পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

B\9R్న প্রবাসী RN9gN9 নৃত্যকলার মুলকথাটি শাস্তিনিকেতনী এবং চিত্রাঙ্গদার নৃত্যে পরিত্যক্ত হয় নি। ( অবশু গ্রহণ করাটাই স্বাভাবিক, কারণ র্তারাও পুরাতন মুদ্র প্রভৃতি নৃত্যকলারভাষার উত্তরাধিকারী, এবং শাস্তিনিকেতনী নৃত্যে মুদ্রা আছে, যদিও সব মূত্র শাস্ত্রোক্ত হয়ত নয়)। লগ্নেীয়ের পদ্ধতির প্রধান কথা ‘পায়ের কাজ নয়—লোকে যাকে ‘পায়ের কাজ বলে সেটি তালবাটোয়ারার বোলের পুনরাবৃত্তি। সেটুকু চমকপ্রদ নিশ্চয়, কিন্তু যার লক্ষ্মেীয়ের নৃত্যকে নূতন বলে শ্রদ্ধা করেন, তারা পায়ে বায়াতবলা বাজানকেই মহৎ স্বষ্টি ভাবতে পারবেন না। কেবল তাই নয়, ভাও-বাংলানা’র অদ্ভূত কৃতিত্ব স্বীকার করেও লক্ষ্মেী-নৃত্যকলাপদ্ধতির নূতনত্বের অন্য দাবী পেশ করাই সঙ্গত। ভাও-বাংলান ভাবের এক প্রকার না-হয় দশ প্রকার ব্যাখ্য' কিংবা সমর্থন। কিন্তু তবুও ব্যাখ্যা ও সমর্থন নৃত্যের আশ্রয়দাতা সেই সঙ্গীতের পদটিরই। অর্থাৎ তখনও নৃত্য স্বাধীন হয় নি। আমার মতে উত্তর-ভারতের প্রচলিত নৃত্যের মূলকথাটি হ'ল নৰ্ত্তকের বিশেষতঃ রেখায়িত ঢেউগুলির সমঞ্জস সাধনের ইঙ্গিত। তৰু কিন্তু তার প্রেরণা সঙ্গীতের তালের। দেহ তখনও নিজের ভাবের তাগিদে রেখায়িত হচ্ছে না, সেই জন্য দেহজ কিংবা আত্মজ নৃত্যতরঙ্গের ছন্দের সঙ্গে সাজিতিক তাল মানের বিরোধ সম্ভব । সত্যসত্যই যে বিরোধ বাধে নিজে দেখেছি। পূৰ্ব্বকথিত রেখায়িত তরঙ্গ দক্ষিণী কিংবা বলী-নৃত্যের বিশিষ্ট আঙ্গিক নয়—অস্ততঃ ঐ প্রকার উন্নতি দক্ষিণে প্রত্যাশা করি না। দক্ষিণে পায়ের কাজ কিংবা ‘ভাও-বাতানা” সামান্য আছে, কিন্তু সে নৃত্যের ধৰ্ম্মই ভিন্ন অর্থাৎ অভিনয় । উদয়শঙ্কর যাকে শ্রেষ্ঠ শিল্পী বলেন র্তার, গোপীনাথের, ভালাঠোলের শিক্ষাপ্রাপ্ত দলের, বাল-সরস্বতী এবং আরও দু-তিন জন প্রথিতযশা নৰ্ত্তক-নর্তকীর নৃত্য দেখে মনে হয়েছে যে ও-অঞ্চলের নৃত্য এখনও অভিনয়ের সংজ্ঞায় পড়ে এবং সে-অভিনয় দেহের উপরিভাগের প্রতি অঙ্গে যেমন সূক্ষ্ম, ভাব-ব্যঞ্জনাও আর্টের দিক থেকে তেমনই স্থূল । উৎকৃষ্ট বলী-নৃত্যাভিনয় আমি দেখি নি, তবু যা দেখেছি তাতে মনে হয় যে সেটিও অভিনয়মূলক, যদিও বর্তমান বলী দেশের অভিনয়ের প্রকৃতি