরে খরস্রোতা তিস্ত নদীর উপত্যক দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। আমাদের ডান দিকে একে-বেঁকে ফেনোৰ্ম্মিমালাসজ্জিভা তিস্তা প্রচণ্ডবেগে ছুটেছে, অজস্র উপলরাজি তার গতি রোধ করে