পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রস্থিতা ঐ প্রভাতমোহন বন্দ্যোপাধ্যার শৈশবের লীলানন্দে জীবনসিন্ধুর বালুতটে যাহারে লভিয়াছিন্থ একদিন একান্ত নিকটে,— স্বল্পসহচরী মোর,—আজিকার কৰ্ম্ম-কলরোলে আমারে ভুলায়ে রেখে সে কখন কোথা গেল চলে পারি নি জানিতে ; মোর আজন্মের জাত্মার আত্মীয়া অামার নর্শের সঙ্গী৮—আমার মর্শের চিরপ্রিয়া, অামার সুখের সার্থী—আমার ব্যথার বার্থী মিতা,— ছেড়ে গেছে অকরুণা সখী মোর আমার কবিতা । পারে যারা যাবে বলি খেয়াঘাটে হয়েছিল জড় তারা মোরে দিল ডাক। আপনার মনে হ’ল বড়, বিজ্ঞ বলি হ’ল মনে। বাশি ফেলি দ্রুত এচু ছুটে । অসংশয় দৃঢ়পদে দেখিলাম তরণীতে উঠে সম্মুখে জলিছে জল তরল অনলে তরঙ্গিয়া ! সাথে ছিল কি না ছিল সাখী মোর দেখি নি ফিরিয়া। যাত্রা ক্রমে হ’ল মুক্ল ; যাত্রীদল পুছে পরম্পরে এ উহার পরিচয় । কেহ বা কহিল গৰ্ব্বভরে ওপারের রাজপুরে চলেছে সে নৃপতির ডাকে। কারো বাণিজ্যের কড়ি খোয়া গেছে ছুদিনে বিপাকে উদ্ধার করিবে তারে ওপারের পণ্যবৗখিকায় । কারে হাতে খর খড়গ—কারো মুণ্ড মণ্ডিত শিখায়,— কারো বা খনিজ করে, কারো শত্র,—কারো শাস্ত্ররাজি ; সবাই চলেছে কাজে। অপ্রস্তত অকাজের কাজী,— অকস্মাৎ হ'ল মনে,—আমি কেন ইহাদের মাঝে ? আমি কোথা কি করিব ? পরিচয় জিজ্ঞাসিলে লাজে পিছে ফিরে চাহিলাম ; অশ্রভারে পূর্ণ হ’ল জাখি সে নাই,-সে আসে নাই। “মিথ্যাবাদী—দিতে চাস ফাকি” পাটনী গৰ্জিয় উঠে, “এখনি পারের কড়ি দেখা " দেখালেম শূন্ত হস্ত—কহিলাম, “আসিয়াছি এক, তোমরা ডাকিয়াছিলে,—আসিয়াছি, করি নি সংশয় ; পিছনে এসেছি ফেলে মোর অর্থ, মোর পরিচয় ।” কেহ বা ধিক্কার দিল,—কেহ বা পুছিল ব্যঙ্গ হাসি, “কি তুমি শিখেছ কাজ ?” “আমি কবি।” “কোথা তব বাঁশি ? কণ্ঠে তব গান কই ?” কহিলাম তিতি আশ্রনীরে, “বাশি আসিয়াছি ফেলে যাত্রাপথে দূর সিন্ধুতীরে ; ছড়ায়ে এসেছি গান গিরিমল্পিকার বনে বনে তালতমালের কুঞ্জে ; সহসা আসিতে অঙ্কমনে সব আসিয়াছি ভুলে,—উপলবিছানো উপকূলে আজন্ম-বান্ধবী মোর কবিতারে আসিয়াছি ভুলে ।” শত কণ্ঠে অট্টহাসি,—শত চক্ষে জাগিল সন্দেহ, হেন অসম্ভব কথা বুঝি কছু কহে নাই কেহ। তার পর গেছে চলি, দীর্ঘদিন দীর্ঘরাত্রি কত, নিত্য নব অপমান সহিয়া চলেছি ভাগ্যহত স্বদূর দিগন্তে চাহি সীমাহীন মহাসিন্ধুজলে আন্দোলিত তরীবক্ষে । অন্ধকার দিগঙ্গনতলে আজি ঝঞ্চ জাগিয়াছে তিমির-নিবিড় পুঞ্জমেঘে ; উন্মত্ত প্রলয়বায়ুগর্জিয়া ছুটেছে অন্ধবেগে,— নাচিছে উত্তাল উৰ্ম্মি,—তারি মাঝে ডুবে তরীখানি। সবাই লেগেছে কাজে ; কি করিব আমি নাছি জানি। দেহে মোর শক্তি নাই,—এ দুদিনে হব কর্ণধার ; কণ্ঠে মোর মন্ত্র নাই—কত দূরে কোথা অাছে পার তাহার সন্ধান দিব, শুনাইৰ আশার রাগিণী । তরঙ্গে তরঙ্গে আজি হুঙ্কারিছে হিংসার নাগিনী, হাতে মোর বঁাশি নাই! সাথে মোর সান্ধী নাই মিতা ; অসময়ে ছেড়ে গেছে অভিমানী অামার কবিতা ।