পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●"の প্রশ্বাসী $N93N9 ফস্ করিয়া চন্দন বলিয়া ফেলে, “আমায় দিওঁ, আমি লিখে দেব ।” উৎফুল্প হইয়া নন্দিনী বলে, “দেবে ভাই ? সত্যি দেবে ? অামার ভাই কেমন যেন হয় না। তুমি ঠিক পারবে ।” আত্মপ্রশংসায় হাসিয়া লেবেল-মার আলতার শিশিগুলি এক পাশে সরাঈতে সরাইতে চন্দন বলে, “হ্য ঠিক পারবে ! ...কেমন করে জানলে তুমি পারব ?” মন্দিনীও চন্দনার দেখাদেখি শিশির গায়ে লেবেল মারিতে মারিতে বলে, “আহ, তা আর জানি না। তুমি ভাই কত লেখাপড় শিগেছ । গৌরকে তুমি পড়াও । আমি ভাই কি জানি ?” স্নান হাসি হাসিয়া উদাস কণ্ঠে চন্দন বলিল, “এত জেনেই বা কি হ’ল বল ? তোমার মী-জানাই বজায় থাক ভাই, আমার মত জেনে তোমার দরকার নেই : নন্দিনী একটু অপ্রস্তুত হইয়া পড়ে। সে বলে, “তোমার ভাই ঘুরে ফিরে ওই এক কথা । --মাক, আমার এ চিঠির জবাব তোমায় লিখে দিতে হবে ।” এই বাস্তবিকতার ছায়াপাতে শঙ্কায় শিহরিয়া চন্দনা বলিল, “যা, তাই আবার হয় নাকি ?" “কেন ? না হবে কেন ?” “যাঃ, পাগল নাকি ? তোর চিঠি আমি লিখে দেব কি ?” “দিলেই বা, আমার হয়ে তুমি লিখে দেবে । আগেকার দিনে তো সব মেয়েরাই তাই করত । তারা কি লেখাপড়া জানতো নাকি ? তারা তো পুরুষমানুষকে দিয়েও লেখাত p গম্ভীর হইয়া মাথা নীচু করিয়া চন্দন বলিল, “পুরুষমানুষকে দিয়ে লেখান সম্ভব । কিন্তু বিধবা মেয়েমান্সষকে দিয়ে স্বামীর প্রেমপত্র লেখাতে নেই নন ।” নন্দ যেন হতভম্ব হইয়া এতটুকু হইয়া গেল । কোন কথায় কোন কথা আসিয়া পড়ে। চন্দনা যেন কি ! নন্দিনীর ওসব কথা ভাল লাগে না । বিধবা তো কি হইয়াছে ? চিঠি লেখা বইতে নয়! সেই অনুরোধটুকুর জন্য এত কথা । বেচারীর চোথ ভরিয়া জল আসিল । সন্তপণে চিঠিখানি তুলিয়া লইয়া সে এক পা এক পা করিয়া দরমার বেড়ার ওপাশে চলিয়া গেল । চন্দন মুখ নীচু করিয়া শিশির গায়ে লেবেল আঁটিতে লাগিল । লেবেল মাটিতে আঁটিতে রৌত্র ঐ হলুদ রঙের বড় বাড়ীটার চিলে-কোঠার ওধারে চলিয়া গেল। গেীরও আসিয়া পড়িল । সব কাজ নিত্য যেরূপ হয় তেমনই হইল । কিন্তু থাকিয়া থাকিয়া চন্দনার মনে পড়িতে লাগিল—নন্দিনীর সেই স্নান বেদনাকাতর মুখখানি । আহ, বেচার শুধু শুধু ব্যথা পাইয়াছে। ও মাত্র নবপরিণীত বালিকাবধূ, বৈধব্যের অন্তর্যাতনা বুঝিবার মত অন্তভূতি ওর কোথায় ? শাস্ত্রে লেগে, বিধবার ইহা করিতে নাই, উহা করিতে নাই ;–করিতে যে কেন নাই তাহ বিধবা ছাড়া কয়জনই বা বোঝে ? যাহারা ভাবিলে বুঝিতে পারে, তাহারা ভাবে না। নববিবাহিতা সর্থীর প্রণয়লিপি বিধবাকে লিখিতে নাই, এরূপ কথা শাস্ত্রে লেখে নাই সত্য, কিন্তু চন্দনা নিশ্চয় জানে, মনপ্রাণ দিয়া জানে, ও-কাজ তাঁহাকে করিতে নাই। বিধবার রসলিপা থাকিতে নাই। ইজিতে, আভাসে, নেপথ্যে, অভিনয়ে কোনও প্রকারেই প্রণয়িনী হওয়া তাহার সাজে না। সাঁজে না কেন তাহী নন্দিনীর পত্র পড়িবার সময়েই চন্দন বুঝিয়াছে। তাহার মনের কোণে, তাহার অগোচরে, সেই অপরিচিত কোন একটি যুবকের ছবি ফুটিয়া উঠিয়াছে। সে অজ্ঞাতে দেখিয়াছে প্রিয়তমাকে পত্র লিখিবার জন্য নন্দিনীর স্বামীর বক্ষে কি ব্যাকুলত, চক্ষে কি উদ্ভাসন, তাহার শরীরকে অবসন্ন করিয়া সে কি পুলক ! চন্দনার নিজের মনে তাহার ছায়া পড়িয়াছে। তাহার দেহে মনে আসিয়াছে চাঞ্চল্য। মা হইবে কেন,—“তাতল সৈকতে বারিবিন্দু সম” ! ইহার প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নহে, চন্দন বোঝে —তাই সে নন্দিনীর ওই বিপুল আগ্রহকে ঠেলিয়া সরাইয়া দিয়াছে। কিন্তু এখন মন কেমন করে । আহা, নন্দ, বেচারী ! জোর করিয়া উঠিয়া গিয়া বেড়ার পাশে গিয়া সে ডাকিল, “নন্দ יין নন্দিনী প্রথমটায় উত্তর দিল না । দু-এক ডাকে উত্তর আসিল, “কি চন্দন ?” “চল ন কলতলায় গা ধুয়ে আসি। ও কি, চুলও তো বাধ হয় নি ?” “না ভাই, আজ আর চুল বাধব না।” “আয় চুল বেঁধে দিই।” “না ভাই, থাক, একেই তোমার কাজের অন্ত নেই, আবার আমার চুল।” “রাগ হ’ল বুঝি ?” চন্দন আর নন্দিনীর মুখের পানে সহজভাবে চাহিতে পারিতেছিল না, চক্ষু দুটি জলে ভর, মুখখানি বিষঃ-প্রতিমা। “অত রাগ করে না,—বলছি এস।” হাত টানিয়া সে লইয়া আসিল । গৌরকে দিয়া জ্যেঠামশায়দের ঘর হইতে ফিতা চিরুণী আনাইয়া লইল । চুলবাধা গা-ধোয়ার মধ্য দিয়া নন্দিনীর মুখের ভার অনেকটা কমিল বটে, কিন্তু গেল না। গৌর গেল সন্ধ্যার কিন্তু তাহার পর