পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ পরে, আলতার শিশি ভরিবার বাক্ষ আনিতে,—নন্দিনী -জ্বাসিয়া চন্দনার রান্নার ধারে বসিল । “কই চন্দন, দাও ভাই আলতার শিশি, আমি লেবেল লাগাব।” “না থাক, তুমি হাত নোংরা করবে কেন ?” “তুমি কর কেন r" “এ তোমার ভারী মজার প্রশ্ন ভাই —আমি আর তুমি ? ভগবান করুন আমার মত করা যেন তোমায় ন-ই করতে হয় ।” “তুমি দেবে না তো ?” “অমনি রাগ হয়ে গেল ? ঐ তো ডালায় সব রয়েছে, যা খুনী কর।” ‘ভবে থাক ৷” - অভিমানে নন্দিনীর মম ভারী হইয়া আসিতেছে দেখিয়া চন্দনী অন্ত কথা পাড়িল। “ও কাজে কি হবে ? চিঠি লেখা হ’ল ?” “না ভাই, চিঠি আমি আর লিখব না।” “চিঠি লিখবে না ? সে আবার একটা কথা হ’ল ?” দরজার পাশে গৌরের অঙ্ক কধিবার স্লেট পেন্সিল ছিল। নন্দিনী স্নেটের গায়ে আঁচড় টানিতে টানিতে বলিল, “না ভাঙ্গ, কথা আর না হবে কেন ? মা তো কতবার বলেন তোমার কাছে এসে চিঠি লিখতে। কোন বার আসি না। একবার যদি বা এলাম, তোমার তো আর তা লিখতে নেই ’ “তা এতবার যখন তোমার লেখায় হয়েছে, এবারেই বা হবে না কেন ?” “সে কথা তো আর হচ্ছে না, একবারই বা তুমি লিখে দিলে কি হয় ? অামার কি একখানা ভাল চিঠি লিখতে সাধ যায় না ?” চন্দনার মন এই অতি সরল কিশোরীটির কথায় চঞ্চল হইয়া উঠিতেছিল। সে খুন্তীখানা অস্বাভাবিকতার সহিত নাড়িতে নাড়িতে বলিল, “সাধ যায় নাকি ?—ত আমি না লিখে দিলে তুমি আর লিখবে না, সে কি হয় নন্দ ? তুমি বেশ পারবে, খুব পারবে, এতদিন তো পেরেছ। নিয়ে এস কাগজকলম,--আমার স্বমুখে বসে লেখ ভো !" প্লেটখানি যথাস্থানে রাখিয়া সে বলিল, “থাক ভাই ও কথায় আর দরকার নেই। এতদিন কি চিঠি লিখেছি সে তো আমি জানি।”—বলিয়া সে উঠিয়া গেল। নন্দিনীর গলার স্বরে সন্দিহান হইয়া চাহিতেই চন্দনা দেখিল নন্দিনী উঠিয়া চলিয়া যাইতেছে। সে কত ডাকিল— “নন্দ ও-নন্দ ।” কিন্তু অভিমানিনী নন্দ চলিয়াই গেল। তরকারীটা নামাইয়া ওধারে যাইবে ভাবিতেছে, গৌর জাসিয়া একগাদা পেইবোর্ডের লাল লম্বা লম্বা বাল্প ঘরে | ছাইচাপা আগুনু (h్స “কত বাক্স পেলি রে গৌর ?” “দু-শ, দিদি ” “কত इ'ल t" “আড়াই টাকা lo “সব বাকী রইল তো ?” “নী দেড় টাকা রইল ; একটা দিয়ে এলাম।” “যা হাত পা ধুয়ে ফেল।” হাত পা ধুইয়া আসিয়া গৌর বলিল, “এখন পড়াবে দিদি ?” “বোস এই রান্নাঘরের দোরে। ইংরিজী বই থোল।” গেীর পড়িতে লাগিল। সহজভাবেই চন্দন তাহাকে পড়াইতে লাগিল। রাত্রি অধিক হইল। দশটার আগেই গেীর খাওয়া সারিয়া শুইয়া পড়িয়াছে । বারটায় রূপেন্দু আসিবে। চনানা ধীরে ধীরে মন্দিনীর ঘরে গেল । নন্দিলী তখনও শোয় নাই । বাতি জালিয়া বসিয়া *լիtէ, “কি ভাবছ নন্দ ?” “চন্দন এসেছ ?” “দেপি তোমার চিঠি ” “কেন ভাই ?” “দাও গে, জবাব লিখে দিই।” অভিমাণের বাধ ভাঙিয়া গেল, ক্ষিপ্ৰ হস্তে কাগজ কলম আনিয়া দিয়া সে পাশে বসিল ৮-বিধবা পতিবিয়োগবিধুরা চন্দন কল্পিতা প্রেমিক সাজিয়া কল্পিত স্বামীকে পত্র লিপিতে বসিল । সে কত বৎসর পূর্বের কথা ! এই কল্পনা সেদিন সভ্য ছিল । এই চিঠি লেখা ছিল অক্ষরে অক্ষরে পরিপূর্ণ। সে দিন তাহার প্রণয় ছিল যাদুমন্ধের ন্যায়, স্পষ্টোচ্চারিত অথচ বুদ্ধির অনধিগম্য। সেদিন স্বামী ছিলেন জীবন্ত দেবতা, আশাপরিপূর স্বৰণ বিগ্রহ। পত্র ছিল প্রাণ পুলকের অধিকার—অভিনন্দন। সে পত্রের আয়োজনে ছিল উৎসাহ, রচনায় ছিল পুলক, রোমাঞ্চ ; প্রতিটি অক্ষরে, পংক্তিতে, ব্যঞ্জনায় ছিল অধীর আগ্রহের সংযত বিকাশ। তাহার অপেক্ষায় ছিল পল-গণনার বিরক্তি, তাহার প্রাপ্তিতে ছিল ভুবনদোলান অবর্ণনীয় চঞ্চলতা। আজ সেই সে চন্দন, সেই প্রণয়লিপি, সেই স্বামি-স্ত্রীর অপরূপ গ্রন্থীসম্বন্ধ । তথাপি কি হাস্যকর পাপ অভিনয় । চন্দনার বক্ষ দুরু দুরু কাপে, অতীতের যথার্থ সত্য আর বর্তমানের অর্থহীন মিথ্যা অভিনয়ের দ্বন্দ্বে। সে ছত্রের পর ছত্র লিখিয়া চলে – “প্রিয়তমেধু,-মেয়েমানুষ, চিঠি লিখতে তোমার মত পারব মা, কিন্তু প্রাণের কথাটুকু জানাবার ব্যাকুলতা...” এই ভাবে। চিঠি লেখা শেষ হয়। নন্দিনী বলে, “দেখ তো