পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী T SesN9 স্বধা ক্ষুণ্ণ হইত বটে, কিন্তু বিস্মিত হইয়া দেখিত, তাহারও মন আজ আর নয়ানজোড়ের ধানের ক্ষেতের ভিতর নাই। কলিকাতার বাধানে রাজপথের ধারে হৈমন্তীদের বারান্দায় হৈমন্তীকে ঘিরিয়াই তাহার মনটি ঘুরিয়া বেড়াইত। শীতের সন্ধ্যা সকাল সকাল কালো হইয়া নামিলে পিসিমা যখন পশ্চিমদিকের দরজা-জানালাগুলা ভেজাইয় একলা-ঘরের বহুদিন-সঞ্চিত দুঃখের কথা বলিতে বসিতেন এবং নিজের বুড়ো হাড় কখানার জন্ত একটুখানি বিশ্রাম ভিক্ষা করিতেন, শুধু তখনই স্বধার মনে হইত, এমন করিয়া পিসিমাকে একলা ফেলিয়া সকলে চলিয়া না গেলেই ভাল হইত। মৃগাঙ্কদাদা বাহিরে বাহিরে ধান চাল আর খাজানা আদায় করিয়া বেড়ায়, পিসিমা তাহাই মাপেন আর মরাইয়ে তোলেন। যদি জুধা এখানে থাকিত তাহ হইলে পিসিমার জীবনস্বাত্রার ধারায় আর-একটুখানি সরসতা ও আর-একটুখানি বৈচিত্র্য হয়ত দেখা যাইত। কিন্তু হায়, তাহদের আজ সকলেরই জীবনের মোড় ফিরিয়া গিয়াছে, তাহাকে আর পূৰ্ব্বস্থানে ফিরাইয় আনা যাইবে না। একলা ধান চাল মাপিয়াই পিসিমার শেষ কয়ট। দিন কাটানো ছাড়া গতি নাই। কতকটা যেন মায়া বাড়াইবার ভয়েই স্কুধা এবার ছুটি শেষ হইবার আগেই কলিকাতায় পলাইয়া আসিয়াছে। নহিলে কোথা হইতে একটা টাটু, ঘোড়া জুটাইয়া শিকে বনে বনে ছুটিয়া বেড়াইবার খেলায় মৃগাঙ্ক-দাদা বেশ মাতাইয়া তুলিয়াছিল। বহুকাল পরে স্বরধুনী রুগ্ন বোন মহামায়াকে দেখিতে আসিয়াছিলেন বলিয়া তাহার ভরসাতেই খোকাকে কলিকাতায় রাখিয়া সুধা পিসিমার কাছে যাইতে পারিয়ছিল। না হইলে মা ও খোকাকে ফেলিয়া একদিনের জন্তও তাহার কোথাও যাইবার উপায় নাই । এই একটি চিররুগ্ন মা ও একটি শিশু ভাই যেন তাহার দুই পায়ের বেড়ি। তাহারই উপর তাহাদের সম্পূর্ণ নির্ভর। তাই তাহাদের জন্ত তাহার এই বন্দীদশায় ছিল স্থধার আনন্দ ও গৌরব। স্বরধুনীকে স্বধা খুবই ভালবাসিত, কিন্তু তাহার কাছে মামার বাড়ীর গল্প শুনিবার আশায় বাধা পড়িলে আর পিসিমার কাছে যাওয়া হয় না। স্থতরাং এই বিচ্ছেদের ত্যাগটুকু তাহাকে স্বীকার করিতেই হইয়াছিল। ফিরিয়া যখন আসিল তার পরদিনই স্বরধুনীও দেশে ফিরিয়া গেলেন। একটা মাত্র দিনের দেখাশুনা তাহাতেও স্বরধুনী স্বধার সঙ্গে বেশী ছেলেমানুষী গল্প করিলেন না। হাসিয়া দুই-তিন বার বলিলেন, “ফেটের কোলে স্বধা এবার ভাগরটি হয়েছে, মায়া এবার চন্দরকে সজাগ করে দিল, নইলে পণ্ডিতমাহুষের কি আর হস হবে ?” মহামায়া বলিলেন, "উনি বলেন পড়াশুনো সাজ নী হ’লে বিয়ে দেবেন না।” স্বরধুনী বলিলেন, “স্বামীই মেয়েমানুষের জপতপ ধ্যান ধারণা, এই পড়াশুনোতেই যদি ভালছেলে পছন্দ করে, তবে আর কার জন্তে বেশী পড়াশুনো করবে ? ও কি আর আপিস আদালত করতে যাবে?” হৈমবতীও আসিবার সময় স্বধাকে বলিয়াছিলেন বটে, “লেখাপড়া ত খুব করাচ্ছে তোমার বাপ, কিন্তু যেমন এদিকে করাবে, ওদিকেও সেই মত হিসেব ক'রে না জানতে পারলে যে মান থাকবে না, সে সব কি হাঁস আছে r আর ত কচিটি নেই, এবার এসব কথাও ত ভাবতে হবে ?” স্বধা যে বড় হইয়াছে, মালি পিসি সকলের মুখেই এখন সেই কথা। পিসিমা ছসিয়ার মানুষ, তিনি আবার স্বধাকে কত বিষয়ে সাবধান করিয়া দিয়াছেন । “তোর মা রোগ মানুষ, ঘর থেকে ত বেরোয় না, বাইরে যেতে আসতে আর যার তার সঙ্গে হট হট, ক'রে বেড়াবি না। বাপের সঙ্গে যাবি, শিবুকেও সঙ্গে নিস। পুরুষ ছেলের সঙ্গে বেশী মেলমেশা করিস না, তাদের সঙ্গে এক আসনেও কখখনো বসবি না।” স্বধার ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিশেষ নাই। তাহাদের পরিবারের সকলের বন্ধু স্বধীক্স-বাবুই এক এ-বাড়ীতে আসাযাওয়া করেন, তাহার সঙ্গে তাহাজের সকলেরই বেশ ভাব । অঙ্ক কেহ সমবয়স্ক বন্ধু তাহার থাকিলে জাপতি ছিল না, কারণ স্ত্রীসমাজে পুরুষেরা যে এমন অপাঙক্তেয় স্থধার তাহা ইতিপূৰ্ব্বে জানা ছিল না। পিসিমার কাছে এবার সে শিখিয়াছে ষে বড় হইলে পুরুষজাতিকে সৰ্ব্বদা সাত হাত তফাতে রাখিয়া চলিতে হয়। এমন কি সৰ্ব্বক্ষেত্রে সর্বঘটে সকলকে মুখ দেখিতেও দেওয়া উচিত নয়। কয়েকটা মাত্র