পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশস্থল সে যেন মনে মনে আকাঙ্ক্ষাই করছিল। তার ভবিষ্যৎ জীবনটাকে একটা আকস্মিক ভূমিকম্পের আঘাতে ভেঙে পড়া সংসারের ভগ্নস্তুপের মধ্যে কল্পনা করে মনে মনে তার আর স্বস্তি ছিল না । জ্যোৎস্নার উপর অকারণেই তার রাগ হতে লাগল। কোনো একটা কৈফিয়ং জুটিয়ে নিয়ে মালতীর কাছে যে সে ক্ষমা ভিক্ষা করতে ধাবে তারও দুঃসাহস কিছুতেই সংগ্রহ করে উঠতে পারে না। কাজের উপর কাজের বোঝা চাপিয়ে উৎসাহ বিহীন গৰ্দ্দভের মত তার ভারাক্রান্ত দিবসগুলিকে টেনে সে মলিন বেশে রুক্ষকেশে বাইরে বাইরে ঘুরে কাটিয়ে দিতে লাগল। বেচারা নিজে একটু শিথিলপ্রকৃতির মানুষ ; তাতে আবার নিজের নিত্য প্রয়োজনের তাগিদগুলো পৰ্য্যন্ত মালতীর সতর্ক দৃষ্টির শাসনে নিয়ন্ত্রিত হওয়া তার বহুদিন ধরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। নিজের সেবাযত্ন পারিপাট্যের নিপুণতা তার ছিল ন, স্বতরাং কিছুদিনের মধ্যেই নিতান্ত অসহায় অবোধের মত সে অভ্যস্ত স্বাচ্ছন্দ্যের অভাবে সত্যই বড় কাতর হয়ে পড়ল । অনাহার-অৰ্দ্ধাহার-অনিদ্রী-অম্লানজনিত অত্যাচারে নন্দর অবস্থাটা শক্ররও অকাম্য হয়ে পড়েছে, এবং এত দিন পরে এবার তার নিজের দুস্ক্রিয়ায় নিজের উপর প্রায় একটা অকপট বিরক্তি এবং অনুতাপে তার মনটা পূর্ণ হয়ে উঠল । তার ইচ্ছে করতে লাগল যে নাহোক একটা দুর্ব্যবহার করে মালতী ব্যাপারটাকে চুকিয়ে ফেলুক । মালতীর কি দয়ামায়া বলে কোন বস্তু নেই ? যদি তার একটা শক্ত অস্থখ হয় ? একটা অস্থখ-বিমুখ করলে যে মালতী উদাসীন থাকতে পারবে না তা একরকম সে নিশ্চয় জানত ; এবং একাগ্রচিত্তে সে দেবতার কাছে অন্তত একটা কঠিন পীড়ার জন্ত মনে মনে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল। ক্রোধের প্রথম উত্তেজনাটা কেটে গেলে, দু-চার দিন পর থেকে বেকার মালতীর দৃষ্টি নন্দলালের দশার্টার দিকে .. আকৃষ্ট হ'ল। গোপনে গোপনে নন্দলালের ভাবখানা দেখে তার কেমন মায়া হতে লাগল। বস্তুত নিঃসন্তান মালতীর জীবনটা শিশু অজয় এবং নাবালক নন্দলালের পরিচর্য্যার মধ্যে ভাগাভাগি করা ছিল এবং ব্যবসাপটু নন্দলালের নিজের স্বৰ্থস্বাচ্ছদ্য সম্বন্ধে অপটুতা বা নাবালকত্ব তার মাতৃহৃদয়কে ত্ৰিবেণা (Rh বিচলিত এবং প্রশ্রয়প্রবণ করে তুলেছিল। যদিচ সূক্ষ্ম মানসিক তুলাদণ্ডে নলালের চরিত্রগত অবনতি পরিমাপ ক'রে তার দুষ্কৃতির প্রতিবিধান করবার মত নৈতিক ঘৃণা অশিক্ষিতা স্নেহপ্রবণ মালতীর চিত্তে বিশেষ করে জাগে নি, তবু আজ তার মন নন্দলালেরই অপরাধের লজ্জায় তার কাছে সহসা গিয়ে সোহাগের শাসন প্রয়োগ করতে স্বভাবতই দ্বিধা বোধ করছিল তাতে সন্দেহ নাই। নন্দলালের বেয়াড়াপনায় সে চটেছিল কম না । হাতে পেলে একচেটি নন্দলালের ধুধ ঘুড়ি নেড়ে দেবার কল্পনায় মনে মনে যখন তখন সে কোমর বাধছিল তাও বটে ; তবু নন্দর অপরাধ তার কাছে বেয়াড়াপনার বেশী আর কিছু নয়। অসচ্চরিত্র স্বামীর অধঃপতনজনিত পত্নীবিমুখতার সৰ্ব্বনাশ কল্পনা করে সমস্ত জগৎ এবং নিজের তাবৎ ভবিষ্যৎ ঘোর তমসাচ্ছন্ন শূন্যময় দেখে, নিজের প্রতি পরমকরুণায় অসহায় অশ্রুবর্ষণে অনন্তকৰ্ম্ম হয়ে উপাধান সিক্ত করার কথা তার মনে হয় নি। বরং দু-চার দিন যাবার পর এই লুকোচুরির মধ্যে নন্দলালের এই গরুচোরের মত গোপন সঞ্চরণের ছবি মালতীর স্বভাবহাস্তপ্রবণ চিত্তে যেন একটু কৌতুকের আমেজই লাগিয়েছিল। তার স্থল দেহটিকে বস্ত্রাবরণে সষ্কৃত করে নিয়ে কারণে অকারণে সে বৈঠকখানার পথে যাতায়াত করতে লাগল। অকস্মাৎ অসময়ে গিয়ে দরজা ঈষৎ ফাক ক’রে দিনে দশবার দেখে নিলে কোন স্পৰ্দ্ধাবান ঘরে প্রবেশ করছে কি না । মালতীর মনের ভাবখানা এই—“আমর মিন্‌ষে ! রকম দেথ না ! পরের মেয়ে ঘরে এনে বদখেয়ালী করবার বেলা মনে থাকে না ! ব্যাটা মেরে সমান করলে তবে গায়ের ঝাল মেটে। ন-নেয়ে ন-খেয়ে আবার ঢং করে সং সাজা হচ্ছে! মরুক গে ; কথাটি কইছি নে আমি, হ্যাঃ ! বয়ে গেছে আমার সাধাসাধি করতে—” ইত্যাদি। আরও দুচার দিন না যেতেই মালতীর সাধাসাধি না করার ধরণটা কিছু উগ্র আকারেই তার ভৃত্যকুলের উপর বধিত হতে স্বরু হ’ল । মা-ঠাকরুণের তাড়া খেয়ে বেচারার দুপুর রাত পৰ্য্যস্ত ওৎ পেতে সাবান গামছা তেল খাদ্য এবং অখাদ্য নিয়ে নন্দলালকে আক্রমণ করতে মুরু করে দিলে। পায়ের উপরে পা দিয়ে বসে বসে মাইনে গেলবার জন্তে সত্যিই ত তাদের আর রাখা হয় নি; বাবুর