পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ এই আকস্মিক আঘাতে প্রায় বিবর্ণ হইয়া স্বরথ বলে, “ন, সে কথা তো আমি বলছি না। আমি খুব সরলভাবেই আমার হৃদয়ের সত্যকার নিষ্পাপ একটা অভাব তোমাকে জানিয়েছিলাম। আশা আমি নিশ্চয়ই করি নি তুমি তা পূরণ করবে। তোমার দাদা যে দেবতুল্য তা আমি জানি।” একটু চমকিয়া চন্দন বলিল, “কি রকম ? দাদার সঙ্গে আপনার পরিচয় হ’ল কি ক'রে ?” স্বরথ হাসিয়া বলিল, “সে-কথা শুনে তোমার মনে কষ্টষ্ট হবে। আজ সকালে একটা ট্যাক্সি ষ্ট্যাণ্ডে তোমার মুগের আদল পেয়ে আমি সাহস করে এই বাডীর ঠিকানা বলি। আমার তখন ট্যাক্সির প্রয়োজনও ছিল । তার সঙ্গে কথা কয়ে তার পরিচয় নিলাম, আলাপ জমে উঠল, কৰ্ত্তব্য কাজ ভুলে দু-জনে খুব বেড়ালাম আর গল্প করলাম। সত্য দেবতুল্য লোক ! অদ্ভুত মনের জোর ।" “দাদ তো বাস চালান ।” “ত তিনি বললেন, এপল বাস্থান রিপেয়ার হচ্ছে ব’লে ট্যাক্সিই চালাচ্ছেন।” “দাদাকে কত ভাড়া দিলেম ?” “ছি চন্দন ! অযথা এত রূঢ় হও কেন বল ত ? তোমার দীদ। ট্যাক্সি চালান, আমি চালাই ট্রেন,—দু-জনেই তো অটোমোবাইল-পন্থী ! এতে গর্বের কি--- ?” চন্দন রেকাব আগাইয়া দিয়া পাখা লইয়া বসিল । দেখিতে দেখিতে গৌর আসিয়া পড়িল । সুরথ বলিল, “চন্দন, একটি ভিক্ষণ চাইব, দেবে ?” “কি বলুন। কি চাইবেন ন-জেনে দেব বলার মত দাতা আমি নই, বিশেষতঃ আপনাদের কাছে । সাধ্যমত হ’লে নিশ্চয় দেব, তা আপনিও জানেন ।” "গৌরকে ছেড়ে দেবে এবেল ? যেতাম।” “কেন আমি ?" “যা হবে না তার প্রলোভল কেন দেখাও । ধেতে দিলেই যথেষ্ট।” “আমি ওকে এসব বিলাস থেকে তফাৎ রাখি আর রাখতে চাই--গৌর, মুর্থ হাত পা ধুয়ে এস, এই সঙ্গে সেরে লাও ৷ কলি দাদা অাম এনেছেন ।” স্বরথ বলিল, “তবে গৌর যাবে না ?” “যাবে বইকি ! আপনি বলেছেন, আর যাবে না। তবে আমিও একটু ভিক্ষা করব ।” আগ্রহ ভরে স্বরথ বলে, “কি বল ?” “আজি না খেয়েই সবাই থিয়েটারে যান । এসে যা-হুয় এখানেই খাবেন।” “রাত হবে না ?” একটু থিয়েটারে গৌরকে ছনইচাপন কনগুন qRa “সেই জন্তই তো বলছিলাম, দাদারও রাত হয় কি না । সী-হয় এক সঙ্গেই দু-জনে--” “বেশ, বেশ,•••” চননা বলিল, “যা তো গেীর, তোর নমৗদিদিকে ডেকে নিয়ে আয় ভো। আমনি জোঠাইমাকে বলে আসবি আজ লশ আর স্বরথ বাবু এখানেই থাবেন।” গেীর নদিনীকে লইয়া ফিরিয়া আসিল । কিছুক্ষণ পরে আনন্দবিহ্বল গৌরকে লইয়া মন্দিনী আর স্থরথ থিয়েটারে গেল । রাত্রে আনন্দের মধ্য দিয়া অীহারাদি-পৰ্ব্ব সমাধা হইল। চমৎকার-স্বভাব রূপেন্দুর কথায় চন্দন-স্বরথের বিতণ্ডার সকল লঘু মেশগুলি কোথায় সরিয়। গিয়াছিল । তাহার বান্ত্রিক জীবনের একটি রাজিতে এই সুন্দর সামাজিক আনন্দের স্বরটুকু ভরিয়া রহিল। আর সেই স্থর আরও নিবিড় আরও মুখর হইয়৷ বাজিতে লাগিল চন্দনার বক্ষের কন্দরে কন্দরে । সে কিছুতেই তাহার মনকে স্বরথের দিব্য স্বভাব ও রূপ হইতে টানিয়া আনিতে পারে না। সে কিছুতেই ভুলিতে পারে ন! এই ব্যক্তিটিকে সে পরিপূর্ণ প্রেমরসে সিক্ত করিয়া পত্র দিয়াছে। তাহার কল্পলোকের প্রেমিক পত্রবিনিময়কারী এত সত্য, এত জীবন্ত । কল্পনা যখন প্রত্যক্ষ হয়, আদর্শবাদীর জীবনে সে আসে এক তুমুল বিপ্লবের সময়। এই বিপ্লবকেই কেন্দ্র করিয়া জগতে কত অসাধ্য সাধনষ্ট হইয়া গিয়াছে । সকলেই চারি দিকে নিদ্রাস্তব্ধ। এক চশমা তাহার বক্ষে এই গুরুভার ৪ আgযঙ্গিক চিন্তাভার লইয়া সংসারের সকল কৰ্ম্ম শেষ করিয়া শয্যা বিছাঈল । শয্যাবিছান তাহার অধিকারে, কিন্তু চোপের পাতায় ঘুম ডাকিয় আনা তাহার অধিকারের বাহিরের বস্তু। ঐ চিঠিগুলিই তাহার শত্রু । ঐগুলিকে তাঙ্কার উদ্ধার করিতেই হইবে । এই চিন্তা তাহার মস্তিষ্কে শতদ"ষ্ট্রা কীটের ন্যায় সংশ্রে সঙ্গত্রে দংশিতে লাগিল। সে-বিষ তাহার সর্বাঙ্গ ছাইয়া গেল। গভীর রাত্রের এই ভাবের উদগত চিস্ত মাথায় খুন চাপাইয়া দেয়। চন্দন ধীরে ধীরে শয্যা ত্যাগ করিয়া উঠিল। দরমার বেড় ঠেলিয়া সুরথের ঘরের সম্মুখে দাডাইল। ভয়ে ও উত্তেজনায় তাঙ্গর সর্বাঙ্গ ঠক্ ঠক্‌ করিয়া কাপে, তবু তাহার মাথার খুন নামিল না। গ্রীষ্মকাল। দুয়ার অর্গলীন, উন্মুক্ত। ভিতরে মশারি খাটান, নিস্তব্ধতা বিরাজমান। চন্দন পা টিপিয়া টিপিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। অালম হইতে স্বরথের কোটের পকেট হইতে চাবি উদ্ধারে বিলম্ব হইল না। কাৰ্য্য