পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথা তারই সরব সহভাৰী, ধোঁধ-পরিবারভুক্ত আশ্রিত আত্মীয়। তাই, নটীর পূজার নটীর মতন, সকল আভরণ খুচিয়ে দেবার পর নৃত্যকলা আপন অস্তিত্ব অর্জন করে। তখনই বাক্য হয় সংযত, স্বরও হয় নৃত্যের অহঙ্কুল। এ পন্থা চিরপরিচিত—বাক্যের তাৎপৰ্যকে অবদমিত করবার পরই যেমন স্বরের সম্ভব হয়েছিল। ● বোধ হয় পূৰ্ব্বোক্ত মন্তব্যের ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্র-সঙ্গীতের বিশেষত্ব এই যে তার প্রত্যেকটি রচনা রাগিণীর সামাঙ্গ গুণের অধিকারী হয়েও স্বকীয় । অর্থাৎ কোন রচনাই তার ‘আলাপ" নয়। ভৈরবীর আলাপে আদি স্বরস্থাপনা থেকে তান কৰ্ত্তব, ধূন চৌধুন সকল প্রকার বিবর্তনের স্থান আছে, কিন্তু রবীন্দ্র-সঙ্গীতে তার বদলে আছে নানা রকমের গান, যার প্রত্যেকটি ভৈরবী কিংবা তৎসংলগ্ন কোন স্বরের আশ্রিত, তৰু যেটি আপন অস্তিত্বে বিশেষ। রবীন্দ্র-সঙ্গীতের কোনটির সম্বন্ধে বলা চলে না ষে সেটি ভৈরবীর গান, তার সম্বন্ধে বলা চলে ষে এই গানটিতে ভৈরবী রয়েছে। তবু কোন রচনাই স্বরে বসান কবিতা নয়, কোন কবিতাই স্বরে বসাবার জন্য লেখা হয় নি। রবীন্দ্র-সঙ্গীতের বিশেষত্ব উদ্ভূত হয় স্বর ও কথার অদ্ভুত যোগাযোগে । সেই জন্ত রবীন্দ্র-সঙ্গীতকে অন্তের পংক্তিতে বসান যায় না, তাকে নিয়ে যথেচ্ছাচারও চলে না । রবীন্দ্র-সঙ্গীতের স্বাতন্ত্র্য এতই জীবন্ত যে তাকে নৃত্যের ভাষায় অনুবাদ করলে তার ধর্শ্বচূতি ঘটে। আর্টেরও ধৰ্ম্ম পরিবর্তন নিতান্তই ভয়াবহ। অনুবাদ যতই স্বই হোক না কেন তার মূল্য মৌলিক-স্বষ্টি অপেক্ষা কম। (কবি নিজেই এই তত্ত্বটি আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন তার চিত্রে, যেখানে স্বধৰ্ম্মাচরণে নিধনপ্রাপ্তির সংবাদে সাজন পাই পরধর্শ্বের আশ্রয়তাগের সাহসিকতা লক্ষ্য করে। র্তার কোন চিত্রই অনুবাদ নয়, রঙে গল্প বলা নয়। ) আজ গত কয়েক বৎসর ধরে শাস্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ স্বত্যকলার নূতন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সযত্ন হয়েছেন। তাদের সকল প্রচেষ্টার সঙ্গে আমার চাক্ষুব পরিচয় নেই। য দেখেছি তাই থেকে আমার মনে করা নিতান্ত সহজ হয়েছে 0احسد حRي মৃত্যনাড়্য চিত্রাঙ্গদশ জ্ঞইত _ যে সে-পদ্ধতি রবীন্দ্র-সঙ্গীতের ( ও রবীন্দ্র-নাট্যের ) আশ্রয়ে বিকশিত ও তার বৈশিষ্ট্যেই পরিপুষ্ট। তার মধ্যে স্বকুমারভের ও কৃতিত্বের যথেষ্টনিদর্শন বর্তমান । তৰু আমার বিশ্বাস যে পূৰ্ব্ব-চিত্রাঙ্গদ যুগের অভিনয়ে বিশুদ্ধ নৃত্যকলার বীজ থাকলেও সেটি রবীন্দ্র-সঙ্গীতের পূর্বলিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্ত গুপ্ত ছিল। তপতী কিংবা "নটীর পূজা’র নৃত্যের যা অন্ধকরণ দেখেছি তাকে "ভাও-বাৎলান’ ছাড়া অঙ্ক কিছু আখ্যা দেওয়া যায় না। চিত্রাঙ্গদ নৃত্যনাটোই স্বাধীন মৃত্যকলার সর্বপ্রথম উন্মেষ হ’ল। কবিকে আশ্বাস দিতে পারি—চিত্রাঙ্গদার অনুকরণ হবে না, প্রবাসী বাঙালীরাও ভয় পাবেন অভিনয় করতে। রবীন্দ্র-সঙ্গীতের উৎকর্ষ ও বিশেষ-ভাবাত্মকতা ভিন্ন তাল-বৈচিত্র্যের অভাবও নৃত্যশিল্পের স্বাধীন জীবনযাত্রায় বিপত্তি বাধিয়েছে । “রবীন্দ্র-সঙ্গীত বেতালা”—এই মস্তব্যের কোন অর্থ নেই—কারণ তাল গায়কের কণ্ঠে। কিন্তু স্বরলিপিতে প্রকাশিত রচনায় তালের বৈচিত্র্য কম কি বেশ ধরা পড়ে। রবীন্দ্র-সঙ্গীতের স্বরলিপিতে অল্পসংখ্যক তালের নির্দেশ পাওয়া যায়। রুদ্রতাল, ব্ৰহ্মতাল, বড় দশকুশী পঞ্চম সোয়ারীর প্রত্যাশা কেউ করে না, ধামার আড়াচৌতালের বাটোয়ারাও রবীন্দ্র-সঙ্গীতের প্রকৃতিবিরুদ্ধ। যে-সঙ্গীত গায়কেব ও গানের মেজাজের সাহচর্ধ্যে সার্থক হয়, তার গায়ন-পদ্ধতিতে স্বজ্ঞাতিস্বল্প বাটোয়ারার স্বযোগ নেই। সে-সঙ্গীত যদি আবার নাট্যোপযোগী হয়, তখন অবসর থাকে কেবল লয়ের—অর্থাৎ মাত্রাভাগ ও তালের পিছনকার মূলগত ছন্দের। এই আদিম ছন্দ শ্বাসপ্রশ্বাস ও গানের 'মেজাজের’ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। অতএব এক হিসেবে সূক্ষ্ম বাটোয়ারার অভাবের জন্ত রবীন্দ্র-সঙ্গীতকে এবং সেহ সঙ্গীতের আশ্রিত ৰত্যকছুক দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। তবু স্বাধীন নৃত্যকলার অভিব্যক্তির দিক থেকে বলা চলে যে তালের বৈচিত্র্য নিতান্তই বাঞ্ছনীয় এবং নৰ্ত্তক-নর্তকীর তালভঙ্গ অত্যন্ত অমার্জনীয়। সামান্ত ত্রিতালীতে শাস্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের আমি ভুল পদক্ষেপ লক্ষ্য করেছি—কিন্তু চিত্রাঙ্গদা অভিনয়ে নর্তক-নর্তকীর পদক্ষেপ নিতুল ছিল। কেবল তাই নয়, ঝাঁপতালের মত গভীর