পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন Ե চা-পান ও আহারাদির পালা শেষ হইলে আমাদের যাত্ররম্ভের আয়োজন। গৃহস্বামী ছিলেন না, স্বামিনী তিন-চার সের সন্তু দিতে চাহিলে হুমতি-প্রজ্ঞ আমাকে তাহ বাধিয় লইতে বলিলেন। র্তাহার ধারণা ছিল না যে আমার ঐ হাল্কা বোঝা বহিতেই অবস্থা কিরূপ কাহিল, স্বতরাং তাহার বোঝা ভারী হওয়ায় আমারটাও সেইরূপ দাড় করাইতে চাহিলেন। সত্ত্বর আশা শেষ পৰ্যন্ত ছাড়িতেই হইল, এবং তাহাতে তিনি চটিলেনও বিলক্ষণ, কিন্তু উপায় কি ? যাহা হউক, রওয়ানা হওয়া গেল এবং কিছুক্ষণ পরে চী-কোরের নিকট পৌছান গেল। চা-কোর রাজবংশ এক কালে নিশ্চয়ই প্রবল প্রভাবশালী ছিল, নিকটস্থ পৰ্ব্বতের উপরে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের প্রস্তরপ্রাচীর এবং দুর্গের ভগ্নাবশেষ তাহার সাক্ষীরূপে এখনও দণ্ডায়মান। কেল্লায় পৌছিবার পুৰ্ব্বে ভাঙা মাটির দেওয়াল দেখা গেল, শুনিলাম আগে এইখানে চীন সৈন্তাবাস ছিল । তখন এই দিকে কড়া পাহারা ছিল, বিন আজ্ঞাপত্রে কেহই সীমা পার হইতে পারিত না । চা-কোর গ্রামের কয়েকটি গৃহও তাহার অবস্থার ক্রমাবনতির পরিচয় দেয়। এখানে স্বমতি-প্রজ্ঞের পরিচিত ব্যক্তি ত ঘরে ছিলেন না, তবে অনেক বলী-কওয়ার পর আমরা থাকিবার অনুমতি পাইলাম। সন্ধ্যার পর অল্প অল্প শিলাবৃষ্টির পর সজোরে বর্ষণ আরম্ভ হইল, দেখিতে দেখিতে বাহিরের অঙ্গন জলে ভরিয়া গেল এবং মাটির ছাদ দিয়া যেখানে-সেখানে জল পড়িতে আরম্ভ করিল। সন্ধ্যার সময় বৃদ্ধ গৃহস্বামিনী ফিরিল। স্বমতি-প্রজ্ঞ তাহাকে চিনিতেন এবং আমার উপর চটিয়! থাকায় তাহার নিকট আমার নিন্দাবাদ স্বরু করিলেন । আমি তাহাতে কিছু মনে করিলাম না, কেন না আমি জানিতাম তাহার মনটা ছিল সাদা। এগারই জুন প্রাতে আমরা আবার চলিতে লাগিলাম এবং কিছু দূর পূর্বমুখে যাইবার পর ফুণ্ডনদী পার হইলাম। নদীর স্রোত বিস্তৃত এবং তাহাতে জলও ছিল জঙ্ঘাপ্রমাণ গভীর। জল এতই শীতল যে মনে হইতেছিল পা বুঝি কাটিয়া যায়। অতিকষ্টে নদী পার হইয়া মেষপালকদের আডিডায় গিয়া চা-পান করিলাম। আগেই বলিয়াছি এদিকে আমাকে বোঝা বহিয়া চলিতে হইতেছিল, উপরন্তু অন্ত খাদ্যের অভাবে সত্ত্ব, খাওয়ায়—সত্ততে আমার স্বভাবতই রুচি নাই—শরীরও দুৰ্ব্বল ছিল। পথে আর একবার চা খাইলাম। এখন আমি কেবল মনের জোরে পথ চলিতেছিলাম, পথে কয়েকটি ছোট গিরিসঙ্কট { লা ) ছিল, দ্বিতীয়টি পার হইতে আমার আর শক্তি রহিল না। কতকগুলি অন্য লোক জামাদের সঙ্গে সঙ্গে লঙ্কোর হইতে শে-কর জোঙে যাইতেছিল, তাহদের একজন আমার বোঝা লওয়াতে আমি আবার চলিতে লাগিলাম। আমার খালি হাতে চলিবার সামর্থ্যের অভাব ছিল না। পাহাড় হইতে নামিয়া একটি ছোট নদী পার হইয়া শুনিলাম সামনের ছোট পাহাড়ের ওপারেই শে-কর জোঙ, । পথে কিছুক্ষণ এক জায়গায় বিশ্রাম করিয়া পুনৰ্ব্বার চলিতে লাগিলাম। বেলা তিন-চারটার সময় শে-কর পৌছিলাম। লঙ্কোরের লোকজন শে-কত্ত্ব গ্রামে যেখানে থাকিবার ব্যবস্থা করিল, আমরাও সেখানেই রহিলাম। শে-কন্তু গুম্বায় স্বমতি-প্রজ্ঞের পরিচিত এক ভিক্ষু ছিলেন, কিন্তু হুমতি-প্রজ্ঞ সেখানে যাইলেন না। অামার পা কাটিয়া গিয়াছিল, মৃতরাং বোঝা ঘাড়ে করিয়া চলিবার সামর্থ্য ছিল না, সেইজন্স টণী-লুন্তো পৰ্যন্ত ঘোড়া ভাড়ার চেষ্টা করিতেছিলাম। সেই চেষ্টায় এগারই হইতে চৌম্বই জুনের প্রিহর পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়াও কিছু ব্যবস্থা করা গেল না। প্রথম দিনই আমরা শে-কন্তু মঠের অবতারী লামার নিবাস দেখিতে গিয়াছিলাম। মন্দিরটি স্বন্দর যুক্তিরাজি ও চিত্রপটে