পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ঙ্গোৰ স্কুল-বাড়ীর সম্মুখে প্রকাও সবুজ ঘাসের ময়দান, পাশ দিয়া রাঞ্জ স্থরকির পথে সারি সারি কুমকোজবার গাছ, দুই-একটা টগর গন্ধরাজও আছে। দেখিলে নয়ানজোড়ের দিগম্ভবিষ্কৃত সবুজ প্রান্তর ও রাঙা ধুলার পথ মনে পড়িয়া যায়। কিন্তু চারিধারে হাস্তমুখর লীলাচঞ্চল বালিকার সকৌতুক দৃষ্টিপাতে স্থধার মানবভীতি সজাগ হইয়া উঠিল, সে আর বাহিরের দিকে না তাকাইয়া ঘরের মেঝেতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া বসিল । হাই-হিল জুতার খটু খট্‌ শব্দ করিয়া ব্যস্ত ভাবে প্রধান শিক্ষয়িত্রী ঘরে জাসিয়া ঢুকিলেন। ভয়ে স্বধার বুকটা ছক ছুরু করিয়া কাপিয়া উঠিল। শিষ্টাচার মতে তাহার কি কৰ্ত্তব্য স্বধা যেটুকু জানিত তাহাও কেমন যেন জুলিয়া গেল । চক্সকান্ত উঠিয়া দাড়াইয়া নমস্কার করিলেন, স্বধা নীরবে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। একবার খালি মুখ তুলিয়া দেখিয়া লইল শিক্ষয়িত্রীর উজ্জল গৌরবর্ণ, ছুক্ষপ্তভ্র ফরাসডাঙ্গার শাড়ী ও র্তাহার ঝকঝকে সোনার চশমার অন্তরালে তীয় স্তেনবৃষ্টি। নিশ্চয় স্বধাকে খুব কঠোর পরীক্ষা দিয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশের ছাড় লইতে হইবে। মানুষটাকে দেখিয়াই খুব কড়া মনে হইতেছে। শিক্ষয়িত্রী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি বাংলা ইংরিজী অঙ্ক কত দূর পড়েছ ?” সভয়ে স্বধা বলিল “সীতার বনবাস, মেঘদূত"...আর বলিতে হইল না। শিক্ষয়িত্রীর কঠোর মুখে হাসি দেখা দিল, “তুমি এতটুকু মেয়ে মেঘদূত পড়? তবে টোলে ভর্তি হলে ত পারতে ” চক্সকান্ত বলিলেন, “মেঘদূত ওর মুখস্থ হয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের ভুল হয়েছে, ইংরেজী বেশী পড়ানো হয়নি ।” শিক্ষয়িত্ৰী বলিলেন, “তাতে আর কি ? ও ত ছেলেমান্থব, শিখে নেবে এখন । ওকে থার্ড ক্লাসে বসিয়ে দি গিয়ে। কি বলেন আপনি ?” এই পরীক্ষা ! স্থধার ধড়ে প্রাণ আসিল। শিক্ষয়িত্রীর হাতে তাঁহাকে সপিয়া দিয়া চন্দ্ৰকাণ্ড চলিয়া গেলেন। এই জনfরণ্যের ভিতর জ্বধা নির্বাসিত সীতার মত একলা পড়িয় রছিল। শিক্ষত্রিী তাহাকে যেখানে লইয়া বসাইয়া দিলেন ক্লাসের ঠিক সেইখানটিতে জুধ নিশ্চল প্রতিমার মত বসিয়া রছিল। ভাল করিয়া কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলিয়া জঙ্গম্বলঙ্কেরা లెIFు তাকাইলও না, পাছে চোখে চোখ পড়িলেই কেহ কোন প্রশ্ন করিয়া বলে। পণ্ডিত মহাশয় ক্লাসে পড়াইতেছিলেন, তিনি স্থধার সঙ্কোচ ভাণ্ডিয়া দিবার জন্ত বলিলেন, “বল দেখি—‘জ্যোৎস্ব তুষার মলিন সীতেব চাতপণ্ডামা মানে कि ”ि স্বধা মানে বলিতেই পণ্ডিত মহাশয় মেয়েদের বলিলেন, “দেখ, তোমরা যেন সব নূতন মেয়ের কাছে হেরে বেও नां ” মেয়ের বিস্ময় ও কৌতুহলে দৃষ্টি পূর্ণ করিয়া স্থধার মুখের দিকে তাকাইল, স্বধা কিন্তু মুখ তুলিল না। স্নেহলতা বলিয়া একটি খ্ৰীষ্টিয়ান মেয়ে পিছনের বেঞ্চে বসিয়াছিল। সে স্বধার সঙ্কোচ বুঝিয়া আপনি উঠিয় আসিয়া স্থধার কাছে বসিয়া ভাব করিতে স্বর করিল। ক্লাসের ভিতর বেশী গল্প করা চলে না, কাজেই সে স্থধার খাতায় বাংলা ইংরেজী সমস্ত বইয়ের নাম, প্রত্যেক বারের প্রত্যেক ঘণ্টার রুটিন একে একে টুকিয়া দিতে লাগিল । টিফিনের ঘন্টা ঢং ঢং করিয়া পড়িতেই মেয়ের ষে যাহার প্রিয় বন্ধুকে লইয়া বাহিরে ছুটিয়া চলিয়া গেল। স্নেহলতা স্বধাকে সঙ্গে লইয়া মুসলমান বাক্সওয়ালার নিকট হইতে চকোলেট কিনিয়া খাওয়াইল । সুধার জীবনে চকোলেটের স্বাদ গ্রহণ এই প্রথম । রঙটা ত বেশ স্বন্দর পাটালি গুড়ের মত, কিন্তু স্বাদগন্ধ ঠিক যেন পোড়া তামাক। কিন্তু স্নেহলতা ভালবাসিয়া দিতেছে—কি করিয়া ফেলিয়া দেওয়া যায় ? মুখটা যথাসম্ভব অবিকৃত রাখিয়া সে সমস্ত চকোলেটটা এক সঙ্গে গিলিয়া ফেলিল। স্নেহলতা কিন্তু চালাক মেয়ে, সে স্বধার মুহূর্তে গলাধঃকরণ দেখিয়া আসল ব্যাপারটা ধরিয়া ফেলিল। হাসিয়া বলিল “ওম, নেসলস্ চকোলেট তোমার ভাল লাগল না ! প্রথম দিনে কারুরই ভাল লাগে না, যদি না আমাদের মত আজন্ম খাওয়া যায়। আচ্ছ, তুমি ‘গোস্বাভা চিজ’ খেয়ে দেখ, নিশ্চয় বেশ লাগবে ” স্বধা আপত্তি করিবার আগেই স্নেহলতা পাতলা কাগজে জড়ানো লাল টুকটুকে ‘চিজ’ তাহার হাতে গুজিয়া দিল। “ওম, এ ত পেয়ারা”, বলিয়া স্থধা খুনী হইয়া সাগ্রহে সবট খাইয়া ফেলিল। কিন্তু প্রতিমানে কিছু ত দেওয়া তাহারও