পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাণী Es ঐতালোক রায় ঝড়ের হাওয়ায় যেমন করিয়া উৎসবরাত্রির দীপগুলি সহসা একসঙ্গে নিবিয়া যায়, মুপারিন্টেগুেন্টের গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরে তেমনই করিয়া মেয়েদের শয়নকক্ষের আলোগুলি একসঙ্গে এক মুহূৰ্বে নিবিয়া গেল। সিঁড়িতে সুপারিন্টেণ্ডেন্টের পদধ্বনি ক্রমশঃ বিলীন হইয়া গেল, এবং তাহার পরই ভারী দরজার শব্দ হওয়াতে বোঝা গেল, তিনি র্তাহার শয়নকক্ষে প্রবেশ করিয়াছেন । দোতলায় মেয়েরা থাকে, পাশাপাশি দশ-বারটা ধর । সম্মুখে উচু রেলিং-দেওয়া কাঠের লম্বা বারাও। বারাওয়ে দাড়াইলেই নদীটা দেখা যায়—কেবল একটি প্রশস্ত রাজপথের ব্যবধান । নদীর দিকে মুখ করিয়া দাড়াইলে একেবারে ডান পাশের শেষে যে ঘরটা, তাহাতে থাকে একটি পাহাড়ী মেয়ে । আলো সে নিবাইয়া দিয়াছে অনেক ক্ষণ, এখন আর তাই তাহার আলো নিবাইতে হইল না, গায়ের কাপড়টা টানিয়া সে কেবল একবার পাশ ফিরিয়া শুইল । ঝরণার স্তায় চঞ্চল মেয়েটির স্বভাব, এখানে আসিয়া এই সঙ্কীর্ণ গণ্ডী এবং নিয়মকানুনের ভিতর পড়িয়া প্রাণটা তাহার হাপাইয়া উঠিয়াছে। এখানে সে নবাগত, এবং নূতন আসিলে যাহা হয়, তাহারও তাঁহাই হইয়াছে, অর্থাৎ কারণেঅকারণে পোড়া চোখ-দুইটাতে কেবল জল আসিয়া পড়িতে চাহিতেছে। দিনে সকলের চোখের সম্মুখে সে কোন রকমে আত্মসংবরণ করিয়া চলে, কিন্তু রাত্রে নিভৃতে শয্যায় গুইয়া শিয়রের উপাধান ভিজিতে থাকে। আজও তাহার ঘুম আসে নাই—নিস্তন্ধ নিশীথে মনটা তাহার মুক্ত বিহঙ্গের স্তায় পাখা মেলিয়া পাহাড়ের পর পাহাড় অতিক্রম করিয়া তাঁহাদের সেই ক্ষুদ্র কুড়েঘরটির পানে ছুটিয়া চলিয়াছে এবং সফলং * বৃক্ষের যে-শাখাটা তাহাদের জানালার একান্ত

  • १iगिब्रांणब्र थिइ 4क अकब्र क्षण।

و لامس8br নিকটে আসিয়া পড়িয়াছে, তাহারই পত্রান্তরালে আপনাকে লুকাইয়ু জানালার ভিতরে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া সে চুপ করিয়া বসিয়া আছে। জানালার ভিতর দিয়া দেখা যায় ছোট একটি ঘর। এক পাশে চিমনি জলিতেছে—তাহারই আলোতে ঝুকিয়া পড়িয়া মা তাহার পিতার মোজ রিপু করিতেছেন। বৃদ্ধ পিতা কাগজ-কলম লইয়া কি হিসাব করিতেছেন। অদূরে বইটা স্বমুখে খুলিয়। রাখিয় তাহার ছোট ভাইটি চোখ বুজিয়া ঝিমাইতেছে এবং মাঝে মাঝে মায়ের ভৎসন শুনিয়া চোখ-দুইটাকে যথাসাধ্য টানিয়া টানিয়া খুলিয়া একটা লাইনই পুনঃপুনঃ পড়িয়৷ যাইতেছে। তাহাদের পশ্চাতে দ্বারের অন্তরালে বসিয় তাহার বোনটি সোসাং-ফল খাইতেছে ; মাঝে মাঝে পিছন ফিরিয়া চকিত দৃষ্টিতে দেখিয়া লইতেছে কেহ তাহাকে দেখিতেছে কিনা, এবং তাহার পর নিশ্চিন্ত মনে খাইতে থাইতে ভাবিতেছে, কি উপায়ে পিতামাতাকে না জানাইয়া ইহার কিছু অংশ দিদির নিকট পাঠানো যাইতে পারে। তাহার চিন্তাধারায় বাধা দিয়া নীচের পড়িবার কক্ষের বড় ঘড়িটায় ঢং-টং করিয়া এগারটা বাজিল । সময় হইল নাকি তাহার আসিবার ? কিন্তু এত রাত করিয়া বাজার কেন ও ? কত দিনত ঘুমাইয়া পড়ে, শুনিতেই পায় না মোটে। বড় ভাল লাগে তাহার বঁাশী শুনিতে, ভাইটির কথা মনে পড়িয়া যায়। কি ভালই না বাসে ও বঁাশী বাঙ্গাইতে ! কত দিন স্কুল ফাকি দিয়া সে ঐ পাইনগাছটার তলায় দিদিকে ডাকিয়া জানিয়া বাণী শুনাইয়াছে। মনে হয় রাত্রের অন্ধকারে মুখ ঢাকিয় তাহার ভাইটি যেন আসে তাহাকে দেখিতে, ঐখানে ঐ বালুচরে ক্ষীণ জ্যোৎস্নালোকে বসিয়া ভাইটি আসিয়া বাণী বাজায়— বুঝি বা প্রবাসী বোনটির চোখে ঘুম আনিবার জন্যই। চিমনির আলোতে ভাইটির মুখ দেখা যায়—একেবারে স্পষ্ট।