অন্ততঃ বর্তমান উত্তর-ভারতীয় অভিনয়ের প্রকৃতি থেকে স্বতন্ত্র। বলী ও দক্ষিণী নৃত্যের আদিক রেখার লীলা নয়, দৈহিক প্লেনের সমন্বয়সাধন। উত্তরভারতীয় নৰ্ত্তক যতই মঞ্চের উপর ঘুরে বেড়ান না কেন, একটি মুহূর্ভে তিনি তার দেহের যে-কোন একটি প্লেনেই থাকেন। র্তার ব্যতিরেক ক্ষণস্থায়ী, তার ভারসাম্য মাধ্যকর্ষণের রেখাঞ্জিত প্লেনেরই মধ্যে। তাই ‘পায়ের কাজ অর্থাৎ বোলের পুনরাবৃত্তি ঐ নৃত্যের চমক যোগায় না। ‘পায়ের কাজ একই প্লেনে উখান ও পতন । তাওব-স্বত্যের কিংবা দীপলক্ষ্মীর মূৰ্ত্তি যিনি দেখেছেন তিনিই দক্ষিণী নৃত্যের প্লেনভাঙার মৰ্ম্ম বুঝবেন । মণিপুরী নৃত্যের সঙ্গে আমাদের প্রায় সকলেরই পরিচয় যৎসামান্য। মণিপুর হয়ত বাংলার বাইরে পাৰ্ব্বত্য অঞ্চলে বলেই। তথাপি মণিপুরী নৃত্য যতটা দেখেছি তাতে তার ভব্যতা ও কবিত্ব স্বীকার করতে বাধ্য। তার সাজসজ্জ, সঙ্গীত এবং গতির মধ্যে যে সংযম আছে তার তুলনা আমি কোথাও পাই নি। নেহাৎ মোটামুটি বলা যায় দক্ষিণী ও বলী নৃত্য ভাস্কৰ্য্য, লক্ষ্মেীয়ের অর্থাৎ বাইজীর নৃত্য সঙ্গীত, এবং মণিপুরী নৃত্য কবিত্বধৰ্ম্মী। মণিপুরী নৃত্যের অন্য বিশেষত্ব তার সমবেত নৃত্যে। সাওতালী নৃত্যেও ঐ গুণটি বর্তমান কিন্তু তার গতিটাও সমবেত অর্থাৎ একই গতিতে অন্ততঃ একটি দল (পুরুষের কিংবা স্ত্রীর ) বাধা। মণিপুরীতে প্রত্যেকের গতি আছে, এবং সেই প্রত্যেকের গতি মিলে ছক তৈরি হচ্ছে, যেছকটি আবার নূতন ছকের সঙ্গে কখনও মিশে যাচ্ছে, কখনও বা তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মণিপুরী নাচ দেখলে আমার ক্যালিডস্কোপ কিংবা পাসিয়ান কাপেটের কথা মনে পড়ে। তার সমগ্রতার অনুভূতি বিশেষের মুখ চেয়ে থাকে না । - শাস্তিনিকেতনের নৃত্যের আঙ্গিক প্রথমে ছিল রেখাশিত —অবশু, তার মধ্যে রঙের খেলাও ছিল । তাকে চিত্রধর্মীও বলা যায়। মণিপুরের কাব্যনিষ্ঠ ভজতার সঙ্গে রবীক্সপ্রবর্তিত নৃত্যের যোগ নিতান্ত স্বাভাবিক। অন্যান্য রবীন্দ্রনাটকের অভিনয়-পদ্ধতির পক্ষে ঐ প্রকার অাজিকই যথেষ্ট। কিন্তু চিত্রাঙ্গদ নাটকটির প্রকৃতি সম্পূর্ণ বিভিন্ন। তার গল্পাংশ অপেক্ষাকৃত জটিল, তার মধ্যে বন্ধ আছে, পত্রিপাত্রীর সংখ্যাও বেশী অর্থাৎ চিত্রাঙ্গদার অভিনয়ের স্থযোগ বেণী ।