পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ থাকে, তবে তাঁদের ব্যবহারকে গ্রথিত করতেই হবে। সেই জন্য গ্রথিত করবার পর স্বল্পতা যদি না রক্ষিত হয়, তবু বিশেষ ক্ষতি হয় না। যেমন, একক নৃত্যে তালের স্বল্প বিভাগ ও আড়ম্বরের স্বযোগ থাকলেও সমবেত কিংবা পুঞ্জ-নৃত্যে বাটোয়ারা, বিসম, অনাঘাতের স্থান সঙ্কীর্ণ ; যেমন খেয়ালে তানের অবসর যথেষ্ট থাকলেও কোরাসে ছায়ানট কিংবা দেশে বন্দেমাতরম্ গানটি অচল ও অশ্রাব্য। কোরাসে ঐতি কিংবা তান কিংবা তালের বাহাদুরী অশোভন। অবশু, মনে রাখতে হবে বহু এখানে এককেরই আশ্রিত, একক থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, সে যেন এককের চার পাশে জ্যোতিমণ্ডল হষ্টি করছে, আরও মনে রাখতে হবে নিরালম্বতা শুদ্ধতার আরোহণ-পথ। দেশী নৃত্যের মধ্যে বোধ হয় মণিপুরী তোই বহু তার যথার্থ স্থান পেয়েছে। চিত্রাঙ্গদা নিজে মণিপুরের রাজকন্যা এই কারণটি যথার্থ নয়। বলা বাহুল্য, অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদা নায়ক-নায়িক, তারা ভন্ন দেশের রাজপুত্র ও রাজকন্ত। চিত্রাঙ্গদার দেশে ণিপুরে অর্জন এসেছেন একাকী, দেশভ্রমণের পরিশেষে। বতী চিত্রাঙ্গদ যুবকের মতনই প্রতিপালিত (তিনিই গরতের প্রথম সাফ রাজেট) তার এই অদ্ভুত শিক্ষাদীক্ষার তিহাস সখীগণই বিবৃতি করতে পারেন। তদ্ভিন্ন অর্জুনের দ্য পরিচর, গ্রামবাসিগণও আছে, আর আছেন মদন । জুন ও চিত্রাঙ্গদার ব্যবহারই নাটকের প্রধান অধিশ্রয়ণ। jদের ব্যবহারের প্রতিফলন হবে মদন ব্যতীত নাট্যমঞ্চস্থ ফ্ৰান্ত ব্যক্তির উপর । কখনও বা তারাই সেই মূল বহারের, সেই সম্বন্ধের অভিব্যক্তির সাতত্য বজায় খবে, সময় সময় তারাই হবে প্রতিবাদ-স্বরূপ। মূল স্বর তি হবে তাদের আধারে—মূল স্বর ও নৃত্য পরিপুষ্ট হবে দেরই সমর্থনে, কিংবা বৈপরীত্যে। চিত্রাঙ্গদায় সমবেত Jকে নানারূপে ব্যবহার করা হয়েছে। তবু যদি বিবর্তনের ধারা শিথিল হয়, ছক হয় ছিন্ন, তবে মদনের আশীৰ্ব্বাদে এবং কবির আবৃত্তিতে iারা আবার বইবে। এই ধারা অক্ষুণ্ণ রাখা, এই বন্ধনসর আজিকটি আমাদের নিতাস্তই পরিচিত। কৈবল্যই হিন্দু সভ্যতার বন্ধনী হয়, তবে নৃত্যনাট্যে চিত্রাঙ্গদার নয়কে পুরাতন সংস্কৃতির উপরই প্রতিষ্ঠিত ভাবতে নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদণ $ల్సి পারি। সেই ভূমিকায় সমবেত নৃত্যের স্থান নিরূপণ করলে দেখা যাবে ষে নৃত্যাভিনয়টি সত্যই বিপ্লবাত্মক । পুঞ্জ-স্বত্য বোধ হয় ধ্রুবপদী নয়—শাস্ত্রেও তার আঙ্গিক নির্ণীত হয়েছে ব’লে আমার জানা নেই। (এখানে আমার ও অন্যান্য জনসাধারণের অজ্ঞানতাকে তথ্য হিসেবে ধরলে বোঝা যাবে যে সংস্কৃতি যখন বিচ্ছিন্ন, যখন তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমরা সকলেই অচেতন, তখন তাকে ভিত্তি করে নূতন ইমারং গড়া চলে না। অতএব এই কারণেও মার্গ-নুত্যের পুনরাবৃত্তি এ-ক্ষেত্রে অসম্ভব—শ্রষ্টাকে দেশী নৃত্যের দ্বারস্থ হতেই হবে । দেশের মাটি থেকে রস আহরণ করা কবির পরিচিত পন্থা। মাগ-সঙ্গীতে তিনি বাউল ভাটিয়াল মিশিয়ে নূতন জাতি স্বষ্টি করেছেন। নৃত্যেও তাই। পার্থক্য অবস্ত আছে এবং যতটুকু পার্থক্য ততটুকু তার কৃতিত্ব। মার্গ কিংবা ধ্রুবপদী সঙ্গীত আমাদের কাছে জীবন্ত, আমাদের সংস্কারগত অন্ততঃ আংশিক ভাবে । মার্গ কিংবা ধ্রুবপদী নৃতারূপ কি আমরা জানি না । বলী-নৃত্যকে মৌলিক বলব ? তাও কি আমাদের সংস্কারগত ? সৰ্ব্বপ্রকার বাইজী-নৃত্য যে ধ্রুব নয়, সে-বিষয়ে সকলেই আমর নিঃসন্দেহ। তবু দক্ষিণ-ভারতীয় নৃত্যের নানা রূপের মধ্যে খানিকট ধ্রুব-পদ্ধতি বৰ্ত্তমান আছে অল্পমান করা অন্যায় নয়। সে রূপও আজ শিক্ষিত সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতার বাইরে। কিন্তু দক্ষিণী জনসাধারণের, গ্রামবাসীর অপরিচিত নয়। অতএব পণ্ডিতের দল যাই বলুন না কেন, নৃত্যনাট্যের স্বকীয় প্রয়োজনের জন্য পুঞ্জ-নৃত্যকে গ্রহণ যদি করতেই হয় তবে দেশী ও গ্রাম্য-নৃত্যকে বরণ করাই সার্থক। তবেই বিপ্লব সংসাধিত হবে। দেশী-নৃত্যের মধ্যে দুটির প্রতিষ্ঠা আছে— মণিপুরী ও মালাবারী কথাকলির। আর একটি প্রতিপত্তি সমগ্র উত্তর-ভারতে পরিব্যাপ্ত, কালক-বৃন্দার পদ্ধতি । শেষেরটি পুরোপুরি ধ্রুব না হলেও তাকে তার পরিব্যাপ্তির জন্ত বাদ দেওয়া ষায় না । এই তিনটির অদ্ভুত সংমিশ্রণ চিত্রাঙ্গদা-নৃত্যের বিশ্লেষণের ফলে চোখে পড়ে। অন্ত্রপাত অবশু বিভিন্ন এবং সঙ্কলনটাই কৃতিত্ব মনে রাখতে হবে। কালকা-বৃন্দার নৃত্য-রূপ কি রকম ছিল তার সাক্ষ্য দিতে পারব না। তবে তাদের পুত্র-ভাতু পুত্র এবং একাধিক শিশু-শিন্যার নৃত্য দেখে বলতে পারি ষে তাদের প্রবত্তিত