পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যাঙ্কের কথা ঐঅনাথগোপাল সেন আর্থিক জগতে ব্যাঙ্কের একাধিপত্য বর্তমান যুগে আর্থিক জগতের ভারকেন্দ্র প্রত্যেক দেশের বিশাল ব্যাঙ্কগুলিকে আশ্রয় করিয়া রহিয়াছে । ব্যক্তিগত হিসাবে কানেগি, রথসচাইল্ড, রকৃফেলার, ফোর্ড বা নিজাম যতই ধনী হউন না কেন, বর্তমান দুনিয়ার প্রকৃত অধিপতি এই ব্যাঙ্কগুলিই। কারণ বিশাল সাম্রাজ্যের রাজাধিরাজের সম্পদও ইহাদের নিকট আজ তুচ্ছ। পরের ধনে পোদ্ধারী করিয়া ইহারাই দুনিয়াটাকে আজ মুঠার মধ্যে রাখিয়া পরিচালনা করিতেছে। অর্থ পদার্থটিকে আমরা সকলেই ভালরূপে চিনি ও জানি। কিন্তু ইহা কোথা হইতে কি ভাবে আসে এবং কোথা দিয়া কি ভাবে সরিয়া পড়ে, তাহা আমাদের অনেকেরই বুদ্ধির অগম্য। আমাদের অতিবৃত্বে সঞ্চিত অর্থপুটুলি ভাটার টানে অকস্মাৎ আমাদের হাতছাড়া হইয়া অদৃপ্ত হইয়া যায় ; আবার কোথা হইতে জোয়ার আসিয়া আমাদের শূন্ত তহবিলকে ভরিয়া দেয়। বিনকারণে এক দিন আমাদের যে কোম্পানীর কাগজ, শেয়ার ও জমিজমার মূল্য কমিয় অর্ধেক হইয়া গিয়াছিল, তাহাই আবার এক দিন ফাপিয়া উঠিয়া দ্বিগুণ হইয়া দাড়ায়। আশা ও নিরাশার মধ্য দিয়া আমরা ইহার ফলমাত্রই শুধু ভোগ করি ; কিন্তু কারণ কিছুই ঠাহর করিতে পারি না। অর্থের এই রহস্যময় স্বষ্টি, স্থিতি ও লয়ের নিগূঢ় তত্ত্ব যদি আমরা জানিতে চাই, বর্তমান জগতের ব্যবসবাণিজ্য, আন্তর্জাতিক কাজ-কারবারের জটিল ও কুটিল পথে যদি প্রবেশলাভ করিতে চাই, তাহা হইলে আমাদিগকে প্রথমে আধুনিক ব্যান্ধের স্বরূপ ভাল করিয়া জানিতে ও বুঝিতে হইবে। রহস্যময় আর্থিক জগতের দ্বারোদঘাটনের ইহাই সহজ পন্থা। ব্যাঙ্কের বর্তমান প্রভাব-প্রতিপত্তি এক দিনে হয় নাই। উনবিংশ শতাব্দীর বাণিজ্য-বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী সৰ্ব্ব বিষয়ে যেমন শনৈ: শনৈঃ অগ্রসর হইয়াছে, প্রয়োজনের তাগিদে ব্যাঙ্কগুলিও তেমনই ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করিয়াছে। ইহাদের শৈশব অবস্থার কথা প্রথমতঃ আলোচনা করা যাকৃ। আমাদের কাজ-কারবার যখন প্রধানতঃ ইংলণ্ডের সহিত এবং আর্থিক জগতে ইংলণ্ডের আধিপত্যই যখন প্রবল, তখন সেই দেশের ইতিহাস আলোচনা করাই বিধেয় । ব্যাঙ্কের উৎপত্তি ও নোটের স্বষ্টি তিন শত বৎসর পূৰ্ব্বে ইংলণ্ডের স্বর্ণকারগণ প্রথমতঃ নিজেদের মূল্যবান গহনাপত্র ও হীর-জহরতের সহিত অপরের ধনসম্পদও গচ্ছিত রাখিতে স্বরু করে। দস্থ্যতস্করের হাত হইতে নিরাপদ হইবার জন্ত ইহাদিগকে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করিতেই হইত। সেই জন্তই জনসাধারণও তাঁহাদের ধনরত্ব নিরাপদে রাখিবার জন্ত এই সব স্বর্ণকারের আশ্রয় গ্রহণ করিত। আমাদের দেশে অনেক স্থানে এইরূপ প্রথা এখনও প্রচলিত অাছে। ধনী জমিদার, মহাজন, সাহুকারের নিকটে আজ পর্যাপ্ত অনেকে নিজেদের ধনরত্ব গচ্ছিত রাখিয়া থাকে। ইংরেজ স্বর্ণকার দেখিতে পাইল যে, প্রয়োজনের সময়ে অনেকেই তাহার নিকট টাকা ধার করিতে আসে ; অথচ যাহার অর্থ বা স্বর্ণরৌপ্য গচ্ছিত রাখে, নিতান্ত প্রয়োজন না হইলে তাহারা উহা ফেরত চাহে না। এইরূপ সুযোগ দেখিয় স্বর্ণকারগণ তাঁহাদের নিকট গচ্ছিত অর্থ অপরকে স্বদ লইয়া ধার দিতে আরম্ভ করে। যাহারা টাকা আমানত রাখিত, প্রথম অবস্থায় তাহার কোনরূপ স্থদ পাইত না। ক্রমে এই সব জামানতী টাকার জন্ত অল্প হারে স্থদ দেওয়া আরম্ভ হয়। ইহাই ব্যাঙ্কের প্রথম স্বত্রপাত। সময়ে ইহাদের প্রতি জনসাধারণের আম্বা বাড়িলে, ইহার নগদ অর্থের পরিবর্তে চাহিবামাত্র দিবার অঙ্গীকারে