পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যা হইবার দেরী নাই। রাস্তায় পুরানো বইয়ের দোকানে বই দেখিয়া বেড়াইতেছি, এমন সময়ে আমার এক বন্ধু কিশোরী সেন আসিয়া বলিল, এই যে এখানে কি ? চল চল, জ্যোতিষীকে হাত দেখিয়ে আসি। তারানাথ জ্যোতিষীর নাম শোন নি ? মস্ত বড় গুণী। হাত দেখানোর ঝোক চিরকাল আছে। সত্যিকার ভাল জ্যোতিষী কখনও দেখি নাই। জিজ্ঞাসা করিলাম— বড় জ্যোতিষী মানে কি ? যা বলে তা সত্যি হয় ? অামার অতীত ও বর্তমান বলতে পারে ? ভবিষ্যতের কথা বললে বিশ্বাস হয় না । বন্ধু বলিল—চলই না। পকেটে টাকা আছে ? দু-টাকা নেবে, তোমার হাত দেখিও । দেখ না বলতে পারে কি না। কাছেই একটা গলির মধ্যে একতলা বাড়ীর গায়ে টিনের সাইনবোর্ডে লেখা আছে—তারানাথ জ্যোতিবিনোদ– এই স্থানে হাত দেখা ও কোষ্ঠবিচার করা হয়। গ্রহশাস্তির কবচ তন্ত্রোক্ত মতে প্রস্তুত করি । আন্ধন ও দেখিয়া বিচার করুন । বড় বড় রাজা-মহারাজার প্রশংসাপত্র আছে। দর্শনী নামমাত্র । বন্ধু বলিল—এই বাড়ী। হাসিয়া বলিলাম—লোকটা বোগাস। মহারাজা যার ভক্ত, তার এই বাড়ী ? বাহিরের দরজায় কড়া নাড়িতেই ভিতর হইতে একটি ছেলে বলিয়া উঠিল—কে ? কিশোরী জিজ্ঞাসা করিল—জ্যোতিৰী-মশায় বাড়ী चोरश्न ? ভিতর হইতে খানিক ক্ষণ কোন উত্তর শোনা গেল না। তার পর দরজা খুলিয়া গেল। একটা ছোট ছেলে উকি মারিয়া আমাদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে খানিক ক্ষণ চাহিয়া দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল—কোথা থেকে আসছেন ? এত রাজী আমাদের আসিবার উদ্দেশু শুনিয়া সে আবার বাড়ীর ভিতর চলিয়া গেল। কিছুক্ষণ কাহারও কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না । আমি বলিলাম—ব্যাপার যা দেখছি,তোমার জ্যোতিষী পাওনাদারের ভয়ে দিনরাত দরজা বন্ধ করে রাখে । ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আমরা পাওনাদার কি না দেখতে । এবার ডেকে নিয়ে যাবে। আমার কথা ঠিক হইল। একটু পরেই ছেলেটি দরজা খুলিয়া বলিল, আক্ষণ ভেতরে । ছোট একটা ঘরে তক্তপোষের উপর আমরা বসিলাম। একটু পরে ভিতরের দরজা ঠেলিয়া একজন বৃদ্ধ প্রবেশ করিল। কিশোরী উঠিয়া দাড়াইয়া হাত জোড় করিয়া প্রণাম করিয়া বলিল—পণ্ডিতমশায় আস্বন। বৃদ্ধের বয়স ষাট-বাষটির বেশী হইবে না। রং টকটকে গৌরবর্ণ, এ-বয়সেও গায়ের রঙের জলুস আছে। মাথার চুল প্রায় সব উঠিয়া গিয়াছে। মুখের ভাবে ধূৰ্ত্ততা ও বুদ্ধিমত্ত মেশানে, নীচের চোয়ালের গড়ন দৃঢ়তাব্যঞ্জক। চোখ দুটি বড় বড় ও উজ্জল। জ্যোতিষীর মুখ দেখিয়া আমার লর্ড রেডিঙের চেহারা মনে পড়িল—উভয় মুখাবয়বের আশ্চৰ্য্য সোসাদৃশু আছে। কেবল লর্ড রেডিঙের মুখে আত্মপ্রত্যয়ের ভাব আরও অনেক বেশী। আর ইহার চোখের কোণের কুঞ্চিত রেখাবলীর মধ্যে একটু ভরসা-হারানোর ভাব পরিস্ফুট। অর্থাৎ যতটা ভরসা লইয়া জীবনে নামিয়াছিলেন, এমন তাহার যেন অনেকখানিই হারাইয়া গিয়াছে, এই ধরণের একটা ভাব । প্রথমে আমিই হাত দেখাইলাম । বৃদ্ধ নিবিষ্ট মনে খানিকটা দেখিয়া আমার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল—আপনার জন্মদিন পনরই শ্রাবণ, তের-শ পাচ সাল। ঠিক ? আপনার বিবাহ হয়েছে তের-শ সাতাশ সাল, ঐ পনরই শ্রাবণ। ঠিক ? কিন্তু জন্মমাসে বিয়ে