পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SR প্রবাসী SN93N9 চাও ত । আমার এই দক্ষিণের বারানায় জালাদিনের প্রদীপ আছে, দু-দিন থাকলে দেখতে পেতে।” জধা কিছু বলিল না। স্বৰ্য্যাস্তের শেষ আলোটুকু মিলাইয় অন্ধকারের পূর্ব স্বচনা দেখা দিল। সোনালী মেঘ ক্ৰমে ক্রোধে কালো হইয়া কেশর ফুলাইয়া উঠিতেছে দেখিয় আসন্ন বৃষ্টির সম্ভাবনায় স্বধা বাড়ী যাইবার জন্ত ব্যস্ত হইয়া উঠিল। বলিল, “ঝড় বৃষ্টি এসে পড়লে মাকে বড় ছুটোছুটি করতে হবে, আমি আলি ভাই আজ ।” হৈমন্তীর স্বাস্থ্যহীনতায় ব্যথিত ও তাহার মনের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হইয়া স্বধী যখন বাড়ী ফিরিল তখন বাড়ী নীরব। চক্সকান্ত নূতন একজন জার্শ্বান চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছেন, যদি তাহাকে দেখাইলে মহামায়ার কিছু উপকার হয়। শিৰু মাঠে মোহনবাগানের খেলা দেখার পর তাহার টিউটরের বাড়ীতে পড়িতে গিয়াছে। বাড়ীতে খোকন ছাড়া মহামায়ার আর কোনও অভিভাবক নাই বলিয়া বামুনদি বাসায় যাইতে পায় নাই। স্বধার পায়ের শব্দ পাইয়াই সে চীৎকার করিয়া উঠিল, “আমি ঘাই ভাল মানুষের মেয়ে, তাই আমারই আদেষ্টে যত দুর্ভোগ। ননীর মাছ-ঘটি জল তুলে জার ঘরে দ্ব-ঘা ঝাটা পিটিয়ে কোমর ছুলিয়ে চলে গেল, আর আমি ছিটির রায় সেরেও এই গুমোট ঘরে বসে আছি । কি করি বল, মা’কে ত আর একলা ফেলে যেতে পারি না ।” স্বধা যেন লজ্জিত হইয় তাহাকেও কৈফিয়ৎ দিয়া বলিল, “আজ হ’ল ব'লে কি রোজই তোমার দেরী হবে ? আজ আমি বড় আটকা পড়ে গিয়াছিলাম কিনা । আচ্ছা আর একটুও দেরী হবে না। তুমি এখন যাও।” বামুনদির কণ্ঠঝঙ্কার শুনিয়া মহামায় স্বধা আসিয়াছে বুঝিয়া সিড়ির মুখে অগ্রসর হইয়া আসিয়া উপর হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “ও স্বধ, উপরে এসে দেখে যা, তোর পিসি তোর জন্তে কি শাড়ী পাঠিয়েছে। তুই বড় মেয়ে, সংসারের গিল্লি, মা তোর খোড়, তোর জন্তে কিছু করতে পারে না, উল্টে তোরই সেবা নেয়। কিন্তু পিসি সেই ( পাড়াগ থেকেও ঠিক বছর বছর কাপড় পাঠায়, তার কখনও ভুল হয় না।” মহামায় তাহার সেই ছোট ঘরের তক্তাতেই আবার দেয়াল খরিয়া ধরিয়া গিয়া বসিলেন। তক্তার উপর হিসাবের খেরো-মোড়া খাত, ছোট একটা পানের ডিবা, ও সংসারখরচের ক্যাস বাঙ্গ। স্বধা উপরে আসিয়া দেখিল, মা’র কোলের উপর গোলাপী রঙের একখানা জরির পাড়ের শাড়ী। পিসিমা পাড়াগায়ে বসিয়াও ত সুন্দর জিনিৰ সংগ্ৰহ করিয়াছেন। মহামায় বলিলেন, “কাল রথযাত্রার মেলাতে ঠাকুরবি স্বগান্ধকে শহরে পাঠিয়েছিলেন নিশ্চয়। ব্যাপারীরা এই সময় কাপড়চোপড় বাসন কিছু কিছু আনে। ঠাকুরবি আর কিছু না কিনে টাকা কণ্টা তোর জন্যেই খরচ করে বসে আছেন। কাপড়খানা পরে একবার আসিস এ-ঘরে ।” স্বধা কাপড়খানা হাতে লইয়া পাশের ঘরে চলিয়া গেল। সামান্ত পাঁচ-ছ টাকার কাপড়, কিন্তু স্বধার কাছে তাহাই অমূল্য। চিরকালই সে সাদাসিধা কাপড় পরে, জরির পাড়ের শাড়ী তাহার বয়সে এই সে প্রথম পাইল। কাপড়খান সযত্নে খুলিয়া সন্তৰ্পণে পরিয়া কি মনে করিয়া কপালে একটি সিলুটিপ পরিবার জন্য সে আয়নার কাছে গেল। টিপট পরিয়া ইচ্ছা করিল আয়নার ভিতর নিজের মুখের ছায়াটা একটু ভাল করিয়া চাহিয়া দেখে। ছায়ার দিকে তাকাইয়া সে নিজেই ভাবিয়া বিক্ষিত হইল যে ইতিপূৰ্ব্বে এরূপ ইচ্ছা তাহার বিশেষ কখনও হয় নাই কেন । তাহার বয়সে মেয়েরা, এমন কি ছেলেরাও নিজেদের অল্পবিস্তর যা সৌন্দর্ঘ্যের পুঁজি আছে, তাহ ষোল আন হিসাব করিয়া রাখে। কিন্তু সে কেন এমন অচেতন উদাসীন r হয়ত বিধাতা তাহাকে শৈশব হইতেই ঐখানে বঞ্চিত করিয়াছিলেন বলিয়া ওকথা সে বেশী ভাবে নাই । হৈমন্তী তাহাকে হঠাৎ সজাগ করিয়া দিয়াছে । তখন রাত্রি হইয়াছে। এক পশলা বৃষ্টির পর জলভারমুক্ত মেঘগুলি যেন ক্লান্ত হইয়া দিগন্তের কোলে ঢলিয়া পড়িয়াছে। জলকণাধৌত সপ্তমীর চাদের স্নিগ্ধ আলো স্বধার গোলাপী-শাড়ী জড়ানো স্থঠাম দেহের উপর আসিয়া পড়িয়াছে। তাহার নিটোল স্বাস্থ্যপূর্ণ দীর্ঘ দেহযটর উপরের স্বকুমার মুখখানির ছায় তাহার নিজের চোখেই অকস্মাৎ ভারি স্থদের লাগিল। বাড়ীতে ছেলেবেলা হইতে প্রায় সকলের কাছেই সে নাম পাইয়াছে কালো মেয়ে ।