পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

((J9 সকল শিল্পধারার প্রভাব বিশেষভাবে ***६eाशय মধ্যে চীন ও জাপানের শিল্প অন্যতম। এই শিল্পধারার সহিত আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় সাধনেও ইণ্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েণ্টাল আটর্স অগ্রণী হইয়াছেন। এই সমিতির উদ্যোগেই কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে কলিকাতায় সৰ্ব্বপ্রথম চীন-শিল্পের একটি প্রদর্শনী হয়। সম্প্রতি ইহারই উদ্যোগে কলিকাতায় জাপানী কাঠখোদাই চিত্রের একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হইয়া গিয়াছে। এই চিত্রগুলি জাপানপ্রবাসী অধ্যাপক স্পেইট কর্তৃক সংগৃহীত ও তাহারই সৌজন্যে প্রদর্শিত হয়। পুরাতন ও আধুনিক প্রায় সাড়ে ছয় শত রঙীন কাঠখোদাই ছবি এই প্রদর্শনীতে ছিল । জাপানের রঙীন কাঠখোদাই ছবি জগতের সর্বত্র ছাপা ছবির অত্যুৎকৃষ্ট নমুনা হিসাবে সমাদৃত হইলেও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, জাপানের অভিজাত শিল্প-রসিকগণ অতীতে ইহাকে অবজ্ঞাই করিয়াছেন। তাহাদের মতে ইহা সাধারণ লোকেরই উপযুক্ত, শিল্পের আভিজাত্য ইহাতে নাই। আমাদের নিকট এই মত আশ্রদ্ধেয় হইতে পারে, কিন্তু কথাটার মধ্যে সত্যের আভাস আছে। এই সকল ছবি যাহারা প্রস্তুত করিতেন জীবিতকালে তাহার। জাপানের শিল্পীসমাজে বিশেষ সমাদৃত ছিলেন না, নিম্নস্তরের পটুয়৷ বলিয়াই পরিগণিত ছিলেন ; এই ছাপের ছবির ক্রেতাও ছিল সাধারণ লোক । সমসাময়িক অভিমত যাহাই হউক, আধুনিক শিল্পরসিকগণ জাপানের রঙীন কাঠখোদাই ছবিকে শ্রেষ্ঠ শিল্পনিদর্শন বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন। জনসাধারণের চিত্তেও যে স্বল্প রসবোধের বিস্তার সম্পূর্ণ অসম্ভব নহে, জন-মন ও শিল্পচেতনায় যে একাস্ত কোন বিরোধ নাই, ইহাতে তাহাই প্রতিপন্ন হয়। জাপানের শিল্পীদের মধ্যে যে-সকল বিভিন্ন শিল্পপস্থার প্রচলন ছিল তাহার অন্যতম উকিওইয়ে বা দৃশ্যমান সংসারের দর্পণ ; সংসারের দৈনন্দিন তুচ্ছ চিত্র ও ঘটনাই ইহার বিষয়বস্তু বলিয়াই এই পন্থার এইরূপ নামকরণ। রঙীন দাই ছবিও এই শ্রেণীর অন্তর্গত। হিশিকাওয়া ( জন্ম ১৬৩৮) এই কাঠখোদাই ছবির প্রথম ***ইতে ১৬৯৫ সালের মধ্যে তিনি প্রায় ত্রিশ স্থান পুস্তক এইভাবে চিত্রিত করিয়াছিলেন । ই হার চিত্রগুলি অবশু পুরাপুরি ছাপের কাজ নয় ; প্রথম একটি কাঠের ব্লক প্রেৰণসী N989 হইতে ছাপ লইয়া পরে তাহাতে হাতে স্বতন্ত্র বর্ণ-সংযোজন করা হইত। কিয়োনোবু নামে এক শিল্পী সৰ্ব্বপ্রথমে রঙীন ছবি সম্পূর্ণ ছাপিয়া বাহির করেন। ১৭৫০ হইতে ১৮৫০ সাল এই এক শত বৎসরই রঙীন কাঠখোদাই ছবির সর্বাপেক্ষা উন্নতির সময়—কিয়োনাগা, হারুনোবু, শিগেমাস, মাসোনাবু, উতামারে, টোয়োকুনি, হকুসাই, হিরোশিগে প্রভৃতি এই যুগের অন্তভুক্ত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে এই চিত্রধারা ক্রমশ ক্ষীণ হইয়া আসে— দেশীয় স্বল্প রঙের পরিবর্তে বিদেশী রঙের ব্যবহার, ও অন্যান্য সামাজিক পরিবর্তনই ইহার মূলে। কাঠখোদাই ছবি জাপানে কি ভাবে প্রস্তুত হইত তাহার একটু আভাস অন্ততঃ দেওয়া আবশুক । সম্পূর্ণ চিত্র প্রস্তুত হইত তিন জনের সহযোগে—সৰ্ব্বপ্রথমে চিত্রকর পরিকল্পনা বা নক্সা প্রস্তুত করিয়া দিতেন ; ই হারই নামে ছবিটি বাজারে চলিত। এনগ্রেভার এই নক্স। সকুর-কাঠের ব্লকে অঁাটিয়া লইয়া উহাতে নক্সাটি ছুরি দিয়া আঁকিয়া লইতেন। কাঠের অনাবগুক অংশ চাচিয়া বাদ দিলে শুধু নক্সাটিই কাঠের উপর ফুটিয়া উঠিত। অতঃপর প্রত্যেক রঙের জন্য আলাদা ব্লক করা হইলে ছবি ছাপিবার পালা। ছবি ছাপিতে রঙের স্বল্প গুড় ভগতের ফেনের সহিত মিশাইয়া লণ্ডয়া হইত—ইহাতে ছবির রং বিশেষ উজ্জল হইত। তুতগাছের ছাল হইতে প্রস্তুত এক রূপ কাগজে এই ছবি ছাপা হইত—এই কাগজে কালি চুপসাইয়। ম্বাইত না । জাপানী রঙীন কাঠখোদাই ছবির বিষয়বস্তু শিল্পী অনুসারে বহুবিচিত্র। উতামারো প্রধানত রমণীর প্রতিকৃতি আঁকিয়াছেন ; টোয়োকুনি আঁকিয়াছেন—অভিনেতাদের মূৰ্ত্তি, হকুসাই ও হিরোশিগে প্রধানত দৃগু আৰ্কয়াছেন । কিন্তু চিত্রের বিষয়বস্তু যাহাই হউক না কেন, ষে-শিল্পীর বা যে-যুগের চিত্রই হউক না কেন, সৰ্ব্বত্রই একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। এই সকল ছবি প্রস্তুত করিত সাধারণ লোক এবং ইহার ক্রেতাও ছিল সাধারণ লোক—স্বতরাং জনসাধারণের পক্ষে । যে-সকল বিষয় রুচিকর তাহারই ছবি শিল্পীদিগকে প্রস্তুত করিতে হইত। ইহার মধ্যে রমণীমূৰ্ত্তি, অভিনয় ও অভিনেতাদের চিত্র, ইতিহাসের কাহিনী, ও দুগুচিত্ৰই প্রধান ।