পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88@ তার আগেও কুমন্ত্র তাঁকে কতবার দেখেছে, কত কথা বলেছে। কিন্তু ঐ এক পরম শুভক্ষণে ওকে অমন মুন্দর কেন দেখাল, তার কারণ স্বমন্ত্র খুজে পায় নি। ফুলের কুঁড়ির মত কি ক’রে এক রাত্রে মেয়ের ফুটে ওঠে, এটা তার কাছে একটা চিরন্তন রহস্য। দেবযানীর বাবা স্বরথবাবু শেষ-বয়সে র্তার মাতৃহারা কন্যাটিকে নিয়ে এই গায়ের শাস্তস্নিগ্ধ অঞ্চলে বাস করবার জন্যে এসেছিলেন শহর থেকে । বাড়ীটা তাই করেছিলেন গায়ের এক সীমান্তে, লোকালয় থেকে একটু দরে । ভদ্রলোক বড়ষ্ট অমায়িক-প্রকৃতি, কাজেকৰ্ম্মে সবাইকে তিনি বাড়ীতে ডাক দিতেন । সেদিন তার বাড়ীতে কি একটা উৎসব বা ক্রিয়াকাণ্ড । বহু লোকের সমাগম হয়েছে। গায়ের সকলেষ্ট ত এসেছেন নিমস্থিত হযে, শহর থেকেও বহু ভদ্রলোকের আগমন হয়েছে । সুমঙ্গও এসেছিল কলেজের গ্রীষ্মের ছুটি উপলক্ষে । নিমন্ত্রণ রাখতে এসে দেখল কৰ্ম্মবাড়ীর কাজের ব্যবস্ত বা শৃঙ্খলা নেষ্ট—তগণই নিজে কাজে নামল যেন ঘরেরই লোক । ভদ্রলোকদের আদর-অভ্যর্থনা, তাদের আহারের ব্যবস্থা, সব কাজেই ও গেল এগিয়ে । যে কোন সমস্ত আসে, স্বরথবাবু ইাকেন, স্বমন : অগাধ বিশ্বাস তার ওর ওপর । কাজকৰ্ম্ম চকল একটু রাত্রে । কৰ্ম্ম-অস্তে ক্লান্ত শরীরে দোতলার পোলা ছাদে একটু বাতাস পাবার জন্যে স্বমস্ত বারানা পেরিয়ে যাচ্ছিল : হঠাৎ চোখে পড়ল, বারান্দার রেলিঙে বুকে পড়ে কারা দু-জন হাসছে আর গল্প করছে, দেবধানী, আর স্থরথবাবুর কোন আত্মীয় এক যুবক । স্বমন সেখানে আর দাঁড়াল না,-ক্রতপদে চলে গেল ছাদের দিকে, যেখান থেকে পিয়ালী নদীর জ'লে বাতাসটা চোখেমুখে এসে লাগে। উদাস চোগে, ভারাক্রান্ত মনে দাড়িয়ে রইল কতক ক্ষণ সেখানে সে জানে না । কামিনীফুলের ঝাড় থেকে তীব্র একটা গন্ধ এসে তাকে যেন আচ্ছন্ন ক'রে দিল । “স্বমনদী, তোমার খাওয়া হয় নি ত ? খাবে এস।”— দেবযানী এসে ডাকল । স্বমন্ত্র মিৰ্ব্বাক, নিরুত্তর । পিছনে যে দেবযানী এসে কখন দাড়িয়েছে তা সে জানতে পারে নি প্রথম, জানতেও যখন পারল তখন চোখ ফেরাল না সেদিকে। অহেতুক দুর্জয় অভিমানে তার বুক যেন তোলপাড় করছিল। “স্বমনদা, আমার ওপর রাগ করেছ ?” ধীরে ধীরে দেবযানী এসে তার হাত ধরল। শিউরে উঠে বোবার মত চাইল স্বমন্ত্র ওর দিকে নিম্পলক অর্থহীন চোখে ।

