পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●リ --જી রওয়ানা হইলাম, দরজী আগ্রহের সহিত আমার মোট নিজে তুলিয়া লইল। কিছু রাত্রি হইলে গন্তব্য গ্রামে পৌছিলাম এবং দরজী মুখিয়ার (মোড়ল ) ঘর দেখাইয়া দিলে তাহাকে চিঠি দিলাম। সে চিঠি পড়িয়া বলিল, “এখন ত ঘোড়া নাই। কাল আপনার সঙ্গে লোক দিয়া লো-লো গ্রামে পাঠাইয় দিব, সেখানে ঘোড়া পাওয়া যাবে।” পরদিন অতি-প্রত্যুষে লোকের ঘাড়ে মোট দিয়া রওয়ান হইয়া আটটায় লো-লো পৌছিলাম। বিশ-পাঁচশ ঘরের গ্রাম, কিন্তু ঘরগুলি সবই কাঠের অভাবে নিতান্ত ছোট। ঐ রকম ছোট এবটি ঘরে আমাদের লইয়া মুখিয়ার লোক গৃহস্বামীকে মোড়লের অনুরোধ শুনাইল । চা-পান ইত্যাদির পর সে বলিল, “ঘোড়া পাওয়া যাইবে এবং লাসেজোঙ পৰ্য্যন্ত ভাড়া আঠার টঙ্ক ৷” এখানকার হিসাবে ভাড়া অধিক হইলেও আমি দিতে স্বীকার করায় সে তখনই ঘোড়া চরাইবার প্রাস্তরে চলিল। তিনটার সময় ফিরিয়া আসিয়া সে বলিল যে এখন ল্যসেতে বড় গরম, সেইজন্য ঘোড়ার মালিক অতদূর না গিয়া “চাস-লা” পার করিয়া এক দিনের পথের এদিকে পৰ্য্যন্ত যাইবে । আমি তাহার ভাড়া এক কথায় স্বীকার করিয়াছিলাম, কিন্তু এরূপ কথাবাৰ্ত্তার ধরণ দেখিয়া ঘোড়া লইতে রাজী হইলাম না। লোকটি প্রথমে সৈনিক ছিল । তিব্বতে ছোট ভাই পৃথক বিবাহ করিতে পারে না, এ তাহা করায় অন্ত ভাইয়েরা তাহাকে ঘর হইতে তাড়াইয়া দেওয়ায় সে নূতন একটি ছোট ঘর বাধিয়া গৃহস্থালী করিতেছে । আমার কাজে ছুটাছুটি করার দরুণ তাহাকে কিছু পয়সা দিতে সে খুবই সস্তুষ্ট হইল । ঐ সময়ে খবর পাইলাম যে শে-কর হইতে লাসে-জোঙ যাত্রী একদল ঋটি গাধা লইয়া এখানে আসিয়াছে। স্বমতি-প্রজ্ঞ দরদপ্তর করিয়া পাচ টঙ্কায় (প্রায় আট আন) আমাদের মালপত্র লাসে-জোঙ পৰ্য্যস্ত পৌছাইবার ভাড়া ঠিক করিলেন। গাধাওয়ালা সওয়ারীর জন্য একটি বড় গাধা ভাড়া দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু খালি হাতে ইটিতে আমার কোনও ভয় ছিল না, স্বতরাং তাহা লইলাম না। রাত্রে আমরা ছুইজন মালপত্র লইয়া গাধাওয়ালার অাডডায় চলিয়া গেলাম। ১৬ই জুন রাত্রি থাকিতেই গাধার দল চলিতে লাগিল । co, * * * * গাধাতে লাসার জন্ত নেপালী চাউল বোঝাই ছিল, সঙ্গে-সঙ্গে নেপালী সওদাগরের রক্ষীরা দুই হাত লম্বা ওলোয়ার বাধিয়া চলিয়াছিল। আমরা চড়াই পথে চলিয়াছিলাম। বেলা দশটায় খাওয়া-দাওয়ার জন্ত থামা হইল এবং সে সময় গাধাগুলিকে চরিবার জন্ত ছাড়িয়া দেওয়া হইল। স্কুটের আগুন জালিয়া রন্ধনের ব্যবস্থা চলিল, আমি ততক্ষণ চারিদিকে তুষার-দেশের মুষিকের দৌড়াদৌড়ি দেখিতে লাগিলাম। এই জীবগুলি আমাদের দেশের ক্ষেতের মুষিকের সমান বড়, কিন্তু ইহাদের লেজ নাই ও শরীর অতি নরম লোমে আবৃত। প্রাতরাশের পর গাধাগুলিকে ভিজান মটর কচলাইয়া খাইতে দেওয়া হইল এবং তাহার পর আবার চলা স্বরু হইল। আমার হাত খালি, সুতরাং ষোল হাজার ফুট উচ্চেও চলিতে কষ্ট ছিল না, এবং সেইজন্য আমি সৰ্ব্বপ্রথমে পাহাড়ের উপরে উঠিলাম। আমরা সেই প্রথম নদীর পাড়ে পাড়ে চলিয়াছি, এখানে নদী পৰ্ব্বত ছেদ করিয়া গিয়াছে, তবে নদীর পাশে পথ নাই বলিয়া আমাদের পর্বতবাহুর উপরে উঠতে হইল । ইহার পর উৎরাই আরম্ভ হইল, পাহাড়ের গায়ে এখানে সেখানে চমরীর দল চরিতেছে দেখিলাম। আরও নীচে পথ নদীর পাটে নামিল, নদীর ওপারে হরিণের পাল জল খাইতেছিল, আমাদের দেখিয়াই ছুটিয়া পাহাড়ের উপরে পলাইল। কিছু দূর পরে স্নেটের পাহাড় দেখা গেল যাহার নীচের নরম মাটিতে কেরোসিন তেলের গন্ধ পাইলাম। এইরূপে চারটার সময় বকৃচা গ্রামে পৌছান গেল। গ্রাম বলিতে সাত-আট ঘর এবং ঘর বলিতে পাথরের স্তুপ মাত্র। গ্রামের লোকের জীবিকার উপায় ভেড়া ছাগল ও চমরী, কেননা এত উচ্চে শস্ত জন্মায় না। স্বমতি-প্রজ্ঞের সঙ্গে কিছু চা ছিল, তাহ একটি ঘরে গিয়া প্রস্তুত করাইয়া খানিকট আমরা পান করিলাম, বাকিটা সঙ্গীদের জন্যও রাখা হইল। কিছুক্ষণ পরে গাধার দলও পৌছিল। ১৭ই জুন রাত্রি থাকিতেই আমরা বকুচ ছাড়িয়া চলিলাম। প্রথমে দলের সর্দার ঘণ্টা বাজাইয়া যাইতেছিল, তাহার পিছনে অন্ত সকলে । উপরে পাহাড় ক্রমেই ছোট ও অধিত্যক চওড়া হইতেছিল। পথের পাশে কোথাও কোথাও হিমশিলার স্তুপ পড়িয়াছিল, স্থানে স্থানে ভেড়া