পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बैंiनेकी @SN○ পৌষ না, এত পড়াশুনার ভিতর কি করিয়া সে এত বড় অতি কষ্টে গলাটা পরিষ্কার করিয়া শাস্তার কানের মাফলারটা শেষ করিয়া ফেলিল । অতি নিকটে মুখ লইয়া মেয়েটি কহিল, “তোকে আমি বাহিরে শাস্ত নদীর বক্ষে তরঙ্গের স্বপ্তি ভাঙাইয়া একটা ষ্টীমার চলিয়া গেল। মেয়েটি এতক্ষণ পরে একবার সেই দিকে চাহিল। বেশী লোক নাই ডেকে । কেবল, একেবারে রেলিঙের ধারে বসিয়া কে এক জন একটা ইজিচেয়ারে গুইয়া রহিয়াছে। ধীরে ধীরে জাহাজটা দূরে চলিয়া গেল, জাহাজের লাল নীল আলোগুলি নদীর জলে পড়িয়: রামধন্থর ন্যায় বর্ণবৈচিত্র্য স্বষ্টি করিয়াছে,—দুরের পাহাড়টার অন্তরালে ষ্টীমারের শেষ আলোটা বিলীন হইয়া গেল। মেয়েটি পুনরায় হাতের মাফলারের উপর ঝুঁকিয়া পড়িল । ম-বাবাও ত আসিবেন কাল ঐ রকম ষ্টীমার করিয়া । ষ্টেশনে সে নিশ্চয়ই যাইবে । ও কি ! এগারটা বাজিয়া গেল ইহার মধ্যে ! মাফলারটা প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, অবশিষ্টটুকু কাল অনায়াসে শেষ করিয়া ফেলা যাইবে—ঘুমও আসিতেছে চোখে। কিন্তু এত শীঘ্র ঘুমাইলে ত চলিবে না। বড় প্রখর না তোমার দৃষ্টি ? বারটা পৰ্য্যন্ত আজ মোমবাতি জালাইয়া রাখিবে সে। এত কড়া মেজাজ, অন্যায় অত্যাচার সুপারিন্টেগুেন্টের, সব সহিয়া চলিয়াছে মেয়ের ; হুইত ছেলেদের হোষ্টেল, এত দিনে কিছু শিক্ষা দিয়া ছাড়িত। দ্বারে করাঘাত হইল, মৃদ্ধ কিন্তু অধীর । অপরিসীম বিস্ময় এবং ভয়ে মুহূর্বের জন্য মেয়েটির চেতনাশক্তি যেন লোপ পাইল, কিন্তু পরক্ষণেই বিপদের গুরুত্ব বুঝিয় তাহার সমস্ত শক্তিকে একত্র করিয়া ফু দিয়া যেই মোমবাতি নিবাইতে যাইবে, অমনি দ্বারের বাহিরে মৃদ্ধ করুণ একটি কণ্ঠস্বর শুনা গেল—“শাস্তা, দোরটা খুলে দে ভাই।” স্বস্তির একটা দীর্ঘনিশ্বাস লইয়া শাম্ভা দ্বার খুলিল, এবং পরমুহূৰ্ত্তে অঙ্গের চাদর এবং উপাধান সহ একটি মেয়ে একেবারে হুড়মুড় করিয়া শাস্তার গায়ে পড়িয়া গেল। ত্রস্তে পতন সংবরণ করিয়া আগন্ধকার পানে চাহিতেই শাস্তা দেখিল মেয়েটির ললাটে স্বেদবিন্দু এবং তাহার সর্বশরীর খরখর করিয়া কঁাপিতেছে। শাস্তা প্রশ্ন করিল,-“ও কি রে । অমন হি হি ক’রে কঁপিছিল কেন ? নেয়ে এলি নাকি এত রাতে "ি সত্যি বলছি শাস্ত । আমার ঘরের কাছের সেই গাছটা থেকে একেবারে স্পষ্ট কে যেন আমার নাম ধরে ডাকলে, একবার নয় ভাই, তিন-তিন বার।” শাস্তার মুখের ভাবে বুঝা গেল না যে ইহাতে সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হইয়াছে। বরং একটু যেন বিরক্ত হইয়াই কহিল, “মাচ্ছ, পৃথিবীর যত ভূতপেত্নী কি তোর ঘরের কাছে গিয়ে বাসা বাধল রে ? আজ তোর নাম ধরে ডাকবে, কাল খড়ম পায়ে দিয়ে তোর দোরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে, পরশু তোর জানালার পরজ ফাক ক’রে তোকে দেখবার জন্যে উকি মারবে—না: ! তুই একেবারে হোপলেস্ । ● কণ্ঠে করুণ মিনতি ভরিয়া মেয়েটি কহিল, “তোরা বিশ্বেস করিস নে ভাই, কিন্তু এতক্ষণ সত্যি আমার যে কি হচ্ছিল সে শুধু আমিই জানি। লেপের তলায় একেবারে ধেমে উঠেছি, তবু মুখ বার করতে পারি নি। একটা আঙুল বাইরে ছিল, একেবারে ঠাণ্ড যেন বরফ, তবু যে লেপের ভেতরে টোকাব, সে সাহসও আমার হচ্ছিল না ভাই। তা তুই যাই বলিস শাস্তা, আজ আমি কিছুতেই ও-ঘরে শুতে পারব না।” অতঃপর দুই জনে মিলিয়া শয্যা রচনা করিল ; শাস্ত পুনরায় মাফলারে মনোনিবেশ করিল, এবং অপর মেয়েটি গুইয়া পড়িল । “শাস্তা !” “कि !" “সেই বঁাশীটা এই রকম সময়েই ত বাজে, না রে ?” শাস্ত মৃদু হাসিল—“ভূতের ভয়েও বঁাশীর কথা জুলিস নি দেখছি ?” মেয়েটি একটা মৃদু নিঃশ্বাস ফেলিল—“না ! বঁাশী শুনলে আর আমার ভয় করে না, মনে হয় কোন দেবতা স্বৰ্গ থেকে আমায় অভয়বাণী পাঠাচ্ছেন। শাস্তার পরের কক্ষে ষে থাকে, লাইট নিবাইয়া গুইয়৷ গুইয়া আপন মনে সে হাসিতেছে। মাঝে মাঝে একটু জোরে