পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থসজ্জিত। লামা গৃহে ছিলেন না, তাহার গৃহ রাজপ্রাসাদ বলিলেই হয়। প্রাসাদের সম্মুখে সফেদার বাগান, এবং বাগান ফুলগাছের টবে সাজানো । তেরই জুন গুম্বা দেখিতে গেলাম। গুম্বা পাহাড়ের নিম্ন হইতে শিখর পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট মঠ, তাহাতে প্রায় পাঁচ-ছয় শত ভিক্ষু বাস করেন। ইহার মন্দির বড় বড় স্বর্ণ-রৌপ্যময় দীপের আলোকে উদ্ভাসিত। এখানকার প্রধান পণ্ডিতের ( কু-শোক খেম্বো ) সঙ্গে—যদিও স্বমতি-প্রজ্ঞের ইচ্ছা ছিল না—দেখা করিতে গেলাম, তিনি চীন সীমাস্তের থাম প্রদেশের লোক এবং লাসার সেরা গুম্বায় শিক্ষিত। প্রথমে বৌদ্ধ দর্শন সম্বন্ধে কিছু কথাবাৰ্ত্তার পর তন্ত্র ও বিনয় সম্বন্ধে আলাপ হইল, আমি বলিলাম, “যেখানে বিনয় মদ্যপাম, জীবহিংসা, স্ত্রী-সংসর্গ আদি বর্জন করে, সেখানে তন্ত্রমতে ঐ সকল বিনা সিদ্ধিলাভ অসম্ভব। এইরূপ বিবাদী মত কিরূপে একত্রে চলিতে পারে ?” লামা বলিলেন, “ইহার অর্থ, ভিন্ন অবস্থার লোকের জন্ত ভিন্ন ব্যবস্থা । যেমন রোগীর জন্ত বৈদ্য অনেক খাদ্যকে কুপথ্য বলেন, কিন্তু রোগ উপশমের পর ঐ লোকই সেই খাদ্য ভোজনে উপকার পায়, তেমনি বিনয় সাধারণ লোকের জন্ত ব্যবস্থা এবং তন্ত্র (বজ্রযান ) তাহাদের জন্ত যাহারা অগ্রসর হইয়াছেন।” পণ্ডিত মহাশয় আমাদের যাত্রার বাধার ব্যাপার গুনিয়া লাসা-যাত্রী এক ব্যাপারীকে ডাকাইয়া আমাদিগকে তাহার সঙ্গে লইতে অনুরোধ করিলেন এবং আমাদের মোটঘাট লইয়া গুম্বায় চলিয়া আসিতে বলিলেন। পরদিন সেই ব্যবস্থানুসারে আমরা গুম্বায় আসিলে পর গুনিলাম সে সওদাগর চলিয়া গিয়াছে। নিকটস্থ এক খচ্চরওয়ালার কাছে গিয়া ভাড়ার চেষ্টা করিলাম, কিন্তু কোনও কিছু ঠিক হইল না, শেবে স্বমতি-প্রজ্ঞ লঙ্কোরের এক ভিক্ষুকে (ঢাবা ) বিনপয়সায় লাসা তীর্থ দর্শনের লোভ দেখাইয়া আমাদের সঙ্গে যাইতে রাজী করাইলেন। ১৪ই জুন দ্বিপ্রহরে ভিক্ষুর স্বন্ধে আমার বোঝা চাপাইয়া ধাত্রী স্থর করিলাম। পথ একটি নদী পার হইয়া বামদিকে নিয়াভিমুখী হইয়৷ অন্ত এক নদীর দক্ষিণ পাশ্ব দিয়া চলিল। এই উপত্যক বেশ প্রশস্ত, নদীর কিনারে ছোট ছোট বৃক্ষ, এখানে সেখানে ক্ষেতে বিঘং প্রমাণ যব ও গমের চারায় জলের সেচ– এই সব দেখিতে দেখিতে চারটা নাগাদ যে-রা গ্রামে পৌঁছান গেল। এখানকার এক ধনী গৃহস্বামীকে মুমতি-প্রজ্ঞ চিনিতেন, তাহার ঘর গ্রামের বাহিরে ছিল। সেখানে গেলে দেখা গেল গৃহের চারি কোণে চারটি বিশাল দেহ কালো কুকুর মোটা শিকলে বাধা রহিয়াছে। দূর হইতে ডাকাডাকি করিতে একজন লোক বাহিরে আসিয়া দ্বারস্থ কুকুরটিকে তাহার কাপড়ে ঢাকিয়া চাপিয়া ধরিলে আমাদের ভিতরে যাওয়া সম্ভব হইল। ভিতরে গিয়া লঙ্কোরের সেই লোকটি কাদিতে লাগিল, “আমার মায়ের আমি এক ছেলে, এই ভয়ানক কুকুর আমায় খেয়ে ফেললে মা মা খেয়ে মরে যাবে।” তাকে স্বমতি-প্রজ্ঞ ধমকাইতে লাগিলেন, কিন্তু আমি বুঝাইবার চেষ্টা বৃথা দেখিয়া তাহাকে যাইতে দিতে বলিলাম। বেলা অনেক দূর অগ্রসর, সুতরাং সে তাড়াতাড়ি নিজের জিনিষপত্র গুছাইয়া প্রস্থান করিল। আমরা গৃহস্বামীর সঙ্গে ঘরের ভিতরের অংশে গিয়া চা-পানের উদ্যোগ করিবার সময় দেখিলাম যে সে স্বমতি-প্রজ্ঞের ছয়-সাত সের সত্ত্বর থলিটিও লইয়া গিয়াছে। স্বমতি-প্রজ্ঞ তৎক্ষণাৎ সে লোকের পিছনে ছুটিবার উপক্রম করিতেছেন দেখিয়া আমি বলিলাম, *ছেড়ে দিন, যা গিয়েছে গিয়েছে ।" স্থমতি-প্রজ্ঞ বলিলেন “তুমি সেদিন সত্ত নিতে দাও নি, আজ এটার সম্বন্ধেও আবার ঐ রকম কথাবার্তা বলছ ” আমি বলিলাম, “সে গিয়েছে প্রায় ঘণ্টাখানেক, তাকে ধরতে ধরতে সে শে-কর পৌঁছে যাবে। আপনি সেখানে পৌছাবার আগেই রাত্রি হয়ে যাবে।” গৃহস্বামী আমাদের বাদাম্ববাদের কারণ শুনিয়া পাচ-ছয় সের সন্তু আনিয়া ধরিলেন, আমি তাহা দেখিয়া বলিলাম “এই নিন, যতটা গিয়েছে ততটা এসে গেল।” সৰু, দিবার পর তিনি একটু ঠাগু হইলেন । সেই ধরে এক দরজী কাপড় সেলাই করিতেছিল, জিজ্ঞাসায় বুঝিলাম যে শে-করের থেম্বো যে গ্রামের মোড়লের নামে ঘোড়া ঠিক করার জন্ত চিঠি দিয়াছেন, এ সেই গ্রামের লোক । গৃহস্বামীর কথায় বুঝিলাম ঘোড়া বা মুটিয়া কোনটারই ব্যবস্থা এখানে হওয়া সম্ভব নহে, স্বতরাং শেষে আমি স্থির করিলাম সেই দিনই ঐ দরজীর সহিত তাহার গ্রামে যাইব । স্বধ্যান্তের মুখে আমরা