পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

HOA ও অধ্যাপকের প্রায়ই ধুতি পরিয়া স্কুল কলেজে আসিতেন না, পাজামা এবং চাপকানচোগা বা কোট পরিয়া আসিতেন । কৃষ্ণকুমার বাবু এক প্রকার কোট পরিতেন যাহা সম্পূর্ণ স্বরুচিসঙ্গত। তিনি ধাৰ্ম্মিক লোক ছিলেন । ধাৰ্ম্মিকতা সম্বন্ধে এই এক প্রকার ধারণা আছে, যে, ধাৰ্শ্বিক মানুষের দেহ কাপড়চোপড় চুল দাড়ি প্রভৃতির পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি থাকিবে না, বরং যে যত অপরিচ্ছন্ন সে তত ধাৰ্ম্মিক। কৃষ্ণকুমার বাবু সে-রকমের ধাৰ্ম্মিক ছিলেন না । তাহার বেশে পরিচ্ছন্নতা ছিল, কিন্তু বিলাসবিভ্রম বিন্দুমাত্রও ছিল না। তাহার ধৰ্ম্ম কেবল মতের ধৰ্ম্ম ছিল না । তাহা ছিল গভীর এবং তাহ তাহার সমুদয় চিন্তা বাক্য ও কাৰ্য্যকে নিয়মিত করিত, সমগ্র জীবনকে অল্পপ্রাণিত করিত। এই সত্যনিষ্ঠ, কৰ্ত্তব্যপবায়ণ, দৃঢ়চিত্ত, নিৰ্ভীক পুরুষের সংস্পর্শে আসিয়া বহু ছাত্র এবং অনেক সঙ্গী ও সহকৰ্ম্মী উপকৃত হইয়াছেন। ধৰ্ম্মকে তিনি জীবনে সকলের উপরে স্থান দিতেন—মতে দিতেন, আচরণেও দিতেন । তিনি আযেীবন সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সহিত যুক্ত ছিলেন, তাহার অন্যতম আচাৰ্য্য ও নেতা এবং মৃত্যুকালে তাহার সভাপতি ছিলেন । ধৰ্ম্মমতের ভিন্নতার জন্য কেহ তাহার বিবাগভাজন হইত না । দেশের পক্ষে ও সমাজের পক্ষে যাহা অনিষ্টকর বলিয়া তিনি মনে করিতেন, কেহ এরূপ কোন কথা বলিলে, বহি লিখিলে বা কাজ করিলে তিনি প্রকাশ্নভাবে তাহার নিন্দা করিতেন। অপ্রসিদ্ধ বা প্রসিদ্ধ, নিজ সম্প্রদায়ের লোক বা অন্ত সম্প্রদায়ের লোক, অপরিচিত বা পরিচিত, কাহারও মুখাপেক্ষা করিতেন না। এরূপ ব্যবহার দ্বারা বিরাগভাজন হইবার ভয় তাহার ছিল না । কোন মানুষের সম্বন্ধে একবার তাহার ভাল ধারণা জন্মিলে তাহ টলিত না, তাহ টলান দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। রাজনৈতিক সামাজিক ও অন্তবিধ মত সম্বন্ধেও তাহার এই প্রকার দৃঢ় স্থিতিশীলতা ছিল । মত গঠন অবশু তিনি ভাবিয়া-চিন্তিয়াই করিতেন। চুয়ায় বৎসর পূৰ্ব্বে তিনি পরলোকগত দ্বারকানাথ গাজুলী ও কালীশঙ্কর শুকুল এবং অধ্যাপক হেরম্বচন্দ্র মৈত্র মহাশয়দিগের সহযোগিতায় “সঞ্জীবনী" স্থাপন করেন, এবং এই প্রৰণসী SN9gvరి দীর্ঘ কাল তাহ সম্পাদন করিয়া আসিতেছেন । “সঞ্জীবনীর কৃতিত্ব নানা বিষয়ে। তাহ আজকালকার যুবকদের এবং অনেক প্রৌঢ়েরও জানা না থাকিতে পারে। বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে এবং বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ হইতে উৎপন্ন বিদেশী বর্জনের ও স্বদেশী গ্রহণের সপক্ষে আন্দোলনে কৃষ্ণকুমার বাবু অন্যতম প্রধান কৰ্ম্মী ও নেতা ছিলেন। এই আন্দোলন তিনি অসাধারণ কশ্মিষ্ঠত উদ্যোগিতা বাগ্মিতা ও সাহসের সহিত চালাইয়াছিলেন এবং এই জন্তই অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রভৃতি অন্ত কয়েক জনের সহিত তিনি বিনা বিচারে নির্বাসিত হন । এই আন্দোলনে “সঞ্জীবনী” তাহার প্রধান মুখপত্র ছিল। যে গবষ্মেন্ট বিনা বিচারে তাহাব নির্দোষ স্বামীকে নিৰ্ব্বাসিত করিয়াছিল তাহার নিকট হইতে তাহাব সাধবী পত্নী কোন সাহায্য গ্রহণ করেন নাহ। উচ্চপদস্থ রাজপুরুষদের দ্বাবা বহু বিলম্বে র্তাহাকে নির্বাসিত করার ভ্রম স্বীকৃত হইয়াছিল । আসামের চা-বাগানসকলে চুক্তিবদ্ধ কুলিদেব উপর সেকালে বড় অত্যাচার হঠত, বহু কুলি-নারীর সতীত্ব নষ্ট হইত। এই সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে “সঞ্জীবনী” দীর্ঘকাল আন্দোলন করিয়াছিলেন । এই কায্যে রামকুমার বিদ্বারs, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী প্রভৃতি “সঞ্জীবনীর” প্রধান সহায় ছিলেন । আফিঙের দ্বারা দেশের খুব অনিষ্ট হইয়াছে, এবং এখনও হইতেছে। “সঞ্জীবণী” ইহার বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চালাইয়াছিলেন। অনেকটা তাহার ফল আফিং কমিশন নিযুক্ত হয় এবং কৃষ্ণকুমার বাৰু তাহাতে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন ও অন্ত প্রকারেও কমিশনের সাহায্য করিয়াছিলেন। রেলে নারীষাত্রীদের উপর অত্যাচার এখন ষে একেবারেই হয় না, তাহা নহে। আগে কিন্তু আরও বেশী হইত। “সঞ্জীবনী” এই প্রকার অত্যাচার দমনের অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন। তাহার কিছু স্বফলও হইয়াছিল । আগে ইংরেজ ও অন্ত ইউরোপীয় এবং ফিরিঙ্গীদের হাতে দেশী লোকদের অপমান, গ্রহার ও কখন কখন স্বত্যু এখনকার চেয়ে বেশী হইত। ইহার বিরুদ্ধেও “সঞ্জীবনী* বরাবর লড়িয়াছেন। দেশী লোকদের এই প্রবার দুৰ্গতি