পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@Nー)● প্রবাসী sN○●へご পাত্রপাত্রী ভিন্ন অন্ত একটি গায়ক-গায়িকার দলকে রঙ্গমঞ্চের পিছনে কিংবা কোণে রাখলে, এবং তাদের সঙ্গীতকে অবদমিত করলে নাটকীয় গতিরক্ষার সুবিধা হয়। র্তারা হবেন পটভূমি, তাদের সঙ্গীত হবে ভূমিকা, এবং বিচ্ছিন্ন ব্যবহারের সুত্র। (কবি নিজেই রঙ্গমঞ্চে উপস্থিত থাকেন—স্বত্রধর হিসেবে। র্তার আবৃত্তিও ঐ রীতির চূড়ান্ত নির্দেশ। ) অবশু, ভূমিকাটুকু থাকলেই যথেষ্ট হ’ল না। কথাকলিতে সাঙ্গীতিক ভূমিকাটি স্থির—গল্পাংশ তাই প্রধান নটের (কিংবা নটীর ) অভিনয় ও সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে প্রকট হয়। মাত্র একটি অৰ্দ্ধ-উচ্চারিত একটানা স্বর (drone) থাকে ( তার অবশুক উত্থান পতন প্রভৃতি বিবর্তন আছে, কিন্তু যৎসামান্ত ) ৷ কথাকলি ( ও বলী নৃত্যেও ) গল্পাংশ রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবতের পরিচিত ঘটনা ব’লে শ্রোতাদের ব’লে দেবার প্রয়োজনষ্ট থাকে না। যেখানে পূৰ্ব্বপরিচয় সেখানে ঘটকালিটা উপরন্তু । অভিনেতা ও শ্রোতার মন পূৰ্ব্ব থেকেই সংযুক্ত। তখন ঐ একঘেয়ে স্বরই (দক্ষিণীদের ভাষায় ) ‘শ্রীতির’ কাজ করে । বলা বাহুল্য চিত্রাঙ্গদাঅৰ্জ্জুনের গল্পটি আমাদের জনসাধারণের স্থপরিচিত নয়। উদয়শঙ্করের নৃত্যাভিয়ে সঙ্গীতের ব্যবহার আর একটু ভিন্ন ধরণের, যদিও সেই ব্যবহারের জাতি দক্ষিণী। তার নৃত্যে আছে মোহন অভিব্যক্তি এবং তিমিরবরণ ভট্টাচাৰ্য্য প্রভৃতি র্তার দলের সঙ্গীতাচাৰ্য্যগণ যে সেই বিবর্তনশীল নৃত্যের উপযোগী সাঙ্গীতিক অভিব্যক্তি দেখাবেন সে আর বিচিত্র কি ? তথাপি, দুটি গতির মিল নেই, দুটির প্রকাশ সমান্তরাল রেখায় চলে। সঙ্গীত-নৃত্যের অপরূপ স্বষ্টি হয় না। হয় দুটির, সঙ্গীতের এবং নৃত্যের । নৃত্যের যখন অপরূপ স্বষ্টি হয় তখন নাটকীয় গতি নৃত্যের সাহায্যে সবল হয়ে ওঠে ; যখন নৃত্য শিথিল হয়, তখন নাটকীয় গতি আর থাকে না । ( সাধারণতঃ উদয়শঙ্করের ব্যক্তিগত কৃতিত্বে, র্তার প্রতিষ্ঠায়, র্তার প্রযোজনাশিল্পের জন্য এই দুৰ্ব্বলতাটুকু ধরা পড়ে ন— কিন্তু দুৰ্ব্বলতাটি তার পদ্ধতির অস্তর্নিহিত। ) যেখানে সঙ্গীত উৎকর্ষ লাভ করে, অত্যন্ত কম ক্ষেত্রে, সেখানে সঙ্গীত উদয়শঙ্করের নৃত্যের অনুকরণ করে। অবশু তারই নিজের ভাষায় অন্থকরণ, সেই জঙ্গ সমান্তরালতার উল্লেখ করেছি। ধরা যাক, উদয়শঙ্কর শিবের নৃত্যাভিনয় করছেন–শিবের সঙ্গে ভৈরোর একটা সংস্কারগত যোগ আছে—পিছন থেকে ভৈরো বেজে উঠল—উদয়শঙ্কর নৃত্য স্বরু করলেন—তার নানা রূপ ব্যক্ত করলেন–পিছনের কনসার্টে ভৈরোর খুনচৌধুন চলল। দুটিই ভাল লাগছে আমাদের, কিন্তু কান ও চোখকে পৃথক করা শ্রোতার অসাধ্য—ছেদ পড়ে গেল মনঃসংযোগে, সেই ফাকে দীর্ঘ হয়ে ঝুলে পড়ল অভিনয়ের সূত্রটি। “শিব-পাৰ্ব্বতীর দ্বন্দ্বে’ এই দোষটি বর্তমান ছিল। চিত্রাঙ্গদ নৃত্যনাট্যে সঙ্গীতের ব্যবহার’ অর্থাৎ সঙ্গীত ও নৃত্যের সম্বন্ধ পূৰ্ব্বপ্রকারের নয়, মিশ্রণের। সে মিশ্রণের অনুপাত যথার্থ ; কারণ সেখানে নৃত্য স্বাধীন, সঙ্গীতের ব্যবহারও তাই সশ্রদ্ধ। সেই জন্য সমগ্র স্বষ্টির দিক থেকে চিত্রাঙ্গদ নৃত্যনাট্য আরও বেশী সার্থক মনে হয়। এমন মুখ কেউ নেই যে উদয়শঙ্কর কিংবা তিমিরবরণের ব্যক্তিগত কৃতিত্বের সঙ্গে শাস্তিনিকেতনের যে-কোন ছাত্রছাত্রীর তুলনা সম্ভব মনে করে। তুলনা চলে উদয়শঙ্করের ধারণার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ধারণার। রবীন্দ্রনাথের ধারণা সৰ্ব্বতোমুখী, তাই তার স্বষ্টিকে কোন একটি উৎকৃষ্ট স্থাপত্য বলতে ইচ্ছা হয়—যেখানে মন্দিরের অঙ্গে পরিবেশের মিলন অজাঙ্গী, যার মধ্যকার ভাস্কৰ্য্য স্থাপত্যের অন্তরঙ্গ, যার দেওয়ালের চিত্র ভাস্কর্ঘ্যের অনুরূপ, যার পূজারী ও উপাসকের গঠন, আচার, ব্যবহার, গতি নিতান্তই হসদৃশ, যার নৃত্যগীত মন্দিরের ধৰ্ম্মাহুকুল। রবীন্দ্রনাথকে এক জন উচ্চশ্রেণীর স্থপতি বলতে ইচ্ছা হয়। সমগ্রতার দিক থেকে চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের আলোচনা করলাম। স্থলবিশেষে ক্রটি আছে—কিন্তু মূল সম্বন্ধে কোন ক্রটি লক্ষ্য করি নি। বিশেষের আলোচনা আমার সাধ্যাতীত। বিশ্লেষণের ফলে যদি সমন্বয়-উপলব্ধির ক্রটি ঘটে থাকে, তবে আমার ভাষাকেই যেন পাঠকবৃন্দ দোষী করেন ।