পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GStణా | নাওয়া-খাওয়া একটুও দেখতে পারে না তারা । কাজ ফাকি দেবার যম সব ! এর পর অচ্যুতপ্ত নন্দলালের দাম্পত্য মিলনের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত হ’য়ে এল এবং অত্যন্ত নিরীহ বালকের মত মালতীর শাসন এবং পরিচর্য্যায় সে আত্মসমপণ করলে । তাদের সংসারযাত্রা আবার কতকটা স্বাভাবিক হয়ে এল—কেবল অজয়কে মালতী আর পারতপক্ষে তার মেসো-মশায়ের ত্রিসীমানায় যেতে দিলে না। নন্দ যে তাকে স্বনজরে দেখবে না মালতীর মনে এমনই একটা শঙ্কা, কেন জানি না, বদ্ধমুল হয়ে ছিল । নন্দ অবহু জ্যোৎস্নার নাম আর মুখে আনলে না, এবং মালতীকে প্রসন্ন করতে থোকার জন্যে নিত্য নূতন মনোহরণ খেলনা পোষাক প্রভূতি এনে হাজির করতে লাগল। মালতী বলে, “এ আবার কি আদিখ্যেতা মুরু করলে ?” নন্দ মালতীর দুৰ্ব্বল মনকে স্পর্শ করে বলে, “ঐ ত একটু হাসি সোহাগ করবার সামগ্ৰী আছে—আর আমাদের কি আছে বল ত ।” নন্দর উদ্দেশু সিদ্ধ হয় । সজল নয়নে মালতী বলে, “ষাঢ় যাট, ।” 88 হাসপাতালে ফিরে গিয়ে অস্বস্থতা সত্ত্বেও কমল নিজেকে কাজ এবং পড়ার মধ্যে একেবারে ডুবিয়ে দিলে। চিন্তার ভার আর যেন সে বইতে পারে না। কোন মতে নিজের অস্তিত্বের অনুভূতিকে মন থেকে নিশ্চিহ্ন ক’রে মুছে দিয়ে তবে নিশ্চিন্ত হবে এই যেন তার পণ । একলা নিজের দুঃসহ সমস্তার সমাধানচেষ্টা তার দুর্বল মস্তিষ্কের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মনে মনে চাইছে সে সহৃদয় নিখিলের শান্ত প্রভাব—যে তাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে, সাহায্য দিয়ে এবং সহানুভূতি দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু নিখিলনাথের সাক্ষাৎকার লাভ করা এক দুরূহ ব্যাপার হয়ে উঠেছে আজকাল। কখন যে সে বাড়ী থাকে তা বুঝে ওঠা দুঃসাধ্য। হাসপাতালের কাজটুকু ছাড়া আর অধিকাংশ প্রেৰণসী Se39 সময়ই সে বাড়ী থাকে না । বারংবার দরোয়ান পাঠিয়েও অবসর সময়ে নিখিলের কামরায় তার সন্ধান পাওয়া গেল না। হাসপাতালের কাজে অবশু সে কোনদিনই অনুপস্থিত থাকে নি । কিন্তু তখন এক মুহূৰ্ত্তও তাকে একাস্তে পাওয়া দুষ্কর—যাতে অন্তের অগোচরে কমল তার সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা বলতে পারে। ফিরবার পর প্রথম দিনই তার সঙ্গে কমলের সাক্ষাৎ হয়েছিল বটে, কিন্তু সে কতক্ষণই বা । “ও কি ! আপনি আজই ফিরলেন যে ? ভাল আছেন ত ?” ভাল যে সে নেই এমন স্পষ্ট ক'রে তার মুখের চেঙ্গরায় তার ছাপ কোন দিনই পড়ে নি। অন্য সময় হ’লে এই পীড়িত ক্লিষ্ট চেহারা নিখিলনাথের দৃষ্টি এডাত না । কিন্তু আজ তার নিজের চিত্ত ছিল অন্য চিন্তায় আচ্ছন্ন, উদভ্ৰান্ত । এই প্রশ্নটুকু মাত্র করে তার উত্তরের জন্যও সে আজ বিশেষ আগ্রহ করলে না । কমলের পীড়িত ক্ষত চিত্তে যে তা অভিমানের স্মষ্টি করে নি তা নয়—কিন্তু তার বড় আবস্তকের প্রয়োজনে সে-অভিমান তার মনের মধ্যে ঘনিয়ে উঠবার অবকাশ পেল না। সন্ধ্যার সময় মাথার যন্ত্রণা অসহ হওয়ায় কমলা দরোয়ানের হাতে একটা চিঠি দিয়ে নিখিলনাথের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। দরোয়ান ফিরে এসে সংবাদ দিলে যে ‘সাব’ ঘরে নেই। হতাশ হ’য়ে সে শয্যা মিলে । অনেক রাত্রে ফিরে নিখিল যখন কমলার চিঠিখান পেল তখন সকালে হাসপাতালে তার অত্যন্ত ক্লিষ্ট যে মুখখানা তার মনোযোগ জাগিয়ে তুলতে পারে নি সেট মনে পড়ে তার নিজের এই অন্যমনস্কতার জন্তে তার মনে লজ্জা অনুভব করলে এবং তখনি জ্যোৎস্না দেবীর তত্ত্ব করবার জন্মে নাস-কোয়াটাসে চলে গেল । নিখিলনাথ গিয়ে যা দেখলে তাতে এতক্ষণ জ্যোৎস্নার কোন সংবাদ নিতে পারে নি বলে তার একটু লজ্জা হ’ল । কমলের মাথার যন্ত্রণা বেড়েছিল খুবই, তার সঙ্গে , জরের ধমকে সে প্রলাপ বকে চলেছিল। নিখিল গিয়ে দেখলেন যে তার যাওয়ার পূৰ্ব্বে দু-জন জুনিয়র ডাক্তার সেখানে