পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسون 83 G yN98ఆ` তোমার অনেক কথাই জানি, আবার হয়ত অনেক কথাই জানি না । একটা কথা জিজ্ঞেস করব—বলবে ? মোহন কোন উত্তর দিল না—নীরবে কেবল তাহার মুখের দিকে তাকাইল । ঋষি-মাষ্টার বলিল, বিশাখাকে তুমি ভালবাস জানি আর একথা খুব ছেলেবেল থেকেই জানি । তোমার বাবামা যখন বেঁচে ছিলেন তখন তার ননী বৈরাগীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আর তুমিও সে সময়ে অনুযোগ করবার স্বযোগ পাও নি—ভাও জানি। কিন্তু পরে ত তুমি তাকে গ্রহণ করতে পারতে ! সে যখন বিধবা হয় ফিরে এল তখন তোমার বাবা-মাও বেঁচেছিলেন না এবং বাধা দেবারও কেউ আর ছিল না । তা ছাড়া, এই রকম ভাবে গ্রহণ করা–এ ত আমাদের সমাজে আচল নয় মোহন ! মোহনকে নিৰ্ব্বাক দেখিয়া ঋষি-মাষ্টার আবার বলিল, এ হয়ত তুমি নিছক আত্মাভিমানের জন্য কর নি। আবার তারই ভয়ে হয়ত তুমি স্থবলকে ভালবাস । শুনি—ভালবাসা ব্যর্থ হ’লেও যার বুকে থাকে সে নাকি সত্যিই ফাকি পড়ে না। যা হোক একটু ঠাই পেলেই লতিয়ে ওঠে—এ ভয়ত তাই। তোমার ভাবভঙ্গী আমি বুঝে পাই নে মোহন --- মোহন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া হারিকেনের দমটা কমাষ্ট্ৰয়া দিতে দিতে বলিল, শুয়ে পড় ঋষি—রাত হয়েছে --- মোহন যাক্ট করুক—ম্বলকে শেষ পর্য্যন্ত বঁাচাইতে পারিল মা । সন্ধ্যার পূর্ব হইতেই বাতাসের জোর বাড়িতেছিল । মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সন্ধ্যারতির সময় বলিয়াছিল, আজ রাত্রের গতিক সুবিধে নয়—মনে হচ্ছে রাখালরাজ আসবেন। ভগবান জানেন কার কি পাপ যাত্রীর দল চালাঘরের দরজা বন্ধ করিয়া তাহাই আলোচনা করিতেছিল । ষাহাদের রোগী আছে এবং যাহাদের মধ্যে রোগের কিছুমাত্র চিহ্ন ছিল না তাহারাও দেবতার নামে কিছু কিছু মানৎ করিয়া রাখিতেছিল। মোহনও মানং করিয়া রাখিয়াছিল, ক্ষুবলকে বাচাইয়া দাও ভগবান • • • উদাম বৈশাখী বাতাস ক্রমশঃ বাড়িতেছিল—উপরের চালাটা কড়কড় করিয়া উঠিতেছিল, মনে হইতেছিল— বাতাসে বোধ করি উড়াইয়া লইয়া যাইবে । ঋষি-মাষ্টার ওপাশে ঘুমাইতেছে। হারিকেনটা প্রকৃতই জালা আছে কিনা বুঝা যাইতেছে ন!—কালি পড়িয়া কালো হইয়া গিয়াছে । মোহন স্ববলের মুখের উপর ঝুঁকিয়া ছিল—এক সময়ে তাহার নাকের কাছে হাত লষ্টয়া গিয়া দেখিল, নিশ্বাস বহিতেছে কিনা। মোহন কিছুই বুঝিতে পারিল না—মৃছ একটু ঠালা দিয়া ডাকিল, স্ববল--- তার পর দুই-তিন বার ডাকিল কিন্তু কোন সাড়াই নাই । মোহন ভাবিল, শেষ হইয়া গেল নাকি ! — কখন ? সকলে ঘরে ফিরিয়াছে—শঙ্কিত, সন্ত্রস্ত জননী জাগিয় । ভগবাণ ! —সেখানে এক ফিরিয়া গিয়া কি বলিব ! মোহন বিহ্বল হইয়া উঠিল, কুবলকে জোরে ঠেলা দিয়া ডাকিল, স্বল--- মোহন হতাশ হইয়া উঠিয়া দাড়াইল । আজ সকাল হইতে তাহারও গায়ে যেন অল্প অল্প বেদন বোধ হইতেছে । মোহন ভাবিল, এমন যদি হইত যে আজ রাত্রের মধ্যেই সে মরিয়া পড়িয়া থাকে তাহা হইলে---মনে সে যথেষ্ট শাস্তি পাহত । ঋষি-মাষ্টার আছে—ঠিক সময়ে দেশে সংবাদটা পৌছাইয়া দিত। মোহন দরজা খুলিয়। বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । কাকজ্যোৎস্নার অন্ধকার—ধুলাবালি উড়াচয়, বাদামঝাউয়ের গাছে অথও মৰ্ম্মরধ্বনি তুলিয়া বৈশাখী বাতাস বহিতেছে । মোহন তাহারই মধ্য দিয়া অন্তমনস্ক ভাবে মন্দিরের দিকে চলিল । সে ভাবিতেছিল, স্থবল মরিল-— তাহার সমস্ত কিছু ব্যর্থ করিয়া দিয়া গেল—ভগবান ! বিশাখ,—বিশাখার নিকটে কতখানি সে অপরাধী হইয় রহিল । তাহার এত ভালবাসা, এত•••সে কাঙাল হুহয়৷ গেছে ---মোহন অস্থির চঞ্চল মনে কথন ছুটিতে আরম্ভ করিয়াছে । মন্দিরের প্রাঙ্গণে আসিয়া মাথা ঠুকিতে ঠকিতে মোহন দেবতার নিকটে তাহার মনের অসংখ্য কথা জানাইতেছিল, মৃত্যুকামনা করিয়া বলিতেছিল, অপরাধী কি জবাব দিবে –যেন আর না ফিরিতে হয় । ভোর হইতে বিলম্ব নাই—ঋষি-মাষ্টারের ঘুম ভাঙিয়া