পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক বাংলা সাহিত্য—মোহিতলাল মজুমদার প্রণীত । চাক এলবাট লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত, ১৯৩৬ । মুল্য ২ • ও ৩২ টাকা । রবীন্দো গুর বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে এমন নৈরাপ্ত জন্মিয়। গিয়াছে যে নিজের লেখা ছাড়! অদ্য লেখা পড়া ছাড়িয়াই দিয়াছিলাম এমন সময়ে মোহিতবাবুর আধুণিক বাংল সাহিত্য নামে সমালোচনী-গ্ৰন্থ হাতে পড়িল । ব্রিটিশ প্রভালোঙ্গুর বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে এরূপ চিন্তাপূর্ণ ধারাবাহিক রচনা ইতিপূৰ্ব্বে দেখি নাই । বাঙালীর সমালোচনার মধ্যপন্থ নাই, জাহাতে হয় ‘চমৎকার আহ, মরি মরি’র সুমের, নর ব্যক্তিগত গালাগালির কুমের ; প্রকৃত সমালোচক মধ্যপন্থীর পপিক, মোহিতবাবু সেই মধ্যপন্থা আবিষ্কার করিয়াছেন। বৰ্ত্তমান গ্রন্থে নিম্নলিখিত প্রবন্ধগুলি আছে 2– আধুনিক বাংলা সাহিত্য, বঙ্কিমচন্দ্র, বিহারীলাল চক্রঙ্গ, স্বরেন্দ্রনাথ মজুমদার, দীনবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল, শরৎচন্দ্র ও আধুনিক সাহিত্যের ভাল । বৰ্ত্তমান বাংলা সাহিত্যের উপরে ইংরেজী তথ। পাশ্চাত্য প্রভাব এত গভীর ও ব্যাপক যে অপণিামদর্শীর দৃষ্টিতে ইহু: সৰ্ব্বতোভাবে অ-বাঙালী । কিন্তু লেখকের কৌশলী দৃষ্টি ইহার fofরতে পুর্ণ বাঙালীয়ানাকে আবিদার করিয়াছে । এই সাহিত্যের মূলে জাতীয় ভিত্তি ছিল বলিয়াই ভাই৷ বৈদেশিক প্রভাবের গঞ্জলকে নীলকণ্ঠের মত অতি সহজে ধারণ করিতে পারিয়াছিল ; এবং ধারণ করির সৌন্দৰ্য্য বুদ্ধি করিতে সমর্থ হইয়াছিল । এই সাহিত্যের “দেহ ও প্রাণধৰ্ম্ম দেশেরই, বাহির হুহতে আসিয়াছিল BB BBBB BB BKBE S BBBB BB BBB BBBB SBB অাদর্শসঙ্কটের দিলে, জাতির প্রতিভা ও প্রকৃতিগত প্রবৃত্ত্বি--এক কথায় তাহার স্বধৰ্ম্ম, এই নব্য সাহিত্য-স্থষ্টির পক্ষে কতখানি অনুকুল বা প্রতিকূল হইয়াছে তাহা বুঝির লইবার প্রয়োজন আছে।” এই প্রয়োজন হইতে বওঁমান গ্রন্থের রচনাগুলির উদ্ভব । লেখক বাংলায় এই পুনরুজ্জীবন-পর্বের দুইট বিশিষ্ট লক্ষণ আবিষ্কার করিয়াছেন। ইংলণ্ডের পুনরুজ্জীবন-পর্বের সঙ্গে তুলনা করিলে ইহার অঙ্গহীনতা ধরা পড়িবে। রাজ্ঞী এলিজাবেথের যুগে ইংলণ্ডের জাতীর জীবনে যে পুনরুজ্জীবন ঘটিয়াছিল তাই উভয়মুখী ছিল- বহিমুর্থী ও অপ্তমুখী। বহির্লোকে ড়েক ও র্যালে, অগুলোকে শেক্সপীয়র ও স্পেন্সর ইংলণ্ডের বাণীর বনিয়াল রচনা করিয়াছিল। স্পেনের নৌবহর ধ্বংসের মূলে ছিল ক্যাথলিক ধৰ্ম্মের অনুশাসনকে অস্বীকৃতি । ড্রেক পারসমুদ্রে যে নব দিগন্তের অনুসন্ধান করিতেছিল তাহার দোসর ছিল শেক্সপীয়ল্পের অস্তমুর্থিী অনুসন্ধিৎসায় আর র্যালে সাত-সমুদ্র-তের-নদীর পারে যে স্বর্ণপুরীর সন্ধান কোনদিন পায় নাই BBB BBB BBBBB BB BBBB BBBS BBDDDDSDBBBB দুস্তর হৃদয়সমুদ্রের পরপারে । এই জাতীয় জাগরণ উভয়মুখী ছিল বলিয়াই তাহ স্বাভাবিক ভাবে বাড়িতে পারিয়াছিল এবং উত্তরকালে ইংলণ্ডকে এমন গৌরবময় করিয়৷ তুলিয়াছিল । ইহার সঙ্গে তুলনা করিলে দেখা যাইবে বাঙালীর