পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ন্সে স্বT প্রসাদের চাকরি লইয়াছিল। জেরার উত্তরে বেচারাম সেন বলিয়াছে, চাকরি লইয়া সে গোবিন্দপ্রসাদ রায়কে মোকদমা চালাইবার সহায়তা করিবার প্রস্তাব করে নাই, এবং এখনও তাহাকে কেবল মোকদ্দমা চালাইবার জন্য চাকরিতে রাখা হয় নাই। গোবিন্দপ্রসাদ রায় তাহাকে সংবাদ বহন, জিনিষপত্র খরিদ, খাজানা আদায় প্রভৃতি নানা প্রকার সাধারণ কার্ধ্যে নিয়োগ করে। সে কলিকাতায় বাদী গোবিন্দপ্রসাদের বাসায় থাকে এবং তাহার সঙ্গে বৰ্দ্ধমানে গিয়াছে। এই মোকদ্দমার কাগজপত্র এবং প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বেচারাম সেন বদ্ধমানে গিয়াছিল, এবং বাদীর সহিত সে পুনঃপুনঃ সলিসিটরের অফিসে যায়। সে বাদীর সহিত কখনও কুমারসিংহ চৌধুরীর বাড়ী যায় নাই, এবং কুমারসিংহ চৌধুরীর নিকট হইতে বাদীর দাবীর সমর্থনের জন্য কোন কাগজপত্রও সে পায় নাই। কুমারসিংহ চৌধুরী তাহার স্বজাতীয় বলিয়৷ সাক্ষী ( বেচারাম সেন) তাহার সহিত দেখা সাক্ষাৎ করে, কিন্তু কোন বিশেষ কাজে তাহার নিকট যায় না। সে শুনিয়াছে কুমারসিংহ চৌধুরী দুষ্ট লোক, এবং স্কপ্রিম কোর্টের মোকদ্দমায় হস্তক্ষেপ করার জন্ত শাস্তি ভোগ করিয়াছে। বাদীর এবং কৃষ্ণমোহন ধারার সঙ্গে সে কখনও টাকা দিয়া সাক্ষী প্রমাণ জোগাড় করিতে যায় নাই। বেচারাম সেনের জেরার প্রশ্ন ও উত্তর হইতে গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের আনীত মোকদ্দমা সম্বন্ধে কতকগুলি সংবাদ পাওয়া যায়। সম্ভবতঃ এই মোকদ্দমার প্রধান মন্ত্রণাদাতা ছিল কুমারসিংহ চৌধুরী নামক একজন দাগী মোকদ্দমার দালাল এবং মোকদ্দমার প্রধান তদ্ধিরকারক ছিল কৃষ্ণমোহন ধারা। গোবিন্দপ্রসাদ কৃষ্ণমোহন ধারাকে সাক্ষী মানিয়াছিলেন। কৃষ্ণমোহন যে সাক্ষী দিতে হাজির হইয়া হলপ করিয়াছিল এই কথা পূর্বেই উক্ত হইয়াছে। জেরার প্রশ্নে দেখা যায়, কৃষ্ণমোহন ধারা জাদে জগমোহন রায়ের, এবং পরে গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের, সরকারের এবং খিদমদগারের কাজ করিত। মূল জবানবন্দীতে বানীর চতুর্থ প্রশ্নের উত্তরে বেচারাম সেন বলিয়াছে, “সে জানে, বাটােয়ারার পর রামকান্ত রায় প্তাহার তিন পুত্র হইতে পৃথক এবং বিভক্ত ছিলেন এবং স্বত্যু iপৰ্যন্ত বরাবরই পৃথক এবং বিভক্ত ছিলেন। ...সাক্ষী \తీ(S বলে বাটোয়ারার বৎসর অর্থাৎ ১২০৩ সন হইতে ১২২৩ সন পৰ্য্যস্ত প্রতিবাদী রামমোহন রায় এবং জগমোহন রায়, এবং জগমোহন রায়ের মৃত্যুর পর প্রতিবাদী এবং বাদী গোবিন্দ প্রসাদ রায় আহার সম্বন্ধে অভিন্ন ছিলেন, কিন্তু তাহাদের সম্পত্তি বরাবরই পৃথক ছিল। বর্তমানে সাক্ষী (বেচারাম সেন) গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের কার্ষ্যে নিযুক্ত থাকায় তাহার খাতাপত্র দেখিয়া এই সকল সংবাদ জানিতে পারিয়াছে।” বেচারাম সেনের এই উক্তিতে বাণী গোবিন্দপ্রসাদের দাবীর মূল উৎপাটিত হইয়াছে। আজ্জিতে বাদী পিতৃস্বত্ত্বে উত্তরাধিকারীস্বত্রে যে সকল তালুকের অৰ্দ্ধাংশ দাবী করিয়াছেন, বেচারাম সেন মূল জবানবন্দীতে বলিয়াছে, সে যতদূর জানে, সেই সকল তালুক রামমোহন রায়ের নিজের টাকায় খরিদ করা হইয়াছিল এবং তাহার নিজেরই দখলে আছে। জগমোহন রায়ের সম্পত্তি যে বরাবরই পৃথক, তিনি যে পৃথক সম্পত্তি খরিদ করিয়াছেন, পৃথক কারবার করিয়াছেন, তাহার লেন-দেন যে বরাবর পৃথক ছিল বেচারাম সেন এই সকল কথাও তাহার জবানবন্দীতে স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছে। এখানে দেখা যাইবে, বেচারাম সেনের জবানবন্দী বাদী গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের আজ্জির বিরোধী এবং প্রতিবাদী রামমোহন রায়ের অনুকূল হইয়াছিল। কেহ কেহ বলিতে পারেন, রামমোহন রায় অথবা তাহার পরম হিতৈষী রাজীবলোচন রায় বেচারাম সেনকে হাত করিয়াছিল বলিয়া সে এইরূপ বিপরীত কথা বলিয়াছিল। এইরূপ অনুমান কৰা অসঙ্গত। বাদী গোবিন্দপ্রসাদের আজির মোসাবিদায় খুব কৌশলের পরিচয় পাওয়া যায়। কুমারসিংহ চৌধুরীর মোকদম সাজাইবার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। সম্ভবতঃ তাহারই উপদেশ মত আজি লিখিত হইয়াছিল। কিন্তু বাণীপক্ষ আজ্জিয় অনুকূলে একখানি কবালা বা পাট-কবুলিয়ং বা খত-খাতা বা অন্ত কোন প্রকার এক টুকরা কাগজও দাখিল করিতে সমর্থ হইয়াছিল না। এইরূপ কাগজপত্রের অভাবে বেচারাম সেনের পক্ষে বান্ধীর দাবী সমর্থন করা সাধ্য ছিল না। কৃষ্ণমোহন ধারার পক্ষেও বাদীর দাবী সমর্থন করা সম্ভব হইবে না বলিয়াই বোধ হয় তাহার জবানবন্দী করান হইয়াছিল না। বেচারাম সেনের জবানবন্দীর পর একবৎসর কাল বাদী পক্ষ অন্ত কোন সাক্ষী তলব দেয়