পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ জন্যে বাইরে চলে গেল এবং সীমার যথাসম্ভব ইতিহাস তাকে ব’লে, বললে, “জ্যোৎস্না, তোমার দুঃখ অপরিসীম, এমন কি হয়ত দুরপনেয়। কিন্তু তার ভিতর তোমার জীবন্ত প্রেমের পরিপূর্ণ উৎস গভীর বিরহের মধ্যেও তোমার হারানো স্বামীর নিবিড় অস্তিত্বের অনুভূতিতে তোমাকে সঞ্জীবিত রেখেছে। কিন্তু যে-মারী তার নারীত্বের সমস্ত মাধুর্ঘ্য সমস্ত হষ্টিশক্তির অপরিমেয় কল্যাণকে অস্বীকার করে তার অনন্যসাধারণ মহিমাকে ধ্বংসের আগুনে ছাই ক’রে পুড়িয়ে ফেলতে চলেছে তাকে উষ্কার বহ্নিলীলার মত ব্যর্থ হয়ে যাবার সৰ্ব্বনাশ থেকে তুমি বঁাচাও।” কথা শুনতে শুনতে কমলের বুকের ভিতর কেঁপে কেঁপে ওঠে । ভাবে, “অপদার্থ আমি, আমাকে কি এই বিশ্বাস, এই নির্ভর সাজে ? নিখিলনাথের এমন অস্থিরতা সে কোনদিন দেখে নি। ভাবে এ কি শুধু তার গুরুর আদেশ প্রতিপালনের আগ্রহ।’ ভাবে, “আমি কতটুকুই বা, আমাকে দিয়ে যদি কোন কাজে লাগিয়ে নিতে পারেন তাতেও আমার জীব. ত কিছু পরিমাণ সার্থক হবে।” মাথা নীচু করে ধীরে ধীরে বললে, “আমাকে আপনি চালিয়ে নেবেন । জগতে যদি এতটুকু কাজে আসতে পারি তবু আমার বেঁচে থাকার কতকটা সাস্থন পাই ।” ব’লে সে চুপ করে ভাবে, সে কেমন মেয়ে না জানি, ওর মত লোককেও যে এমন ক’রে বিচলিত করতে পেরেছে । পরদিন নিখিল কমলকে নিয়ে নারীভবনে রেখে এল । সীমার শু্যামশ্রীর সেই স্বতোদীপ্ত উজ্জলতা যেন মান হয়েছে। তার মুখে তার অস্বাভাবিক গাম্ভীৰ্য্যের মধ্যে ঘনায়মান করাল মেঘের ছায়া। তার চোখের বিদ্যুৎদীপ্তি, নিপক্ষ্মজালের অন্তরালে, ষেন সংশয়াচ্ছন্ন দুরাশায় রহস্যময়। মিথিলনাথ তার এ-রূপ কখনও দেখে নি। ইস্পাতের তরবারির মত সীমার যে-রূপ তার মুগ্ধ চিত্তের উপর উষ্ঠত ছল আজ তার সেই বিদ্যুৎহাস্যমুখরিত শ্লেষতীয় স্থতি কসের ছায়াপাতে যেন দীপ্তিহীন। অকারণ বেদনায় নখিলের চিত্ত পীড়িত হতে লাগল। তবু সে সীমাকে তার বপদের তার দুঃখের কথা জিজ্ঞাসা করতে ভরসা পেল না । গর প্রগলভতার জন্তে সীমা ক্রুদ্ধ হবে এই ভেবে নয় ; জিৰেনী (\ం వె কোন দ্বচ্ছেদ্য চক্রান্তজাল কোন ভীষণ অনুষ্ঠান এবং কোন ভীষণতর কুরতর হিংস্রতার পরিকল্পনার মধ্যে তাকে রক্ষার অতীত ভাবে জড়িত দেখতে পাবে এই দুৰ্ব্বিষহ আতঙ্কে । অল্পক্ষণ—সময় এক মিনিটও নয়, কিন্তু তারই মধ্যে যেন একটা বিরাট কালের ইতিহাস, মানবচিত্তের মুখদুঃখের বিচিত্র আন্দোলনে তাদের দুই জনের চিত্ত মথিত হ’তে লাগল। নিজেকে সম্পূর্ণ আত্মস্থ করে নিতে সীমার বিলম্ব হ’ল না । কমলাকে নমস্কার করে, নিখিলকে একটু বসতে ব’লে সে তাকে মেয়েদের সঙ্গে পরিচিত করতে ভিতরে নিয়ে গেল। যখন সে ফিরে এল তখন সেই ছায়া তার মুখ থেকে সম্পূর্ণ অস্তষ্ঠিত হয়েছে। নিখিল অবাক হয়ে তার মুখের দিকে চাইলে । সীমা সেই চাহনিটুকু অগ্রাহ করে বললে, “এখন পরিচয় দিন।” ” সীমাকে কমলের ইতিহাস সংক্ষেপে ব’লে, নিখিলমাথ চলে আসবার সময় সীমাকে জিজ্ঞেস করলে, অর্থের তার আবগুক আছে কি না । মুহূৰ্ত্তকাল চুপ করে থেকে সীমা বললে, “দেখুন, অর্থের প্রয়োজন আমার অনেক । কিন্তু আপনাকে বঞ্চনা ক’রে অর্থ নিতে আমি পারব না। দেশের প্রয়োজনে লোককে বঞ্চিত ক’রে তাদের আহৃত অর্থ গ্রহণকে যে উচিত মনে করি তা ত আপনাকে বলেছি, তবু বঞ্চন ক’বে অর্থ সংগ্ৰহ করতে আমারও মনে বাধে এগমও। তা ছাড়া আকারণে এর মধ্যে আপনাকে আমি জড়াতে চাই নে। আমার সেদিনকার ধৃষ্টতার জন্তে আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনার দয়ার কথা আমি ভুলব না । কিন্তু আপনার উপদেশে চলবার রাস্তা আমার খোলা নেই।” সীমার শেষ কথাগুলিতে আশার ক্ষীণ আলোক নিখিলের মনের মধ্যে একটুখানি পথের সন্ধান এনে দিলে যেন। আগ্রহের স্বরে একটু অনুনয় মিশিয়ে সে বললে, “কেন নেই ।” “সে কথা বলবার যদি কোনদিন অবসর পাই ত বলব। আজ আমার সে কথা বলবার সময় আসে নি। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে তর্ক করবার ক্ষমতা আমার নেই। আপনার দেখানে পথ আমার পথ হবার যে নেই। এইটুকু মাত্র আজ আপনাকে জানাতে পারি।” বলে কথার মোড় ফিরিয়ে নিয়ে যেন একটু অর্থপূর্ণ হাসি হেসে বললে,