পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা বানান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধ্বনিসঙ্গত বানান এক আছে সংস্কৃত ভাষায় এবং প্রাচীন প্রাকৃত ভাষায় । আর কোন ভাষায় আছে কিম্বা ছিল কি না জানি নে। ইংরেজি ভাষায় যে নেই অনেক দুঃখে তার আমরা পরিচয় পেয়েছি। আজও তার এলেকায় ক্ষণে ক্ষণে কলম ইচট খেয়ে থম্কে যায়। বাংলা ভাষা শব্দ সংগ্রহ করে সংস্কৃত ভাণ্ডার থেকে, কিন্তু ধ্বনিটা তার স্বকীয় । ধ্বনিবিকারেই অপভ্রংশের উৎপত্তি। বানানের জোরেই বাংলা আপন অপভ্রংশত্ব চাপা দিতে চায় । এই কারণে বাংলা ভাষার অধিকাংশ বানানই নিজের ধ্বনিবিদ্রোহী ভুল বানান। অভিজাত্যের ভান ক'রে বানান আপন স্বধৰ্ম্ম লঙ্ঘনের চেষ্টা করাতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সেটা পরম দুখকর হয়েছে । যে রাস্তা রেল-পাত রাস্তা, তার উপর দিয়ে যাতায়াত করার সময় যদি বুক ফুলিয়ে জেদ করে বলি আমার গোরুর গাড়িটা রেলগাড়িই, তা হলে পথযাত্রাট অচল না হতে পারে, কিন্তু স্থবিধাজনক হয় না । শিশুদের পড়ানোয় যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন বাংলা পাঠশিক্ষার প্রবেশ-পথ কি রকম দুৰ্গম । এক ধানের রাস্তায় আর-এক ধানকে চালাবার ছশ্চেষ্টাবশত সেটা ঘটেছে। বাঙালী শিশুপালের দুঃখ নিবৃত্তি চিন্তায় অনেকবার কোনো ক জন বানান-সংস্কারক কেমাল পাশার অভু্যদয় কামনা রেছি। দুরে যাবারই বা দরকার কি, সেকালের প্রাকৃত tষার কাত্যায়নকে পেলেও চলে যেত । একদা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতেরা প্রাকৃতজনের বাংলা ভাষাকে বজ্ঞার চোখেই দেখেছিলেন। সেই অবজ্ঞার অপমান iখ আজিও দেশের লোকের মনের মধ্যে রয়ে গেছে। দর সাহিত্যভাষার বানানে তার পরিচয় পাই । iংলা ভাষাকে ষে হরিজন পংক্তিতে বসানো চলে না তার iাণ কেবল ভাষাতাত্ত্বিক কুলজির থেকেই আহরণ করা থষ্ট হয় নি। বর্ণপ্রলেপের যোগে সবৰ্ণৰ প্রমাণ করে চেষ্টা ক্রমাগতই চলছে। ইংরেজ ও বাঙালী মূলত একই আর্যবংশোদ্ভব বলে যারা যথেষ্ট সাম্বন পান নি তার হার্টকোট পরে যথাসম্ভব চাক্ষুষ বৈষম্য ঘোচাবার চেষ্ট৷ করেছেন এমন উদাহরণ আমাদের দেশে জুলভ নয়। বাংলা সাহিত্যের বানানে সেই চাক্ষুষ ভেদ ঘোচাবার চেষ্টা যে প্রবল তার হাস্যকর দৃষ্টান্ত দেখা যায় সম্প্রতি কানপুর শব্দে মূর্ধণ্য ণয়ের আরোপ থেকে। ভয় হচ্চে কথন কানাই-এর মাথায় মূর্ধণ্য ণ সঙিনের খোচ মারে। বাংলা ভাষা উচ্চারণকালে সংস্কৃতের সঙ্গে তার ধ্বনির ভেদ ঘোচানো অসম্ভব কিন্তু লেখবার সময় অক্ষরের মধ্যে চোখের ভেদ ঘোচানো সহজ । অর্থাৎ লিখব এক পড়ব আর, বাল্যকাল থেকে দণ্ডপ্রয়োগের জোরে এই কৃচ্ছসাধন সাহিত্যিক সমাজপতিরা অনায়াসেই চালাতে পেরেছেন। সেকালে পণ্ডিতেরা সংস্কৃত জানতেন এই সংবাদটা ঘোষণা করবার জন্যে র্তাদের চিঠিপত্র প্রভৃতিতে বাংলা শব্দে বানানের বিপর্যয় ঘটানে আবশুক বোধ করেন নি। কেবল যত্ব ণত্ব নয় হ্রস্ব ও দীর্ঘ ইকার ব্যবহার সম্বন্ধেও তারা মাতৃভাষার কৌলীন্য লক্ষণ সাবধানে বজায় রাখতেন না । আমরা বাংলা ভাষায়ু তৎসম শব্দের দাবী ক’রে থাকি কৃত্রিম দলিলের জোরে । বাংলায় সংস্কৃত শব্দের উচ্চারণ-বিকার, ঘটে নি এমন দৃষ্টান্ত অত্যন্ত দুলভ। "জল" বা “ফল”, “সৌন্দৰ্য্য” বা “অরুগ্ন” ধে তৎসম শব্দ সেটা কেবল অক্ষর সাজানো থেকেই চোখে ঠেকে, ওটা কিন্তু বাঙালীর হাটকোটপরা সাহেবিরই সমতুল্য। উচ্চারণের বৈষম্য সত্ত্বেও শব্দের পুরাতত্ত্বঘটিত প্রমাণ রক্ষা করা বানানের একটি প্রধান উদ্বেগু এমন কথা অনেকে বলেন। আধুনিক ক্ষত্রিবংশীয়রা ক্ষাজধম ত্যাগ করেছে তৰু দেহাবরণে ক্ষত্রিইতিহাস রক্ষার জন্তে বম পরে বেড়ানে তাদের কতব্য এ উপদেশ নিশ্চয়ই পালনীয় নয়। দেহাবরণে বর্তমান ইতিহাসকে উপেক্ষ ক'রে প্রাচীন ইতিহাসকেই বহন করতে চেষ্টা করার দ্বারা অনুপযোগিতাকে