পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ এবং আপন পুস্ত্রীভূত উপকরণে অসীমকে অন্তরালে ফেলে, তাকে অপসারিত করে দিয়ে তিনি মহান পুরুষকে জানতে পারলেন । তখন র্তার যে কত ভার লাঘব হয়ে গেল, তা জীবনীতে লিখে গেছেন। জীবনের এই অনুভূতি যখন তার কাছে স্বম্পষ্ট, তখন অকস্মাং বজ্রাঘাতের ন্তায় তার ধনসম্পদ ধূলিসাং হ’ল, পৈতৃক ব্যবসায় ঋণের দায়ে বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তিনি সহজে এই দারিদ্র্যকে বরণ করে নিতে পেরেছিলেন। আমরা দেখতে পাই যে মানুষের অহং যখন উপকরণ নিয়ে আসক্ত থাকে তখন সে দারিদ্র্যের ভার সইতে পারে না । কিন্তু পিতৃদেবকে এই দারিদ্র্য পীড়া দেয় নি। ধিনি আবাল্য ধনবিলাসে বেড়ে উঠেছেন, তিনি সেই ধনের অভাবছ:থকে দুরে সরিয়ে দিয়ে অবিচলিত হ’তে পেরেছিলেন, তার কারণ আত্ম যখন ১াপন আনন্দে পূর্ণ থাকে তখন কোনো বোঝাই তাকে অবনত করতে পারে না । মহৰ্ষি তার জীবনে সেই মুক্তিলাভ করেছিলেন। তিনি বিপদকালে অকাতরেই ঋণভার মোচন ক’রে দিলেন । বিষয়ী বন্ধুরা বলেছিলেন নানা কৌশলে এই ঋণদায় হ’তে অব্যাহতি পেতে, কিন্তু তিনি বললেন, ‘যায় যাকৃ সব কিছু ক্ষতি নেই, দুঃখ নেই।” তিনি পিতার ট্রাষ্ট সম্পত্তি বাচাতে পারতেন, কিন্তু তাও মহাজনদের হাতে সঁপে দিলেন । তিনি বহু আয়াসে পৰ্ব্বতপ্রমাণ ঋণ শোধ করলেন। আমরা মহধির জীবনের আরেকটা দিক দেখতে পাই। তিনি বলেন নি যে সংসারের সকল কৰ্ত্তব্যের বন্ধনকে ছিন্ন ক'রে বৈরাগ্য সাধন করতে হবে। তিনি গৃহী ছিলেন। তিনি বলেছেন ধে সংসারের মধ্যে বাস ক’রেই আসক্তির বন্ধন ধোচাতে হবে। “ফললাভে আসক্ত না হয়ে কৰ্ম্ম করতে হবে” গীতার এই বাণী ভিনি তার জীবনে প্রতিপালন করেন। তিনি বলেন যে মানুষ সংসারের কৰ্ত্তব্য পালন করবে কিন্তু মনকে মুক্ত রাখবে। মানুষ যখন পূর্ণ স্বরূপকে লাভ করে তখন সংসার তাকে ক্ষতির পীড়া দেয় না, দারিদ্র্যে তার চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করে না। তাই মহৰ্ষির জীবনে দেখতে পাই, স্বনাবিক যেমন তরঙ্গসঙ্কুল সমুত্রে ভীত না হয়ে উত্তীর্ণ হবার উদ্যোগ করে, তেমনি তিনি সংসারের শোকছুঃখের ভরঙ্গে দোলায়মান হয়েও জীবন-তরণী ●●S পরিচালনা করতে কুষ্টিত হন নি। তিনি বলেন সংসারধর্ম পালন করতে করতে তৎসত্ত্বেও মুক্তি পেতে হবে সংসারের এক্ট শিক্ষা। প্রমাণ করতে হবে মানুষ কেবল দেহুমন নিয়েই কাল যাপন - করবে না, দেহমনের অতীত যে আত্মা তারই আত্মিক ধৰ্ম্ম তাকে রক্ষা করতে হবে। তাকে সংসারের কৰ্ত্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করতে হবে যে সে পশুধর্শ্বের অতীত। আমাদের দেশবাসীরা বলে থাকেন যে এ সব মুনি-ঋষির কথা। আমরা সংসারী, আমরা পবিত্র ও মুক্ত হতে পারি না । কিন্তু এমন কথা মানুষের আত্মাবমাননার কথা । সংসার ও সন্ন্যাসকে বিভক্ত করা মানুষের শ্রেয়ঃ পথ নয়। গৃহী মানবকেষ্ট সন্ন্যাসী হ’তে “ হবে এবং নিরাসক্ত হয়ে সংসারধৰ্ম্ম পালন করতে হবে । আজকার দিনে পশ্চিমে ঘোর দুৰ্গতির কাল ঘনিয়ে এসেছে, দেশে-দেশে মানুষের মনে হিংস্রতার ও দ্বন্দ্বের অস্ত নাই । কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজকে যদি বলি যে বিজ্ঞানের পাঠশালা বন্ধ ক’রে গিরিগুহায় অরণ্যে চোখ বুজে বসে থাক তবে মিথ্যা বলা হবে। এ যেমন নিরর্থক, তেমনি যদি বলা যায় যে লুব্ধ স্বার্থকে বিস্তার কর, বিজ্ঞানের অস্ত্রে দুৰ্ব্বলকে মার, সেও তেমনি মিথ্যা কথা । কিন্তু বলতে হবে যে সংসারের সকল কৰ্ত্তব্য পালনের মধ্যেই মানুষের আত্মিক শক্তিকে জয়যুক্ত কর । সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন কর, কিন্তু নিরাসক্ত ভাবে, আত্মার উদার লোকে সভ্যতাকে উন্নীত কর । আজকের দিনে একথা বলে লাভ নেই যে ধনসম্পদের আহরণ বন্ধ কর, যা কিছু সব ত্যাগ কর, কিন্তু মানুষকে বলতে হবে যে ঐশ্বৰ্য্য-সাধনার ভিতর দিয়েই সন্ন্যাসী হও, সংসারের মধ্যে থেকেই তোমার মাহায্যের পরিচয় দাও । একদা ভারতবর্ষের সাধক সংসারের মধ্যে বাস করেই এই আধ্যাত্মিকতার সাধন করেছিলেন। তারা গৃহী ছিলেন। পরবর্তী যুগে এই সাধনাপথের পরিবর্তন হ’ল, মানুষ অঙ্গে বিভূতি মেখে জনসমাজ থেকে দূরে গিয়ে আপনাকে শূন্তের মধ্যে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু প্রাচীন যুগে মানুষ যে নিভৃত নির্জনতায় সাধনার আসন পেতেছিলেন সেখানেও সংসারীদের যাতায়াত ছিল । সব ত্যাগ করে