পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ গিয়েছে এবং মোটামুটি তার শুশ্ৰুষার ব্যবস্থা করেছে। নিখিল গিয়ে রক্ত পরীক্ষা প্রভৃতি অন্তান্ত ব্যবস্থা ক’রে তার কামরায় ফিরে গেল। অল্প কিছু জাহার এবং বিশ্রাম করে নিয়ে শোবার আগে সে অার একবার কমলকে দেখতে এবং রাত্রের মত শেষ ব্যবস্থা দিয়ে আসবার জন্তে নাস-কোয়ার্টাসে ফিরে গেল। জুনিয়ররা তখন বিদায় নিয়েছে । কমলার ঘর আবৃত ল্যাম্পের উদ্ধৃত্ত আলোকে অন্ধকারপ্রায়। কমলা দ্রুত ও অস্ফুট উচ্চারণে প্ৰলাপ বকছে মাঝে মাঝে । খানিক ক্ষণ অন্তমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে থেকে হঠাৎ এক সময় তার মনে হ’ল যে জ্যোৎস্নার প্রলাপের মধ্যে থেকে দু-একটা কথা যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । জ্যোৎস্নার মনে যে কোন গুরুতর ক্লেশের কারণ সম্প্রতি ঘটেছিল নিখিলের এ সন্দেহ পূৰ্ব্বেই হয়েছিল । তবু কৌতুহল প্রকাশ ক’রে সে জ্যোংস্কার আরও দুঃখের কারণ হবে ভেবে চুপ করে ছিল। আজ রোগিণীর পাশে চুপ করে দাড়িয়ে এই স্তন্ধ কৰ্ম্মশূন্ত অন্ধকারে তার নিজের স্বভাববিরুদ্ধ কৌতুহলে সে অল্প একটু কাছে সরে এসে দাড়াল। তার পর ষ্টেথসূকোপটা নিয়ে বুক পরীক্ষার জন্যে সে নীচু হয়ে শুনলে । ছ-একটা কথা সে যেন স্পষ্টই শুনতে পেলে—কিন্তু তার একটার সঙ্গে অন্তটার কোন যোগাযোগ করতে পারলে না। বক্ষ-পরীক্ষা কিছু আর বেশীক্ষণ চলে না । বিন্দু বসেছিল বরফের ব্যাগ মাথায় দিয়ে। নিখিল একটু গম্ভীর মুখে তাকে বললে, “ষাও, দুটো হটু-ওয়াটার-ব্যাগ তৈরি করে जघांन ” ` বিন্দু নিখিলের মুখ দেখে একটু ভয় পেল, বললে, *সরোজিনীকে ডেকে দিয়ে যাচ্ছি।” নিখিল বললে, “না তার দরকার নেই। সরোজিনীকে ছুঘণ্ট। পরে ডেকে। আর দুঘণ্টা ক’রে এক-এক জন থেকে । যাও, জামি বসছি একটু ” বিন্দু ব্যাগ আনতে চলে গেল। নিখিল গুনতে চেষ্টা করতে লাগল। প্রেলাপের কথা প্রায় শোনা যায় না। একবার যেন মনে হ’ল শুনতে পেলে “ভোলাদা খোকাকে ধর।” আর একবার “উঃ কত হাতী।” এই রকম দুএকটা কথা পরস্পর নিতান্ত সঙ্গতিশৃঙ্গ। বিন্দু এলে পায়ে ఆ9 = \ জিৰেনী &షిపి গরম এবং মাথায় ঠাণ্ডা দিতে উপদেশ দিয়ে একরকম হতাশ হয়েই সে ফিরে এল। 5 চার-পাচ দিনের মধ্যেই কমলের জর ছেড়ে গেলআরও দু-তিন দিন পরে নিখিলনাথ কোন স্থযোগে কমলকে জিজ্ঞেস করলে, “ভোলাদ ব’লে আপনার কোন আত্মীয় আছেন ?” কমলা অবাক হ’য়ে জিজ্ঞেস করলে, “কেন ?" নিখিল বললে, “প্রলাপে আপনি তার নাম করেছিলেন । মাপ করবেন আমার কৌতুহলের জন্যে।” কমলা সঙ্কুচিত হয়ে বললে, “না না, আপনি মাপ চাইবেন না।” এবং প্রায় মরিয়া হয়ে বলে ফেললে, “আপনাকে আমার অনেক কথা বলবার আছে। দয়া করে যদি একটু সময় করতে পারেন ৮-এখানে ত বলা হবে না।” যদিও তার অনুমান করবার কিছুমাত্র সম্ভাবনা ছিল না, তবু কেন জানি না, এই অনুরোধে নিখিল যেন বিস্ময় অনুভব করলে না । সে যেন কোন দিন এমনি একটা অনুরোধের জন্য মনে মনে প্রস্তুতই ছিল । বললে, “আচ্ছ, ভাল হয়ে উঠুন। সে বন্দোবস্ত করব। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর আপনি দেন নি।” কমলা বললে, “কি জানি আমার কি মনে পড়ে না। আর কিছু বলি নি " তার মনে মনে ভয় হ’ল নন্দলালের কথার কিছু উল্লেখ করেছে হয়ত বা, এই মনে করে। “বলেছিলেন, ভোলাদা থোকাকে ধর । আর এক বার বলেছিলেন, উঃ কত হাতী।” কমলা অকস্মাৎ ঝরঝর করে কেঁদে ফেললে। নিখিল অপ্রস্তুত হয়ে বললে, “ছি: কাদবেন না। না জেনে আপনাকে হয়ত দুঃখ দিয়েছি—” “না না, তা নয় ; আমি যে কিছুতে মনে আনতে পারছি নে। অথচ কিছুই ত ভুলি নি আমি---” বলে কান্না থামাবার চেষ্টায় ক্রমাগত সে চোখ মুছতে লাগল। এই কথায় নিখিল একটু অবাক হ’ল। কথা যেন ধাধার মত। জ্যোৎস্নার জীবনে ষে কোন দুঃখের ইতিহাস তার সমস্ত অস্তিত্বের মাঝখানে ছায়াপাত করে তার জীবনের স্বাভাবিক আনন্দের রসাস্বাদনে বঞ্চিত করে রেখেছে—এমন সন্দেহ নিখিলের মনে পূৰ্ব্বে অনেকবারই