পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

אסרo এমন চিঠি আমি কখনও লিখতে পারি ! তোমার এক কথা । সকালে যখন আমায় আমন ক'রে বললে, আমার এত দুঃখ হয়েছিল, ভেবেছিলাম আর তোমার কাছে কোন দিন কিছু চাইব না। কিন্তু আবার তোমার কাছে না গিয়ে পারলাম না।” চন্দনার বুকে যেন নক্ষত্ররাজ্যের বাতাসের স্পর্শ লাগিতেছে । সে কিছুতেই সে কম্পনকে বাধিয়া রাখিতে পারিতেছে না। তবুও সে মুখে হাসি ফুটাইয়া বলিল, “এখন রাগ গেছে ত ? আমি লিখে দিলাম তবে হ’ল। বাপ রে বাপ, কি রাগ মেয়ের । আমার তোমার কাজ ক’রে কি লাভ বল তো ? এতক্ষণে আমার পঞ্চাশ শিশি আলতা গোলা হ’ত ” কৃতজ্ঞতায় নন্দিনীর দুই চক্ষু চিকচিক্‌ করিয়া উঠিল । “আচ্ছ ভাই, কাল আমি তোমার পঞ্চাশ শিশি আলতায় লেবেল লাগিয়ে দেব।” সহসা ডাক আসিল, “কই রে চন্দন, কোথায় গেলি । মেয়ের শুধু আড্ডা আর আড্ডা।” দুই জনে একসঙ্গে হাসিয়া উঠিল । চন্দন তবু একটু ব্যস্ত হইয়া বলিল, “ষাই ভাই, দেরী আর করব না ; নইলে দাদা আবার চেচাবে ।” দাদাকে খাইতে দেওয়া ; তার পর আর কাজের কিছুই প্রায় বাকী থাকে না । নিজে যৎসামান্ত জলযোগ করিয়া গুইয়া পড়ে। কিন্তু পোড়া মনে কেবলই বাজে—“ন-জানা কোন অজ্ঞাত পুরুষকে সে লিখিয়াছে প্রিয়তম ! কে সে ? কোন দিন যদি এ কথা প্রকাশ পায় ? সেদিন ? সেদিন ক হইবে ? লজ্জা না ভয় ? হয়ত প্রণয়লোলুপ সেই যুবকটি বলিবে, এত কথা আপনি জানতেন, ও কম নন তো ? —ও সে কি লজ্জার কথা ! হয়তো বা বলিবে, তুমিই চন্দন, আমার সর্থীর সর্থী –তোমার কথাই-- * সেই তো সেদিন কথা হইতেছিল জামাই আসিবে। জামাই হয়তো আসিয়াছে। কি নাম তার ? স্বরথ ? বেশ নাম । স্বরথ ঐ নন্দিনীর ঘরে বসিয়া, চন্দনা ত আর সে কথা জানে না । সে যেমন নিত্য যায়, সেদিনও গেল – “কই গে নন্দরাণী ।” নন্দিনী খস খস করিয়া বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়ায় । মাথায় কাপড় একটু টানিয়া দেয়। “ও কি, ঘোমটা কেন ?" পরক্ষণেই চক্ষু পড়িয়া যায় শয্যায় উপবিষ্ট দিব্যকাস্তি ঐ যুবকটির পানে। কণ্ঠকে সত্ৰীড় সংঘত করিয়া বলে, “ওম, উনি বসে, বলিস নি ; খঙ্গি মেয়ে । চব্বিশ ঘণ্টা কি পুটুর পুটুর করিস বল তো ? এমনি তো মুখে কথা নেই।” "প্রবাসী ege গায়ে স্নেহসূচক ধাক্কা দিয়া নন্দিনী বলে, “কি আবার বলছিলাম,—ঘরে এসেছিলাম, একটু কাজ ছিল ।” ধীরে ধীরে স্বরথ না শুনিতে পায় এই ভাবে চন্দন বলে, “কাজই ত, আমি কি আর বলছি কাজ নয় ।” কথা হইতেছে আগাগোড় স্বরথেরই চোখের উপর । স্বরথ এতক্ষণে কথা কহে, “দু-জনায় ত খুব আলাপ জমে উঠল। আমি একটু পরিচিত হই।---আপনিই তাকি বলি,—ব্যাসের গণেশ বলি, না গণেশের ব্যাস বলি ! না, আপনি বোধ হয় ব্যাসদেবকেও হার মানিয়েছেন, নিজেই রচয়িত্রী আর নিজেই লেখিকা ।” চন্দন হাসিয়া বলে, “আমি কি আর অষ্টাদশ পৰ্ব্ব মহাভারত লিখতে ভরসা পাই ; আমি রামায়ণের বাছাবাছা দুটি কাণ্ড লেখবার চেষ্টা করেছি।” রহস্য বুঝিতে পারিয়া নব্যটি বলে, “কোন দুটি দিদি ? আদিকাণ্ড, আর. কোনটা বলি ? --মজা দেখেছেন,— রামায়ণে এমন দুটি কাও নেই যাতে শুধুই কীৰ্ত্তি আর আনন্দ । বিয়োগাস্ত না হলে যেন বাল্মীকি লিখতে পারতেন না ।” কথাটায় কেমন একটা সত্যের ছায়া দেখিয়া চন্দন শিহরিয়া উঠে। তথাপি সংযত মিষ্ট স্বরে বলে, “নিজের কোলে মাছ টানতে গিয়ে কেন আর বাল্মীকি বেচারীকে দোষ দিচ্ছেন । উপযুক্ত নায়ক পেয়ে আমি কিষ্কিন্ধ্য আর লঙ্কা কাও দুটিই বর্ণনা করছিলাম। আমার লেখায় তিনি ফুটলেক্ট হ’ল ?” হাসিয়া স্বরথ বলে, “তা আপনি কৃতকাৰ্য্য হয়েছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা মস্ত ভুল ক’রে গেছেন । সেই মহা বীরটির পত্নীদায় ব’লে ত কোন দায় ছিল না, আপনার নায়ক কিন্তু---” কথা শেষ হইবার পূর্বেই চন্দনা বলে, “তা হোক, বিবাহ তার না হ’তে পারে। কিন্তু তার স্বজাতীয়া কিষ্কিন্ধ্যাবাসিনীরা যদি অক্ষর-পরিচয় জানতেন, দু-চার খানা চিঠিপেতে বা দিতে র্তার কোন আপত্তি হ’ত না । আর তিনি যে এমন করেন নি একথাও বাল্মীকি লেখেন না।” - একটু গম্ভীর হইয়া স্বরথ বলিল, “তা শুনলাম চিঠি ত আপনিই দিয়েছেন।” চন্দনা একটু শিহরিয়া ওঠে, “তাই তো কথাটা বড় অন্যায় ও অসঙ্গত ভাবে বলা হইয়াছে তো !” “দিলামই বা আমি ! সে তো নকল আমি । আসল , যে সে আসলই আছে।” নন্দিনী বাহির হইয়া গিয়াছে। কক্ষে তাহারা শুধু झुझे छन । স্বরথ বলে, “আশ্চৰ্য্য আপনার চিঠিগুলি । আমি