পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ নারাজ হয়। সরিষার তেল বাহির করিতে এক্সপেলার চলিল না। এখন উহা কলের ঘানির সহিত প্রতিষোগিতা ছাড়িয়া মিত্রতা করিয়াছে। কলের ঘানিতে ষে খইল বাহির হয় উহাতে অতি সামান্ত তেল থাকে। এক্সপেলার এই খইলটা চিবাইয়া শেষ-তেলটুকু বাহির করিয়া ছাড়ে। এক মণ খইল হইতে এক সের তেল বাহির হয়। কেহ কেহ কল-বানির কাজ দ্রুত শেষ করার জঙ্ক কতকটা বেশী তেল খহলে রাখিয়া দেয় ও পরে একসূপেলারে চাপিয়া বাহির করিয়া ঐ তেল-ঘানির তেলের সহিত মিশাইয়া দেয়। কিন্তু তেল-ব্যবসায়ে এক্সপেলারের ব্যবহার আর একটা নুতন অসাধুতা আনিয়াছে। এক্সপেলারের খইল দেখা মাত্রই চেনা যায়। উহার মূল্য কলের ঘানির খইল হইতেও কম, উহা লোকে গরুকে খাওয়াহবার জন্ত লয় না, সারের জন্তই উহা ব্যবহৃত হয় । কিন্তু কলওয়ালাকে উহা হইতে ঘানির খইলের দামই তুলিতে হইবে। সে ঐ কাঠের মত খইল ডিসিন্টিগ্রেটারে গুড়াইয়া লয় এবং সেই গুড়ার সহিত কতকটা ঘানির খইল ও গাদ মিশাইয়া জলের ছিটা দিয়া পুনরায় ঘানিতে চাপিয়া বাহির করে ও কলের ঘানির খইল বলিয়া বিক্রয় করে। দেখা যাইতেছে কলের প্রতিযোগিতায় যে-ভাবে ঘানি মরিতেছে সে-ভাবে তাহার মরা অবশুম্ভাবী নয়। তথাপি যে মরিতেছে তাহার কারণ, পূর্বেই বলিয়াছি, কলের ভেজাল দেওয়ার প্রবৃত্তি ও স্ববিধা। যদি ভেজাল বন্ধ হইত তবে কুটার-ঘানিগুলি বাচিত। কুটার-ঘানি চলতে পারে কুটির-ঘানিগুলিকে বাচাইতে হহলে কলুকে নির্ভরযোগ্য T৫২৫ করিয়া তুলিতে হইবে। বিশ্বাসী মধ্য দ্বারাও একাজ হইতে পারে। আর একটি বিষয় এ যে সকল ঘানি সমান কাজ দেয় না। ঘানির গঠন জেল জেলায় ভিন্ন। ভালমন্দ বিচার করিয়া একটা গ্রহণযোগ্য ঘানি আদর্শরূপে লক্টলে, যে-স্থানে খারাপ ঘানি চলিতেছে সে-স্থানে প্রভূত উপকার হইবে। আমি এমন ঘানি দেখিতেছি যাহাতে দিনে পনর সের মাত্র সরিষা ভাঙান হয়—আবার অক্ষত্ৰ দেখিতেছি, সামান্ত প্রভেদের জন্য সেই প্রকার ঘানিতে দিনে ত্রিশ সের হইতে চল্লিশ সের সরিষা ভাঙান হয়। আবার ইহাও দেখিয়াছি যে এই অধিক সরিষা যে-ঘানিতে ভাঙান হয় তাহাতেও উন্নতির অবকাশ আছে । খাদি-প্রতিষ্ঠান হইতে কয়েকটা কুটারশিল্পের উন্নয়নের চেষ্টা চলিতেছে। ঘানি তাহার মধ্যে অন্যতম। বিশ্বাসী মধ্যস্থের কাৰ্য্য, অর্থাৎ কলুদ্বারা সরিষা ভাঙাইয়া খাটি তেল ক্রেতাকে দেওয়ার কার্ষ্যও খাদি-প্রতিষ্ঠান হইতে চলিতেছে। ইতিমধ্যে কয়েকখানা গ্রামে পুরাতন অচল ঘানিগুলি চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। লোকের মন যদি জাগ্রত হয়, যদি কুটীরে প্রস্তুত শ্রেষ্ঠ জিনিষের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়া আসে তবে ঘানি পুনরায় বাচিতে পারে। গ্রামে বিশ্বাসী মধ্যস্থের কাজ শিক্ষিত বেকার যুবকেরা করিতে পারে, যদি চরিত্রবলের সম্পদ ও খ্যাতি তাহদের থাকে। ঘানি তাহা হইলে সহজেই পুনরায় বাচিয়া উঠিয়া পল্লীকে কতক অংশে ভ্ৰমণ্ডিত করিতে পারে। কুটার-ঘানিকে পরাজয় করার মত কল আজও আবিষ্কৃত হয় নাই, ঘানির বঁাচার পক্ষে ইহা একটা বড় কথা ।