পুনরুজ্জীবন অত্যঙ্গ একপেশে ও অঙ্গহীন। ইংরেজের ভারতব্যাপী সাম্রাজ্য-পত্তনে, রাষ্ট্রশৃঙ্খলায়, আইন-প্রণয়নে ও সর্বোপরি পাশ্চাত্য অাদর্শের বিস্তারে বাঙালী শাপ্তি ও সাম্য অনুভব করিয়াছিল। এই শাস্তি ও সাম্য যে-পরিমাণে তাহার ভাবলোকে মুক্তির আশীৰ্ব্বাণ বর্ষণ করিয়াছিল বহির্লোকে সে তুলনায় কিছুই দিতে পারে নাই । বাঙালী আমর্শড ধ্বংস করে নাই, রাজ্য বিস্তার করে নাই, উপনিবেশ স্থাপন করে নাই ---কেবল সাহিত্য রচনা করিয়াছিল । পশ্চিমের এই প্রচণ্ড আঘাতে তাঁহার কুপ্ত বাঙালী ধৰ্ম্ম -- চৈতন্তদেবের সময় হইতে যাহা কুপ্ত ছিল—জাগিয় উঠিয় অার একবার, বোধ হয় শেষবার, আপন অস্তিত্বকে অনুভব করিয়াছিল । মাইকেলবঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের লাহা আড়ম্বর, ভাষার ঐশ্বৰ্য্য, ভঙ্গী বৈদেশিক প্রভাবকে যতই উচ্চ কণ্ঠে প্রচার করুক না কেন, তাহার "দেহ ও প্রাণধৰ্ম্ম দেশেরই । সৰ্ব্ব দেশের সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের লক্ষণ এই যে তাহান্তে তৎকাল ও সৰ্ব্বকালের, অর্থাৎ তথ্য ও সত্যের সমন্বয় ঘটিয়া থাকে । চিরকালের সত্য তৎকালের রথে আরোহণ করিয়া দেখ দেন । নাইকেল-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের মহত্ত্বের বহন এই বাঙালীত্ব । এ বাঙালীত্ব এতই শক্তিমান যে বিশ্ববোধের বিশাল গিরি গোবৰ্দ্ধন অনায়াসে’ধারণ করিতে সমর্থ। ই ছাদের রচিত সাহিত্য বিশিষ্ট্র হইয়াও বিশ্বজনীন ৷ ইহ: বাঙালীর রচিত বিশ্বসাহিত্য । সেই জন্য লেপক মধুসূদনকে স্মরণ করিয়া বলিতেছেন : -“পশ্চিমের প্রবল প্রভাব--- সাহাকে একেবারে জয় কল্পির লইয়াছিল তাহার মধ্যেই বাঙ্গালীর বাঙ্গালীতম প্রাণ, সেই পাশ্চাত্য প্রভাবের পীড়লেই একেবারে গুমরিয়া উঠিল ; -- --- হোমার, ভাৰ্জিল, ট্যাসোর কাব্য-গৌরব বিফল হইল— বীর বিক্রমের গাথা অশ্ৰুধারে ভাঙ্গিয় পড়িল ; মাত ও বধুর ক্ৰন্মনরবে বিজয়ীর জরোল্লাস ডুবিয়া গেল—বীরাঙ্গনার যুদ্ধযাত্রা বাঙ্গালী বধুর সহমরণ-যাত্রার করণ দৃষ্ঠে, অদৃষ্টির পরম পরিহাসের মত দিদারুণ হইয়া উঠিল । --- ইহাই হইল বাঙ্গালীর মহাকাব্য। --- মহাকাব্যের আকারে বাঙালী জীবনের গীতি কাব্য ।” লেখক বলিতেছেন, মধুসূদন, বিদেশের ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য করিয়া অচিন্ত্য সমুত্রের দিকে তরণী চালনা করিয়াছিলেন কিন্তু "সমুদ্রতলে কপোতাক্ষের অন্তঃস্রোত তাহার কাব্যতরুণীর গতি নির্দেশ করিল, সমুজে পাড়ি দেওয়া আর হইল না। তরী যখন তীরে অসিয়া লাগিল, তখন দেখা গেল—“সেই বাটে খেয় দেয় ঈশ্বরী পাটুনী " লেখক এই গ্রন্থে মেজর ও মাইনর দুই শ্রেণীর লেখক সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন । লেখকের মতে এই দুই শ্রেণীর মধ্যেই জাতীয় চৈতন্ত আছে, কিন্তু মেজর লেখকদের রচনার সব সময়ে তাহ চোখে পড়ে না ; শিল্পের ইগ্রজালে তাহ আচ্ছন্ন । মাইনর লেখকদের রচনায় শিল্পের ইন্দ্রজাল তেমন দৃঢ়পিনদ্ধ না হওয়াতে জাতীয় চৈতন্য বেশ সহজে ধরা পড়ে । মেজর লেখকদের সঙ্গে সঙ্গে মাইনর লেখকদের বিশেষ ভাবে আলোচনা করিবার ইহাই প্রধান কারণ ।