পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চেনা। তার পর ড্রাইভার অামাকে “হিল-ভিউ” হোটেলে এনে নামিয়ে দিলে। এইখানেই থাকব বলে আগেই স্বত্বাধিকারী মিষ্টার ব্যানার্জিকে (অর্থাৎ বাড়ুজ্যে-মশায়কে ) লিখেছিলাম ; হোটেলটির অবস্থান ভারি সুন্দর, প্রশস্ত হাত, চারদিকে অজস্র ফুল ও ফলের গাছ, নিয়ে স্ববিশাল উপত্যক, আর দূরে উচ্চ গিরিচূড়া। হাতার ভিতর এসেই দেখলুম একটি তরুণবয়স্ক ভালোক বাগানের গাছপালা পরিদর্শনে ব্যস্ত। আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন, আলাপে বুঝলাম ইনিই হোটেলের মালিক। দুঃখের সহিত তিনি জানালেন যে কোন ভাল কামরা এখন খালি নেই, তা নইলে তিনি কখনও আমাকে ফেরাতে চাইতেন না। ফিরে আসছি, তখন হঠাৎ কি ভেবে তিনি বললেন, “দেখুন, আপনাকে এই দুপুরে ফিরে যেতে দেব না, আমুন, দোতলায়, একটি ঘর আমার বাবার জন্য রিজার্ত করা আছে, তিনি কোন দিন আসবেন ঠিক নেই, আপনি আপাততঃ সেই ঘরটি নিন।” আমি যেন বৰ্ত্তে গেলাম। বাড়ুজ্যোমশায় অতি চমৎকার আমুদে লোক, ইনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্ৰীজয়গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের পুত্র। উচ্চশিক্ষা পেয়ে দিন-কতক চাকরী করেছিলেন, কিন্তু চাকরীর হীনতা ইনি বরদাস্ত করতে পারেন নি বলেই কালিম্পঙে আজ কয়েক বৎসর যাবৎ বাস করছেন সপরিবারে। অতিথিদের প্রতি তার ব্যবহার সরল ও অকপট । র্তার হোটেলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, অন্য হোটেলের মত এখানে খাওয়া-দাওয়ার শ্রেণী-বিভাগ নেই। হোটেলের স্বশৃঙ্খল পরিচালনে যে গাহৰ্ষ্য ভাড়ম্বরহীনতা ও সামঞ্জস্ত দেখে তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম, তা অনেকাংশে বন্দ্যোপাধ্যায়-জায়ার স্বগৃহিণীপণার জন্যই সম্ভব হয়েছে, তা এখানে না বললে সত্য গোপন করা হবে। কালিম্পঙ সম্বন্ধে কয়েকটি কথা এইবার বলব। এটি ছোট অথচ স্বন্দর জায়গা ; কিন্তু এর জীবনশুম্ভ, নিস্তেজ ও নীরস ভাবটা প্রথম প্রথম বড়ই চোখে ঠেকে। কোথাও কোনরূপ কোলাহল বা জনতা দেখা যায়ন, বাজারটি পর্যন্ত শান্ত । সপ্তাহে দু-দিন মাত্র এক প্রশস্ত ময়দানে হাট বসে, তখন সকলে প্রয়োজনীয় ফ্রব্যসামগ্ৰী ফলমূল জানাজ ইত্যাদি কিনে রাখে। হাটের দিন কিন্তু নিকটবর্তী আড্ডাসমূহ হতে বহু পাহাড়ী মেয়ে-পুরুষের সমাগম হয়। তখনকার দৃপ্ত বিচিত্র ও মনে রাখবার মত। শহরের মিউনিসিপালিটি নেই ব’লেই বোধ হয় এখনও পথঘাটে আলোর কোন ব্যবস্থা নেই, সন্ধ্যার পর টর্চ না নিয়ে বেরলে ভীষণ অন্ধবিধা ভোগ করতে হয়, কারণ বাজারটুকু ছাড়া আর সব জায়গাই অন্ধকারময়। আমোদ-প্রমোদের কোন বন্দোবস্ত নেই—সিনেম-থিয়েটারও নেই। বাঙালীদের জন্য একটি ছোট পাঠাগার আছে শুনেছিলাম। বৈদ্যুতিক আলোক সরবরাহের এখনও ব্যবস্থা হয় নি, তবে বোধ হয় শীঘ্রই হবে। জলের কল আছে ও এখানকার জল বেশ ভালই। সৰ্ব্বোচ্চ চুড়ায় অবস্থিত জলাশয় হতে সৰ্ব্বত্র নলদ্বারা জল দেওয়া হয়, জলও পাওয়া যায় প্রচুর, জলের ট্যাক্সও শুনলাম বেশী নয়। এখানকার বাজারে কয়েকটি বাঙালীর দোকান আছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনটিরও বাজারে প্রাধান্ত নেই। এখানকার বিশেষত্ব কয়েকটি খুব ভাল লাগল। বাজার ছাড়া আর কোন জায়গাই ঘিঞ্জি বা নোংরা নয়। সমস্ত ছোটবড় বাংলোর চার পাশে প্রশস্ত বাগান আছে, তা ছাড়া রাস্তাগুলিও বেশ ফাক, বড় ও পরিষ্কার । স্বাস্থ্যান্বেষীর পক্ষে এটি আদর্শ স্থান, এর তুলনায় অন্তত দাৰ্জিলিঙ বহুগুণ ঘিঞ্জি ও অপরিষ্কার। এখান থেকে হিমালয়ের তুষারপৃঙ্গগুলি দাৰ্জিলিঙের চেয়ে ভালরূপে ও দিনের বেলায় অনেক ক্ষণ দেখা যায়, কারণ এখানে কুয়াশার আতিশয্য নেই। দাজ্জিলিঙ শিলণ্ড প্রভৃতির চেয়ে এখানে অল্প খরচায় থাকা যায়। শিলঙের মত প্রত্যেক রাস্তায় এখানে মোটরে যাওয়াও চলে, এ-সুবিধা দাঞ্জিলিং, মহুরী, সিমলা প্রভৃতি স্থানে নেই। দর্শনীয় স্থানের ভিতর এখানকার চৌরাস্ত উল্লেখযোগ্য। চারটি পিচ-ঢালা রাস্তার সংযোগস্থল এটি, একে শহরের কেন্দ্রস্থান বলা যায়। সকালে সন্ধ্যায় এখানে জনসমাগম হয়, তবে বলে রাখা উচিত যে, অন্তান্ত পাৰ্ব্বত্য শহরের জনপ্রিয় ‘ম্যালের সহিত এর তুলনা করা চলে না। কালিম্পর্ডের চৌরাস্ত নিতান্ত সাদাসিধা হিন্দুস্থানী ধরণের, এখানে বিলাতী দোকান বা হোটেলও নেই—সাহেবম্ববাদের ভিড়ও তাই হয় না। বাঙালী মহিলারাও এখানে সন্ধ্যায় বায়ুসেবন করেন না। তবে চৌরাস্তার উপর মহারাণী ভিক্টোরিয়ার