পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্ৰিবেণী ঐ জীবনময় রায় 8Ꮌ পরদিন সকালবেলা কমল হাসপাতালে ফিরে গেল । ঝড়ের পর একটা ক্ষতমজ্জা বনস্পতির যেমন একরকম ভগ্নশাখা ছিন্নপত্র বিধ্বস্তপ্রায় চেহারা হয় তার মনের ভিতরটাও কতকটা তেমনি অস্ত শিথিল বিপৰ্য্যস্ত হয়ে গিয়েছিল । যাবার সময় সে মালতীকে গিয়ে বললে, “দিদি, আমি এসেছিলাম সংসারে শুধু দুঃখ ছড়াবার জন্যে। নিরুপায়ে তোমার পায়ে ন-জেনে অনেক অপরাধ করেছি—ক্ষমা করে। খোকনকে দেখো । তুমি ছাড়া --- এইটুকু বলে আর সে সামলাতে পারলে না। ঠোটে ঠোট চেপে প্রাণপণে উদগত অশ্র সম্বরণ করবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল । মালতী তাড়াতাড়ি তার হাত ধ’রে অশ্রুমুখী হয়ে বললে, “তোমার ভাল করবার ছুতোয় যারা তোমার সৰ্ব্বনাশ করার ফিকির করে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আর অপরাধ বাড়িও না, বোন । আমি বেঁচে থাকতে খোকনের কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না—” কমলা গড় হয়ে মালতীর পায়ে প্রণাম করতে করতে বললে, “তা জানি, থোকনের তুমি এই হতভাগী মার চেয়েও যে বেশী তা জানি বলেই আজ বুকটা বঁধতে পেরেছি দিদি—” কমলা পায়ে হাত দেওয়ায় মালতী যেন অপরাধ-ভয়ে এক পা পিছিয়ে গিয়ে বললে, “ও কি ভাই ! অপরাধ হবে যে ! ষাট, যাট, ” বলে কমলাকে ধরে তুললে। কোন যুক্তিতে বলা কঠিন, কিন্তু মালতীর মনে কেমন একটা অন্ধ বিশ্বাসই ছিল যে জ্যোৎস্না বামুনের মেয়ে । বাইরে ভগলু গাড়ী এনে অপেক্ষা করছিল। কমলা চোখের জল মুছতে মুছতে তাড়াতাড়ি গাড়ীতে গিয়ে উঠে পড়ল। বুকট ফেটে গেলেও, পাছে তার মনে কোন রকম দুৰ্ব্বলতা এসে তার অস্তরের কঠিন সংকল্প থেকে তাকে বিচু্যত করে, এই ভয়ে থোকার কোন তত্ত্ব সে করলে না । প্রাণ থাকতে এ-বাড়ীতে সে যে আর পদার্পণ করবে না এ-সম্বন্ধে কাল সমস্ত রাত্রি প্রতিজ্ঞ ক'রে কঠিন পণে নিজের চিত্তকে সে প্রস্তুত করেছে না ? জ্যোংস্কার দুঃখপীড়িত অশ্রলাঞ্ছিত মুখখান মালতীর মনটাকেও অশ্রুভারাক্রাস্ত ব্যথিত ক’রে তুললে । স্বামীর উপর রাগে বিরক্তিতে মনটা তার তেতো হয়ে উঠল । তবু কমলা যে খোকনকে তার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে নাগিয়ে তারই কাছে রেখে গেল তাতে তার মনটা আপাতত একটা দুভাগ্য থেকে নিস্কৃতি পেয়ে জ্যোৎস্নার প্রতি যেন কৃতজ্ঞ হয়ে রঙ্গল । সমস্ত রাত্রির দুশ্চিস্তার মধ্যে খোকনের বিচ্ছেদ-সম্ভাবনাই তাকে বিচলিত করেছিল সব চেয়ে বেশ । সেই চাপা ভয়ের অবরুদ্ধ বেদনার বাষ্প মুক্তি লাভ করতেই মালতীর মন হান্ধ হয়ে নন্দলালের দুস্ক্রিয়ার প্রতি উদ্যত হয়ে উঠবার অবসর পেল যেন । মনে মনে রেগে বললে, “আম্বক না একবার, টের পাওয়াব’খন মজাটা ।” কিন্তু ‘মজা টের পাওয়াবার" খন্দেরের দেখা পেলে ত ? নন্দলালের নাগাল পাওয়া মালতীর অসাধ্য হয়ে উঠেছে। বাড়ীমুখে যদিই বা সে হয়, তাও গভীর রাত্রে, নিত্যস্ত চোরের মত । বাইরে বৈঠকখানার ঘরে কোন মতে রাতটা কাটায়—কি কাটায় না, এমনি ভাব । সেদিন রাত্রে মাংসলোলুপ যে নেকড়ে বাঘট। ওর অস্তরের গুহার অন্ধকারে ব’সে ওর চোখমুগ দিয়ে উকি মারছিল তার আহত পুচ্ছের ডগাটুকুও আজ আর নজরে পড়ে না। তার জায়গায় যেন বাসা বেঁধেছে একটা হাড়িচোরা মেনী বেরাল—ওর মুখ দেখলে তাই মনে হয়। রেগেমেগে মালতী ক দিন মন্দর কোন খোজখবর নিলে না। অবগু, নন্দলালের পক্ষে সেটা নিতাস্তই যে অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছিল তা নয় । তাকমত কেমন ক’রে মালতীর দৃষ্টি থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বেড়াবে সেইটেই ছিল তার চেষ্ট । মালতীর তরফ থেকে একটা বিপ্লব