পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চমরীর গোঠ ছিল, সেখানে কাল কাল তাম্বুর ভিতর হইতে ধোয়া উঠিতেছিল। দশটার সময় আমরা ছোট ছোট পাহাড়ে-ঘেরা বিস্তীর্ণ উপত্যকায় পৌছিলাম সেখানে ঐক্কপ কাল তাম্বু অনেক দেখা গেল। ঐ স্থানের বাম দিকে কিছু দূরে লৌহের প্রস্তরপূর্ণ পাহাড় ছিল। কিছুক্ষণ পরে আমরা চ। পানের জন্য বসিলাম, চায়ের পেয়ালায় নিজ নিজ থলির ভিতর হইতে মাখন ও সত্ত্ব দিয়া পান ভোজনের ব্যাপার এক সঙ্গেই শেষ হইল। এইবার উপত্যক ছাড়িয়া পাহাড় চড়াইয়ের পালা আরম্ভ হইল, স্বমতি-প্রজ্ঞ পিছাইয়া গেলেন, আমি সমানে আগে চলিলাম। যদিও চাস-লা আঠার হাজার ফুট উচ্চে স্থিত, আমার উপরের ঘাটে পৌছাইতে কষ্ট হয় নাই, ঘাট পার হইয়া নীচে’ আসিয়া তবে গুইয়া বিশ্রাম করিলাম। অনেক ক্ষণ পরে স্বমতি-প্রজ্ঞ আসিয়া পৌছিলেন, গাধার দল আরও পিছনে পড়িয়াছিল। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর চলিতে আরম্ভ করিলাম। চাস-লার উৎরাই কঠিন এবং কয়েক মাইল লম্বী, চলিতে চলিতে দেখিলাম কোন কোন পাহাড়ের নীচে বরফ জমিয়া আছে, আশপাশের সবুজ ঘাসে চমরীর দল চরিতেছে। বেলা দুইটার সময় আমরা জিগ-চেব গ্রামে পৌছাইলাম, গাধার পাল আরও প্রায় আড়াই ঘণ্টা বাদে আসিল । এই গ্রামের প্রধান পেশা যাত্রীদের থাকিবার স্থান ইত্যাদি দেওয়া, সঙ্গে অল্প-বিস্তুর পশুপালনও আছে। রাত্রে এখানেই বাস করা গেল । ১৮ই জুন ভোর রাত্রে আবার রওয়ানা হইলাম । এবার উৎরাই যে কঠিন শুধু তাহা নহে, উৎরাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে গরমও বাড়িতে লাগিল। প্রভাতের আলোর সঙ্গে পথের পাশে জঙলী-গোলাপের ঝোপ দেখা গেল। সাতটা নাগাদ চা পান করিয়া আর এক ঘণ্টা চলিবার পর ব্ৰহ্মপুত্রের সৈকত দেখা যাইতে লাগিল। দশটার সময় ব্ৰহ্মপুত্রের পাড়ে পৌছাইলাম, নদের বেলাভূমি অতি বিস্তৃত, স্বানে স্থানে বৃক্ষপূৰ্ণ বাগান রহিয়াছে এবং বাকী অন্য প্রায় সকল স্থানেই শস্তের ক্ষেত ও বৃক্ষ লাগান যাইতে পারে কিন্তু বিস্তর জমি পতিত রহিয়াছে। একটার সময় আমাদের দল খ-চেং গ্রামে উপস্থিত হইল। ইহা গাধাওয়ালার গ্রাম, স্বতরাং আজ তাহারা ওখানে থাকাই স্থির করিল। &o-Yo স্বমতি-প্রজ্ঞ ও আমি এক বৃদ্ধার ঘরে আশ্রয় লইলাম । চ-পানের পর স্বমতি-প্রজ্ঞ গ্রামে বেড়াইবার জন্ত ঘরের অঙ্গনের দরজার বাহিরে যাইবামাত্র, চারটা বৃহৎ কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হইলেন। আমি চীৎকার ও কুকুরের ডাক শুনিয়া দেওয়ালের কাছে ছুটিয়া গিয়া দেখিলাম ছাতাহাতে স্বমতি-প্রজ্ঞ একেবারে কুকুরের মুখে পড়িয়া আছেন। আমি কুকুর তাড়াইবার জন্ত পাথর ছুড়িতে কুকুরের দল সরোষে সেই পাথরের টুকরার পিছনে ছুটিতে লাগিল। স্বমতি-প্রজ্ঞ সেই অবসরে ঘরে ফিরিয়া আসিবার স্বযোগ পাইলেন । সেই গ্রামে থাকিতে তিনি আর বাহিরে যাইবার নাম করিলেন না। ১৯শে জুন মালপত্র বাধিয়া গাধাওয়ালার জিন্ম করিয়া আমরা লাসে-জোঙ চলিলাম। এই নদীতটে গ্রাম অনেক এবং সেচকার্ধ্যের জন্য বড় বড় নালীও আছে। এইরূপ এক নালী পার হইয়া আমরা একটি ছোট নদীর পারে উপস্থিত হইলাম, স্বমতি-প্রজ্ঞ বলিলেন উহা স-ক্যাগুম্বা হইতে প্রবাহিত হইতেছে। বেলা নয়-দশটার সময় লাসে পৌছিয়া আমরা প্রথমে গুস্বায় যাইলাম। পথে সকলেই আমায় লদার্থী বলায় আমিও এখন নিজেকে লদার্থী বলিতাম। গুম্বায় চা-পানের পর আমি নদীর ধারে, গাধার দল যেখানে আসিবে সেখানে, যাইবার প্রস্তাব করায় স্বমন্তি-প্রজ্ঞ বলিলেন “এখন এখানেষ্ট অপেক্ষা করি, পরে যাইয়া মালপত্র আনিব।” তাহার ইচ্ছা কিছুক্ষণ এখানে থাকা। আমার মন যাইতে উৎসুক, স্বতরাং অনেক কথায় বুঝিলাম “ক” (চামড়ার নৌকা) শীগচী চলিয়া গিয়াছে, ফিরিতে দুইএক দিন লাগিবে। অনেক পীড়াপীড়ির পর স্বমতি-প্রজ্ঞ ঘাটে চলিলেন ; সেখানে দেখিলাম দুইজন সওদাগর মালপত্র লইয়া কা-র প্রতীক্ষায় আছেন, তাহারাও বলিলেন নৌকা আসিতে দুই-তিন দিন লাগিবে। গুম্বায় কয়েক জায়গায় কুকুর ছাড়া আছে দেখিয়া আমি সেখানে থাকিতে চাহিলাম ন, কিন্তু স্বমতি-প্রজ্ঞ সেখানেই থাকিবার আগ্রহ দেখাইলেন। শেষে স্থির হইল আমি ঐ সওদাগরদের সঙ্গে ব্ৰহ্মপুত্রের কিনারায় থাকিব এবং স্বমতি-প্রজ্ঞ থাকিবেন গুম্বায়। লাসে-জোঙ হইতে শীগচী পৰ্য্যন্ত ব্ৰহ্মপুত্রে চামড়ার