পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছাইচাপা আগুন ষ্ট্ৰব্ৰজমাধব ভট্টাচাৰ্য্য শহরের এক ধারে একতল বাড়ী। উপরটা টালি, নীচের দিকটা পাকা । ইহারই মধ্যে দুইটি পরিবার ; মধ্যে দরমার বেড়া। কলতলাটা একটু বাহির পানে, তাহার পাশে একটা ছোট জামগাছও আছে । দুই পরিবারের একই কলতলা। চৌবাচ্চ আছে ; বাশের চিরের একটা ছোট জলভরীর নলও আছে, একটা টিনের মগও আছে, এক টুকরা কাপড়কাচা সাবান আছে। এ সবই উভয় পরিবারের ; ཀྱཱ་སྣ་གཙོ་གཙོ་ আসে ; সেজন্য কোনদিন কোন কথা नाट् । চন্দনা বিধবা ; অল্প বয়সে বিধবা। রূপেন্দু তার বড় ভাই, বাস চালায়। আর ছোট ভাই গেীর, স্কুলে পড়ে । চন্দলা নিজে আলতা তৈয়ারী করে, আচার করে, জেলী করে। বোতলে করিয়া সুদৃশ্ব ইংরেজী লেবেল মারিয়া দাদার হাতে দেয়। রূপেন্দু তাহা নিৰ্দ্ধারিত দোকানে দিয়া নগদ দাম লইয়া আসে। সংসার ছোট, চলে ছোট ভাবে,— অভাব-অভিযোগ নাই । দরমার ওধারে ওরাও ছোট পরিবার, তবে ওরা নিজেদের মধ্যবিত্ত বলে ;—বলিতেও পারে । কেদারনাথ পেন্সন পান ; পুত্র রাজীব পাটনায় চাকরি, করে। কিছু পাঠায় না। স্ত্রী লইয়া সংসার চালাইয়া পিতার ভাগে অবশিষ্ট কিছু থাকে না। তৰু কেদারনাথের পুত্র আছে ও চাকরিও করে । কস্তা নন্দিনীর বিবাহ হইয়াছে গত বৎসর। সে এখন পিতামাতার নিকটেই আছে । স্বামী রেলে চাকরি করে, জব্বলপুরে তাহার প্রধান আডড। সুতরাং ওর মধ্যবিত্ত। তবু ছোটভাবে থাকে, তাই বিবাদবিসম্বাদ নাই । কেদারবাবু চন্দনাদের যেন করুণাপ্রবণ আশ্রিত-পালকের চক্ষে দেখেন। চন্দনা সেই মৰ্য্যাদাটুকু কেদারবাবুকে দিয়া তাহাকে জ্যেঠামহাশয় ডাকে আপ্যায়িত রাথিত। সুতরাং এক কলতলা হইলেও জলের অংশ লইয়৷ বিতণ্ডার স্বষ্টি এই পরিবারের অজ্ঞাতই ছিল। চন্দন সকালে উঠিয়াই দাদার জন্ত একটু জলযোগের ব্যবস্থা করিয়া দেয় ; দাদা ছয়টার আগেই বাহির হইয়া যান। ততক্ষণে গৌর ওঠে ; মুখ হাত পা ধুইয়া তাহারও কিছু জলযোগ হয়। সে নিজের পড়াশুনা লইয়া বসে। চন্দনার ওদিকে উকুনে আগুন ধরিয়া উঠিয়াছে। নিরামিষ য-হয় ফুটাইয়া লইয়া, সে মাছ রাধিতে বসে। মাছটুকু আনিয় দেয় সন্দিনীদের চাকরট, উহাদেরই বাজারের সঙ্গে । পড়া সাঙ্গ হইলে আবশুক-মত বাজার গৌরক্ট করিয়া দেয় । তার পর স্বান আহার সারিয়া সে স্কুলে চলিয়া যায়। চন্দন বসিয়া থাকিবে সেই বারোটা পৰ্য্যন্ত । রূপেন্দু তাহার খাকী পোষাক ছাড়িতে ছাড়িতে ডাক পাড়ে—“কই রে চন্দন, ভাত বাড়,।” "বাপ রে বাপ । ছেলে বাড়ী এলেন, আমনি যেন ডাকাত পড়ল। পাশের বাড়ীর সব লোকেরা কি বলবে বল তো ?” বলিয়া চন্দনী চুপ করে। রূপেন্দু আলনায় পাজামাটা ঝুলাইতে ঝুলাইতে বলে, “বলবে আবার কি ! বলবে ছেলেটার কি রাক্ষুসে খিদে !” চন্দন আলতার শিশির গায়ে লেবেল অগটিতে অাটিতে বলে, “আজ রান্ন হয় নি দাদা ?” রূপেন্দু এক লাফে ঘর ছাড়িয়া বাহিরে আসিয়া দাড়ায়,— “বলিস কি রে ঐ রান্না হয় নি ? খিদেয় যে পেটের মাড়ীতে টান ধরেছে।” “কি করি বল, একে শরীর খারাপ – তার ওপর পঞ্চাশ শিশি আলতায় লেবেল লাগালাম । এক হাতে আর পারি নে।”

  • মোটর ড্রাইভারের বোনের শরীর খারাপ কি রে ? বললে ঘুে লোকে হাসবে ?”

এই কথাটায় চন্দন খুব আঘাত পাহত । সে বলিল, “ফের দাদা ?—রান্না তো কোন কালে হয়ে গিয়েছে। জিরুবে, নাইবে, তার পরে তো গিলবে ? —না বাইরে থেকেই ইণকপাড়াপাড়ি—‘ভাত বাড়–যেন ডাকাত পড়েছে । কেন এটা কি হোটেল নাকি ? আমি আর পারব না, তুমি বে। আন ।” “ব রে মেয়ে ! কোন কথায় কোন কথা আনে দেখ। ওরে মুখু ড্ৰাইভারের হাতে কে মেয়ে দেবে ?” আবার শত ঝঙ্কারে চন্দন বলিয়া উঠিল, “মেয়ে নাদেয় ন-দেবে। কারুর দোরে হাত পাততে যাব নাকি ? বিয়ে করতে যাবে কেন ? বিধবা একটা বোন, ভাত কাপড়ে ঝি রাধুনী পেয়েছ ; তোমার আর বিয়ের দরকার ?” “বলি খেতে দিবি, না ঝগড়া ক’রে মরবি –কলতলা