পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ অপরিবর্তনীয় gNలియో তার ওপর সকলের প্রসন্ন দৃষ্টি—স্বমন্ত্র স্বছ হাসলে। বললে, “তাই মনে হচ্ছে নাকি ?” পিঠ থাবড়ে দিয়ে নিপু হেসে বললে, “হ্যা রে হ্যা, তাই ত। আচ্ছ, স্বমন, এদিকে তাক ত, এদের সবাইকে চিনতে পারছিস ?” স্বমন্ত্র সেদিকে তাকাল, দেখল, ওরা বসে বসে হাসছে মৃদ্ধ চাপা হাসি। বঁ-দিকে ওই যে বেঁটে ফর্সা লোকটি তার দিকে চেয়ে চেয়ে গোফে তা দিচ্ছে, ওই ত হেমা ? স্কুলে ধারাল ছেলে ব’লে হেমাঙ্গের খ্যাতি ছিল। এখন কি করছে কে জানে ? একখানা অপরিচ্ছন্ন শাড়ী পরে, গিন্নিবাল্লির মত চেহারা, উনি কে ? স্বমন্ত্রের মনে ওদের যে চিত্র ছিল তা কি ক্রমে মুছে যাচ্ছে ? না, ওরাই পরিবর্তনের স্রোতে ভেসে ভেসে কোন দূরে গেছে যেখানে তার দৃষ্টি আজ ব্যাহত ? “অন্থকে চিনতে পারছ, স্বমনদা ?” বলে তরু নূতন ক’রে সকলের পরিচয় দেবার জন্তে এগিয়ে এল । “নিশ্চয়ই পেরেছি, কি বলছিস তরু ! তা আর পারি নি?” স্বমন্ত্র মিথ্যে বলে ফেলল ধরা পড়ার লজ্জায় । “কই, দেখাও দেখি, ভাই ।” বলে তরু স্বমন্ত্রের পাশে এসে দাড়াল । স্বমন্ত্ৰ যেন প্রথমটা দিশেহারা হয়ে গেল। একটি স্বল্পকেশা, শীর্ণ বিধবা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এসে হেসে ফেলল, “ছিঃ স্বমনদা, আমায় ভুলে গেলে ভাই ? বরাত আমার ” “সত্যি, ভুলি নি রে অঙ্ক, প্রথমটা বুঝতে পারছিলাম না ঠিক, তার পর- ওর দিকে চেয়ে চেয়ে স্বমন্ত্রের চোখে ভেসে উঠল অনুপমার কিশোরী মূৰ্ত্তিটি। সত্যি সে ভোলে নি একেবারে। পাঠশালার ছেলেমেয়েদের ওই যে ছিল সর্দারণী । গেছো মেয়ে বলত ওকে সবাই। একবার স্বমন্ত্রকে ও বেত খাওয়া থেকে বাচিয়ে দিয়েছিল । দেখতে খুব স্বন্দরী না হোক, ওর মুখে চোখে একটা জলজলে ভাব তখন ছিল—যেটা এখন নিবে গেছে সংসারের দুঃখ তাপে। কত কথাই মনে মনে স্বমন্ত্র ভাবছিল । ওদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা স্বরু হয়েছে ইতিমধ্যে। ওদের সঙ্গে মন খুলে সে আলাপ করতে পারে না । কেমন যেন একটা অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব। অঙ্গদার, সঙ্কীর্ণ মন তাঁর । ওরা ত বেশ লহজ, সরল ; সে কেন নিজেকে এমন গুটিয়ে নেয় ? এত দিন পরে গায়ে ওরা বাস ক’রে আসছে, গায়ের অন্তঃপ্রকৃতি যেন ওদের অস্থিমজীয় আশ্রয় নিয়েছে। বাইরের জগৎ ওদের কাছে হয়েছে বিলুপ্ত— ७rनब्र मूड८ङ डांझे ८ब्राभइनकांब्रौ यांश गाउँौब वंखि क्लांख চোখের আভাস ধরা পড়ে। ওদের দোষ কি তাতে ? ওদের যৌবন-চাঞ্চল্য স্তিমিত হয়ে গেছে, ওরা যেন জীবনের দুর্গম পথে আর এগোতে পাচ্ছে না। পরিবর্তন জগতের নিয়ম,—মুমন্ত্র ভাল করে আজ উপলব্ধি করছে। *s কত কথাই ওরা কয়ে চলেছে। তার জটিলতা থেকে তরুর একটি কথা মুক্তি পেয়ে স্বমন্ত্রের কানে বাজল । “দেবীর কি হ’ল, বল ত ! এল না যে বড় ? নিধুরামকে দিয়ে খবর পাঠালুম।” “দেবী ?”—অজ্ঞাতসারে স্বমন্ত্রের মুখ থেকে বেরিয়ে آنگاه নিপুর স্ত্রী তরু ওর অন্যমনস্ক ভাব দেখে খিল খিল করে হেসে উঠল। মাংসল মুখের স্থল হাসি ধীরে ধীরে সামূলে সে তার পর বললে, “বেশ, মুমনদা, কত কথাই আমরা বলাবলি করলাম, কিছু শোন নি ত? দেবী, দেবী, মনে নেই বুঝি ? হাসছ যে, বুঝেছি। হ্যা, দেবী এই গায়েই থাকে—ওই একটেরে । ওর স্বামী পাশের ঐ মালঞ্চ-গায়ের জমিদারী পেয়েছে, মামার বাড়ীর বিষয় । ওরা শহরেও যায় মাঝে মাঝে বেড়াতে। কেমন দুটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে, ভারী চঞ্চল আর সুন্দর। ওকে দেখতে তোমার ইচ্ছে হয় না, স্বমনদা । বিয়ের পর ও কত কান্নাই কাদল ! দেবযানীকে স্বমন্ত্র ভোলে নি, কোন দিন পারবেও না । এত কাছে এখানে থাকে ও, তবু দেখা হ’ল না। ওদের কথা চলেছে। স্বমন্ত্র মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছে ; হাসছে, মাথা নাড়ছে, যন্ত্রের মত সব শুনছে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে, ওদের কাছ থেকে অনেক দূরে সে চলে গেছে, অন্য জগতে, যে-জগতে আছে, একসঙ্গে বসন্তের লঘু বাতাস ও শরতের সোনালী আলো । একটা নাম যেন যাদুমন্ত্রে তাকে পুরনো দিনের সৌরভ এনে দিলে । দেবযানীদের বাড়ীটা ছিল তখন স্বচ্ছতোয় পিয়ালী নদীর ধারে । নদীটার পাশে পাশে যে রাঙা মাটির পথটা চলে গিয়েছে গায়ের স্কুলের দিকে, সেই দিক দিয়ে সুমন্ত্র বই হাতে চলছিল শরৎকালের এক প্রসন্ন প্রভাতে। বাড়ীর বাইরের দিকে একটা ফুলের বাগান। সেখানে ভিজে এলোচুলে কিশোরী দেবযানী পিয়ালীর স্বচ্ছ জলের দিকে চেয়ে আনমনাভাবে দাড়িয়ে ছিল। সেদিন তাকে দেখে স্বমন্ত্রের মনে হয়েছিল, মেয়েটি যেন পদ্মগন্ধি । সুৰ্য্যের সোনালী আলোয় সেদিন তার কুন্তলাল পালের মত ঝলমল করেছিল অপূৰ্ব্ব দীপ্তিতে।