  • কেন ? কি করেছি আমি ? বল না, বলবে না ?” দেবযানীর ঠোঁট শুকিয়ে গেল, চোখ দুটো অশ্রীর আভাসে বাপলা হয়ে এল ।

প্রবাসী SN9gvs

  • कि इरग्ररछ ? झग्न नि ७ किकूझे ॥ ७क शंक হাওয়ায় এসে দাড়ালুম এই ত সবে ।”

“বুঝেছি, চল, খেতে হবে না বুঝি ?--কি বোকা তুমি স্বমনদ, একটুতেই রাগ কর”—স্বল্প পরিহাসে চটুল, বুদ্ধির আভায় দীপ্ত একটা কটাক্ষ পাত ক'রে দেবযানী স্বমন্ত্রের হাত ধরে টানল—স্বমন্ত্র তার দিকে চেয়ে একটু হেসে ফেলল। হাসির হাওয়ায় তার মুখের কালো মেঘ গেল সরে।-- তার পর কয়েকটা দিন কেটে গেছে । আর এক দিনের কথা । সেদিন বিকেলের দিকে বেশ এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। অপরাহ্লের মুদু রক্তাভ আলোয় পৃথিবীর বুকে যেন ক্ষণিক স্বপ্নলোকের স্বষ্টি হয়েছে। মেঘ আকাশের কোণে কোণে জমে আছে তখনও । বর্ষণসম্ভাবনায় মন্থর মেঘের ওপরে সেই আলো এসে পড়াতে আকাশের মুখটাকে যেন মৃত পাণ্ডুর ব’লে বোধ হচ্ছে। আলোটা ক্রমে ক্রমে অতি ধীরে আকাশের গায়ে গেল মিলিয়ে। আবার ঝুপঝাপ বৃষ্টি স্বরু হ’ল। বারানার ধারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেবযানী আকাশের ভাবটা লক্ষ } করছিল । স্বমন্ত্র এল ভিজে ভিজে । “ভিজেচ্চ ত খুব, আচ্ছ ছেলে যা হোক, ভিজে আসতে কে বলেছিল ? শোন এদিকে !” এগিয়ে এসে দেবযানী হাত দিয়ে স্বমন্ত্রের জামাটা পরীক্ষা করল – “ছেড়ে ফেল এগুলো ।” “না, না, ভিজি নি মোটেই, ব্যস্ত হয়ে না ; আর ভিজলেই বা---কাকাবাবু কোথায় ?” “ঘরে বসে আলো জেলে পড়ছেন।” “চল ওঁর সঙ্গে দেখা করে আসি, আমি ত কাল যাচ্ছি ” “ষ্ট্য, যাই, দাড়াও না একটু এগানে ৷” দু-জনে নীরবে সেখানে দাড়িয়ে রইল। আকাশ জুড়ে ঝমঝম ক'রে বৃষ্টি নামল । রাস্তাঘাট বুঝি ডুবে যায়। অন্ধকারও চার দিক ছেয়ে ফেলছে । বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছুই ঠাহর করা যায় না। কোথাও একটু আলোর রেখামাত্র নেই। কতক্ষণ কেটে গেল, কেউ কথা কইল না। দেবযানী শুন গুন ক’রে গাইতে স্বরু করল— কোথায় আলো, কোথায় ওয়ে আলে বিরহানলে স্বালে রে তারে জালো--- নদীর বুকে আকাশট কি আজ ভেঙে পড়বে ? খালি ঝুপঝাপ ঝুপঝাপ—অবিরাম জলধারার পতনধ্বনি, সেই সঙ্গে ভেকের কলরব। অদুর মন্দির থেকে কাসর-বন্টার শৰা ক্ষীণ হয়ে কানে বাজছিল। “কাল যাব, দিবু ”—স্বমন্ত্র প্রথম কথা কইল । “কত দিন থাকবে সেখানে ?”