পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9ష్ట్రిల్షా প্রষণসী $N9gN9 স্বধা যদি ঝি রাখুনীর পিছনে নালাগিয়া থাকিত,তাহাহইলে ন'টার মধ্যে ভাল ভাত, লুচি, দুধ আবার ভাজাভুজি এত আর হইয়া উঠিত না । ঘণ্টাখানিক ত কাজ নিশ্চয়ই পিছাইয় ঘাইত। কিন্তু স্থধারও ন’টায় না হোক সাড়ে ন’টায় বাস আসে। বাড়ীর কাজ চলে না বলিয়া সে দ্বিতীয় বাসে যাওয়া আসার ব্যবস্থাই করিয়া লইয়াছে। বিকালে বাড়ী ফিরিতে দেরী হইত বটে, কিন্তু সকালে বেশ খানিকট সময় পাওয়া যায়। তাহাতেই আর সকলের কাজটা সারিয়া দিয়া সে স্নান খাওয়া সারিয়া লইতে পারে। চারতলার সিড়ির নীচে তিনতলার বড় ঘরের পাশে স্নানের জন্ত ছোট একটা চিলতে ঘর ছিল বটে, কিন্তু সেখানে কল নাই, কে অত জল টানিয়া তুলিবে ? মা’কে না দিলে নয়, তাহারই জলটা শুধু ননীর মা পৌছাইয়া দিত । স্বধারা স্নান করিতে যাইত দেড়তলার রান্নাঘরের পাশের কাঠের সিড়ি দিয়া নামিয়া একটা অন্ধকার কোটরে । কোন সময় কয়লা ঘুটে রাখিবার জন্ত হয়ত বাড়ীওয়ালা এটা তৈয়ারী করিয়াছিলেন, কলতলাটা পাড়াস্বদ্ধ লোক দেখিতে পায় বলিয়া স্থধারা ইহাকেই স্নানের ঘর করিয়াছে। ঘরের দরজা বন্ধ করিলেই চোখে আর কিছু দেখা যাইত না। কিন্তু বালতির ভিতর কলের জলের শব্দটাই মনকে আনন্দে নাচাইয়া তুলিত। স্কুলে মেয়েদের মুখে শোনা রবিবাবুর নূতন গান, “তোমারই ঝর্ণ তলার নিজনে মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেল কোনখানে।” মনে পড়িয়া যাইত। জলধারার সহিত তাহার অশিক্ষিত কণ্ঠ মিলাইয়া মৃধা গান ধরিয়া দিত। মনে থাকিত না যে অন্ধকার আরসোলাপূর্ণ বায়ুইন একটা খোপের ভিতর সে . কোনপ্রকারে স্নানটা সারিয়া লইতে আসিয়াছে। মা অনেক দূর তিনতলার ছাদের আলিসা হইতে ঝুঁকিয় বলিতেন, “ওরে, তাড়াতাড়ি কর, ইস্কুলের গাড়ী তোকে ফেলে যাবে যে ” শিবু ভাতের থালা বাড়া হইয়াছে শুনিয়া সিড়ি দিয়া নামিতে নামিতে বলিত, “দাড়াও ! দিদির কবিত্ব অাগে শেষ হোক, তবে ত ইস্কুল যাবে।” ভিজা কাপড় হাতে করিয়া উপরে আসিতে আসিতে স্বধা বলিত, “কবিতা কে লেখে রে, তুই না আমি " কিন্তু মনের ভিতর তাহার এ-তর্কের জোর থাকিত না । শিৰু বলিত, “আমি বোকা-সোকা মানুষ, যা খুলী ভাই লিখি, যে-সে দেখে, তোমার মত সমস্ত কবিত্বের জাহাজ একজনের জন্তে বোঝাই ক’রে ত রাখি না।” সুধা সে-কথার জবাব দিত না । বাসনের পিড়ির উপর হইতে একটা থালা তুলিয়া রান্নাঘরে নামাইয়া দিয়া বলিত, “বামুনদি, চট্‌ ক’রে ভাতটা বাড়, মাছভাজা আর ডাল হলেই হবে, আমি চুলটা আঁচড়ে আসছি।” - দ্রুতপদে সুধা উপরে উঠিয়া গেল, চুল আঁচড়াইয়া বঙ্গলক্ষ্মী মিলের কালাপেড়ে মোটা কাপড়খানা বোম্বাই ধরণে ঘুরাইয়া পরিতে পরিতে ও গুল্গুন করিয়া গাহিতে লাগিল, “রবি ঐ আস্তে নামে শৈলতলে বলাকা কোন গগনে উড়ে চলে ।” বাল্যলীলাভূমিতে প্রত্যহ দেখা শৈলমালার অন্তরালে অস্তমান স্বর্ধ্যের ছবি মনে ফুটিয়া উঠিতেছিল, জীবনের নবলব্ধ আনন্দ যেন সেই অন্তরাগের রং আরও রহস্যময় করিয়া তুলিতেছিল। স্কুলের পোষাক করিবার সময় হৈমন্তীর কোকড়া চুলের মোটা বিচুনীর তলায় চওড়া কাল রেশমী ফিতার জোড়া ফাস, তাহার সাদা মসলিনের ফাপা হাতের জামা, তাহার সাদা খড়কে-ভুরে শাস্তিপুরে ফুলপেড়ে শাড়ী, তাহার মুক্তাখচিত এইচ লেখা ছ-আঙুল লম্বা ব্রোচ, তাহার সাদা লেসের মোজ ও সাদা ক্যানভাসের হিল-দেওয়া জুতা স্থধার মনের ভিতর ভাসিয়া বেড়াইতেছিল। কি সুন্দর হৈমন্তীকে দেখায় এই পোষাকটিতে । কিন্তু স্ব ধা তাহা নকল করিয়া সং সাজিতে এবং হৈমন্তীর পোষাকের অমৰ্য্যাদা করিতে চাহে না । মুধাকে আমন হাল্কা পরীর মত পোষাকে মোটেই মানায় না । তাহার এই বঙ্গলক্ষ্মীর মোটা শাড়ী,মোটাছিটের জামা ও বিবর্ণ চটিই বেশ ভাল। আচলটা কোমরে গুজিয়া একটা ষ্টীলের সেফটিপিন কাধে লাগাইয়া সে খাইতে চলিয়া গেল। অধিকাংশ দিন আঁচলে চাবি ঝুলাইয়াই সে স্কুলে চলিয়া যায়। খোকন পাতের কাছে আসিয়া বলিল, “দিদি ভাই, অামাকে এততুকু মাছ!” তাহার তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের নথাগ্র ঠেকাইয়া সে মাছের পরিমাণ বুঝাইয়া দিল।