পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●BS。 মোহন হাসিয়া বলিল, কই দে তবে । মুস্কিলে ফেললি দেখছি । তোর মাকে এবার ফিরে গিয়ে বলিস্—বুঝলি, যে গোসাই-কাকা বলেছে, ওরকম লোভ দেখিয়ে কি হবে । ই্য, পেতুম এ-রকম রোজ, দু-দিন একদিন দিয়ে আসল বৈরাগী মানুষকে শুধু লোভী করে দেওয়া । তার পর একটা রসকরা মুখে ফেলিয়া দিয়া চিবাইতে চিবাইতে বলিল, তোর তবু মা আছে জবল—রসকরা করে দেয়, fচড়ে বেঁধে দেয় ; মোহন হাসিল—পুনরায় বলিল, আমার কেউ নেই যে এমন দেয়—না আছে মা, আর না আছে কেউ। এমন কপাল • মোহন দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিল। ভাবিল, মিথ্যা কথা—তার কিইবা নাই। আসল কথা– সংসার পাতিতে তার কিছুমাত্র ইচ্ছ। নাই । সংসারের মায়া-মমতা, ইহার আকর্ষণ-বিকর্ষণের মধ্যে তাহাকে বৈরাগী সাজাইয়া, নিঃস্ব-কাণ্ডাল সাজাইয়া কে যেন বসাইয়া রাখিয়াছে । স্থবলকে শেষ পর্যন্ত কাধে তুলিতে হইল । ঝাউগাছে বাতাস লাগিলে শূন্য প্রান্তরের মধ্যে এমন যে ভীতিপ্রদ শব্দ হয় তাহা স্ববলের নিকট নিতান্ত অজ্ঞাত। তাহার উপরে পথের দু-পাশে নরকঙ্কাল ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত, অদূরে মেলার আলোগুলা জলিতেছে, শরীরও যথেষ্ট ক্লান্ত— এই সমস্তগুলা একযোগে তাঁহাকে ভীতাৰ্ত্ত করিয়া তুলিল । সে যেন স্পষ্টই দেখিতে পাইল, অসংখ্য ভূত-প্রেত মুখে আগুন জালাইয়া ছুটাছুটি করিতেছে, খল খল, করিয়া হাসিয়া চারি দিকে ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত নরমুণ্ড লইয়া গেণ্ডুয়া খেলিতেছে । স্থবল ভয়ে মূচ্ছিত হইয়া পড়িল । ঋষি দাস হাসিয়া বলে, মোহন, মুবলের জন্তে দ্বধ কেনাটা না-হয় বাদই দিয়ে দাও । সবাই যে রকম হাসাহাসি আরম্ভ করেছে—বলে, আমাদের গোসাই-ঠাকুরের হঠাৎ এ হ’ল , কি । ননী বোষ্টমের ছেলে স্থব ল—যে ফেন-ভাতও • খষি দাস মোহনের মুখের অবস্থা দেখিয়া আর বলিল না । মোহন বিকৃতমুখে হাসিয়া বলিল, আরে ভাই, পরের ছেলে—বিদেশে এনেছি । ভালয় ভালয় তার মায়ের কাছে পৌছে দিতে পারলে হয়। একটি মাত্র ছেলে রে ভাই, না আছে স্বামী অার না আছে কেউ, বুঝলে না--- ঋষি দাস বোধ হয় বুঝিল তাই, আর প্রতিবাদ করিল না। রিহাসলৈ আরম্ভ করিবার উদ্দেশুে চলিল । প্রবণসী yN933 দুই দিন জোর রিহাসলি চলিতেছিল—মোহন গোসাইয়ের দল ‘প্ৰহলাদ’ গাওনা করিবে । যাহারা পূৰ্ব্বে কখনও শুনিয়াছে তাহারা মহা গৌরব ভরে বলিতেfহল, কি বলে নামটা ওর—কয়াধু, মোহন গোসাই কয়াধু সাঙ্গলে পুরুষমানুষ বলে আর চেনা যায় না ভাই রে—সাজপোষাকও তেমনি, সাক্ষাৎ একেবারে মহারাণী। আর সেই প্ৰহলাদ---আহা !--- কিন্তু দৈবের উপরে নাকি হাত চলে না, তাই যে-দিন মোহন গোসাইয়ের দলের গাওনা করিবার কথা সেদিন সকালে মুবলের সারা অঙ্গে দুঃসহ বেদন জাগাইয়া বসন্ত দেখা দিল । ইতিমধ্যে মেলায় চিরাচরিত প্রথামত বসন্ত ও কলেরা ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। ‘মোশান মাষ্টার’ ঋষি দাস বিপদ বুঝিয়া আর এক জনকে প্ৰহলাদের জন্য তৈরি করিতে লাগিল। সকাল হইতে বুঝাইয়া-পড়াইয়া আরম্ভ হইবার কিছু পূৰ্ব্বে তাহাকে রীতিমত প্রহ্নাদ বানাইয়া ছাড়িয়া দিল । অনেককে হতাশ করিয়া যাত্রা কিন্তু তেমন জমিল না । অভিজ্ঞরা অঙ্গুলীনির্দেশ করিয়া বলিল, আরে ধোৎ— এ কি "য়্যাক্টে হচ্ছে, শুনেছিলাম সে বছর • • কয়াধু নিতান্ত অন্যমনস্ক—বার-বার কথাগুলো স্কুল হইয়া যাইতেছে। কোথায় মূলে যেন সমস্ত গণ্ডগোল হষ্টয়া গিয়াছে। আসর হইতে বাহির হইয়াই কয়াধু অনুসন্ধান করে—স্থবল এখন কেমন আছে হে ? স্থবল তখন অঙ্গের দুঃসহ বেদনায় অস্থির হইয়া উঠিয়াছে। রাজ্যের তৃষ্ণা যেন তাহাকেই আসিয়া চাপিয়া ধরিয়াছে। ষন্ত্রণা উপশমের আশায় মাথাটা এপাশ-ওপাশ করিতে করিতে মৃদুকণ্ঠে কেবলই ডাকিতেছিল, ও —ম গো । কয়াধু হবলের শিয়রের নিকটে আসিয়া দাড়াইল । স্থবল নিম্প্রভ চক্ষু মেলিয়া চাহিয়া যন্ত্রণার একটা অস্ফুট আৰ্ত্তনাদ করিল। কয়াধু স্ববলের পাশে বসিয়া পড়িল। কুকিয়া পড়িয়া জিজ্ঞাসা করে, খুব কষ্ট হচ্ছে—না রে । কয়াধুর কণ্ঠস্বর গাঢ় হইয় আসে। নিমপাতার অঁাটি গায়ে বুলাইয়া দিতে দিতে মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে, খুব চুলকচ্ছে-না 7 স্থবল পীড়িত মনের মানস চক্ষে দেখিতে পায়—মী