পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

– মাম্ব— তোকে নূতন জরি পেড়ে নীলাম্বর দিয়েছেন, ঐখানাই পরে যাস। জামাট ঘরে তৈরি হলেও সিদ্ধের ত বটে, ওই পরলেই বেশ চলবে ।” উঠতে বসিতে বড় হইয়াছে শুনিতে আর স্বধীর ভাল লাগে না । মানুষের শৈশব কি এতই ক্ষণস্থায়ী ? আর বড়-হওয়া কি মামুষের একটা অপরাধ ? বড় হইলে সকল বিষয়ে এত ভয়ে ভয়ে আটঘাট বাধিয়া চলিতে হইবে কেন ? আরও আশ্চয্য যে মৃগাঙ্ক-দাদা যে স্বধার চেয়ে আট বছরের বড় তাহাকে কেহ কোনদিন বড় হওয়ার জন্য পচিশ রকম নিয়ম পালন করিতে বলে না । মণ্ডলগিল্লির ছেলেরা কলেজে পড়ে, তাহারাও বড় হওয়ার কোন দায়িত্ব বহুল করে এমন ত তাছাদের মায়ের কথায় মনে হয় না। তবে স্বধা অকস্মাৎ দুইতিন বছরে সকলকে ডিঙাইয়া এত বড় কি করিয়া হইয়া গেল ? শৈশবের অৰ্দ্ধমৃপ্তি হইতে জীবনে একটা নুতন জাগরণের মধ্যে যে সে বাড়িয়া উঠিতেছে ইহা স্বধা নিজে একেবারেই অনুভব করে নাই, এমন নহে ৷ উষার উন্মেষ যেমন অন্ধকারের বুকের ভিতর হইতেই কোনও আকস্মিক চাঞ্চল্যেব হষ্টি না করিয়া এক এক পরদ করিয়া দেখা দিতে থাকে, তাহার দেহমনও তেমনই পাপড়ির পর পাপড়ি বিকশিত হইয়া উঠিতেছিল । সে বিকাশ ভয়ের নয়, আনন্দের । সেখানে সতর্ক প্রহরীর মত কেহ চীংকার করিয়ু বলে মাই, ‘সাবধান বড় হইয়াছ । সেখানে কে যেন শেষ রাত্রের মধুর স্বপ্নের ভিতর গান গাহিয় তাহার ঘুম ভাঙাইতেছে, “দেখ, এই পৃথিবীর " দিকে চেয়ে দেখ, কাল যার কোলে অকস্মাৎ এসে পড়েছ মনে হয়েছিল, আজ অনুভব করছ না কি তোমার দেহমনের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে তুমি তার সঙ্গে জন্ম জন্ম বাধা ?” কার এ বাণী মৃধা বুঝিত না, কিন্তু আনন্দ-শিহরণের সহিত সে অনুভব কfরত স্বষ্টির সহিত জন্ম জন্মান্তরের তাহার অচ্ছেদ্য বন্ধন । সবটা এখনও তাহার চোথের উপর ভাসিয়া উঠে নাই, কিন্তু প্রতি দিনই যেন ধরিত্রীমাত একটু একটু করিয়া তাহাকে কোলের কাছে টানিয়া লইয়া রহস্যমধুর কণ্ঠে কানে কানে বলিয়৷ দিতেন, “আমার বিশ্ব-স্থষ্টির শতদলে তুমি একটি পাপড়ি, তোমাকে বাদ দিলে তা অসম্পূর্ণ হবে। এ স্বষ্টি-লীলায় তোমার পালা এল বলে, তার জন্য প্রস্তুত হও।” وحاسسهجة:6 অলৰ-জোক্সা BSగి মৃধা বুঝিত না, জানিত না, কিন্তু আপনা হইতেই তাহার মনে বিশ্বাস দৃঢ় হইয় উঠতেছিল, জগতে একটা কিছু মহৎ উদ্দেশ্বে সে আসিয়াছে। তাহাকে তাহার জন্য পূজারিণীর মত নিষ্ঠার সহিত প্রতীক্ষা করিতে হইবে। হয়ত লোকের চক্ষে স্বষ্টিতে তাহার পালা অতি সামান্তই মনে হইবে, কিন্তু তবু নিজের কাছে তাহাকে সেইটুকু নিখুৎ করিয়াই গড়িয়া তুলিতে হইবে। জীবনে যে-সকল দুঃখ-বেদন সে পায় নাই, যে আনন্দও সে জানে নাই, গানের স্বরে কবিতার ছন্দে তাহী যখন কানের কাছে বাজিয়া উঠিত, আনন্দ ও বেদনার গভীর অন্তভূতিতে বুকের তারগুলা কঁাপিয়া উঠিত, মনে হইত, “এ বেদনার তীব্র আঘাত, এ স্বগের নিবিড় স্পর্শ আমার যে বহুপরিচিত। কবে মনে নাই, কিন্তু ইহাকে আমি একদিন বুকের ভিতর করিয়৷ বহন করিয়াছি।” স্বধা পৃথিবীর রূপরসগন্ধকে যেন দুষ্ট হাতে আপনার বলিয়া কাছে টানিয়া লঙ্গতে লাগিল। ইহাকে সে দিন দিন যত চিনিতেছে ততক্ট আরও চিনিতে চায় । মনে হয়, বহু-পুরাতন পরিচয়ের উপর শৈশবের স্বযুপ্তি একটা আবরণ টানিয়া দিয়াছিল, আজ তাঙ্গ ধীরে ধীরে সরিয়া যাইতেছে । নিজের সম্বন্ধে যে ঔদাসীন্য তাহার ছিল তাহা যেন ক্রমে দূরে চলিয়া যাইতেছে। নিজেকেও সে আগের চেয়ে বেশী ভালবাসিতে শিথিয়াছে। তাই প্রসাধনেও তাহার নজর এগন আগের চেয়ে একটুখানি বেশী হইয়াছে । সখ নামক অজান জিনিষটা তাহার মনের ভিতর ধীরে ধীরে মাথা তুলিতে আরম্ভ করিয়াছে। পৃথিবীর সর্বত্র যে রূপের সৌন্দর্য্যের স্বযম, তাঙ্গর মাঝখানে সে একটা শ্রীহীন আবর্জনার মত মানুষের চক্ষুপীড়া ঘটাইতে চাহে না । তাহার জন্য সৌন্দর্য্যের রাগিণীতে যেন হঠাৎ বেম্বর না বাজিয় উঠে । অবশু, হৈমন্ত্রীর সমান পৰ্য্যায়ে সে উঠিতে রাজি নয়। ময়ূরের পেখমে যে বর্ণচ্ছটা মানায়, ঘুঘু পাখীর স্বল্প পালকে কি তাহ খোলে ? হৈমন্তীর মত নির্দোষ নিখুৎ উজ্জল সাজসজ্জা তাহার অঙ্গে বাড়াবাড়ি বলিয় মনে হইবে । ততটুকু সাজপোষাকই তাহার পক্ষে ভাল যাহাতে লোকে তাহাকে অস্তুত কিছু একটা না মনে করে। কিন্তু লোকে আসিয়া তাহার সাজপোষাক তারিফ করিবে