পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খুবই ভদ্ৰ—দোয়াত কলম কাগজ প্রভৃতি সবই আমাদের দিলেন ও ডাকঘরের ভিতর আমাদের সাদরে বসালেন। অল্পদিন হ’ল খবরের কাগজে পড়েছিলাম, এভারেষ্ট-যাত্রীদের অনেকগুলি চিঠি চুরি যাওয়ায় এই পোষ্টমাষ্টারটিকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। এখানে বলা দরকার যে, গ্যাণ্টক পোষ্টঅফিস অবধি মোটরে ডাক যায়, সেখান থেকে তিব্বতের চিঠিপত্র পায়ে-হাটা পথে পাঠানো হয়, কাজেই কেমন ক’রে যে এভারেষ্ট-যাত্রীদের চিঠি অন্তহিত হ’ল তা দুৰ্ব্বোধ্য নয়। আমরা অবশু দূর হতে ডাকঘরের এক কোণে এভারেষ্টযাত্রীদের স্তুপীকৃত চিঠি দেখেছিলাম, সবগুলিতেই বিমানডাকের ছাপ ছিল । ডাকঘর থেকে আমরা রাজপ্রাসাদ অভিমুখে গেলাম। পথে টাউন-হল ও একটি স্বন্দর সরকারী পার্ক দেখা গেল। রাজপ্রাসাদ দেখে কিন্তু নিরাশ হলাম—মোটেই জীকালো নয়, সাধারণ বড়লোকের বাড়ী যেমন হয়ে থাকে, তার চেয়ে বেশী কিছু নয়। অবশু ভিতরে আমরা যেতে পারি নি, কারণ মহারাজা তখন প্রাসাদে ছিলেন। প্রাসাদের খুব কাছে গ্যান্টকের প্রসিদ্ধ কাষ্ঠনির্মিত গুম্ফা দেখলাম। এটি বিশাল ত্রিতল অট্টালিকা, তিব্বতীয় আকারে প্রস্তুত। প্রধান লামার সহিত দেখা হ’ল না, তিনি তখন তিব্বতে ; অন্যান্য লামারা আনন্দের সহিত আমাদের সমস্ত গুম্ফাটি দেখালেন, এমন কি, আমরা প্রধান লামার শয়ন-কক্ষ অবধি বাদ দিই নি। শয়নকক্ষে কিন্তু সস্তা বিলাতী পর্দা ও বিলাতী ধরণের আসবাব চতুর্দিকের তিব্বতীয় আবেষ্টনের ভিতর ভারি খাপছাড়া ও দৃষ্টিকটু লাগল। সভামণ্ডপের সমস্ত দেয়ালে বুদ্ধের জীবনী চিত্রিত হয়েছে, সবই তিব্বতীয় ও কতকটা জাপানী রীতিতে অ্যাকা। এর অপরূপ বর্ণবৈচিত্র্য ও অঙ্কনকৌশল দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। র্যার দাৰ্জিলিঙ গেছেন র্তারা ঘুমের প্রকাও গুম্ফা দেখেছেন কিন্তু গ্যাণ্টকের গুম্ফ তার চাইতে ঢের বড় ও সুন্দর । এখানকার স্কুলে জন-কয়েক বাঙালী শিক্ষক আছেন গুনে আমরা আগ্রহের সহিত স্কুল দেখতে গেলাম। স্কুলটি বেশ বড় ও অনেক ছেলে পড়ে মনে হ’ল। হেডমাষ্টার ইংরেজ, অন্যান্য শিক্ষক এদেশীয়, তার মধ্যে মাত্র তিন জন বাঙালী । তাদের মধ্যে দু-জনের সহিত দেখাশুনা হয়েছিল, র্তারা বললেন, বাঙালী শিক্ষক আর নেওয়া হয় না। তারা অনেক পূৰ্ব্বে নিযুক্ত হয়েছিলেন বলেই টিকে আছেন, র্তার কৰ্ম্ম থেকে অবসর গ্রহণ করলে আর এখানে বাঙালীর পক্ষে চাকরি পাওয়া একরূপ অসম্ভব। স্কুল দেখে আমরা বাজারে এলাম। বাজার খুব বড় নয়, তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সৰ্ব্বত্র যা দেখেছি এখানেও সেই মাড়োয়ারী-প্রাধান্য লক্ষ্য করলাম। বাজারের উপরেই একটি মেয়েদের স্কুল দেখা গেল। তখন একটি ইংরেজ-মহিল মেয়েদের নাচ শেখাচ্ছিলেন। অনেকগুলি বড় বড় মেয়ে তালে তালে ঘুরে ঘুরে এক সঙ্গে পা ফেলছে কত ভঙ্গীতে, মনে হ’ল সেটা যুরোপীয় গ্রাম্য মৃত্য। রেসিডেণ্ট-সাহেবের বাসস্থানও দেখা গেল। গ্যান্টকের সৰ্ব্বোচ্চ শিখরে তার জন্য এক প্রকাও বাগানবাড়ী নিৰ্ম্মিত হয়েছে ; এটি রাজপ্রাসাদের চাইতেও স্বত্র । বৈকালে আমরা কালিম্পঙ-অভিমুখে ফিরলাম। সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঝিল্লীমুখরিত পাহাড় ও বনের মানায়মান শুামলিমা নীরবে দেখতে দেখতে যখন রংপু পৌছালাম, তখন মিঃ দেশাই বললেন, তাকে একটি সেলাইর কল এইখান থেকে তুলে নিয়ে যেতে হবে। মোটর একটি কুটীরের স্বমুখে দাড়াল, মিঃ দেশাইয়ের নেপালী সহকারী ডাক দিতেই একটি মানমুখী পাহাড়ী তরুণী বেরিয়ে এল। দু-জনে নেপালী ভাষায় কি কথা হ’ল বুঝলাম না। মিঃ