পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন o নৌকার প্রতীক্ষায় এক দুই ক’রে পাচ দিন কেটে গেল । সঙ্গীদের সঙ্গে ভোট, খাম, অমৃদ্ধ (দক্ষিণ-চীন ও মঙ্গোলীয়ার প্রাস্তের দক্ষিণে তিব্বতীয় প্রদেশ ) প্রভৃতি দেশের নানা চমকপ্রদ গল্প শুনিয়াও দিন কাটা ভার হইল। এই সময় মন্ত্রজপের তিব্বতীয় প্রথা অভ্যাস করিলাম। এখানে অধিকাংশ লোকই এক হাতে মালী অন্য হাতে জপচক্র ঘুরায়। জপচক্ৰ তাম্র বা রৌপ্যের চোঙ্গা ; চোঙ্গার ভিতর লক্ষাধিক মন্ত্র কাগজে লিখিয়া ভরিয়া দেওয়া হয় এবং একবার ঘুরাইলে তত-সংগ্যক মন্ত্রজপের ফললাভ হয়। অতি বৃহৎ জপচক্রও আছে, তাহা জলের স্রোতের সাহায্যে বা মানুষের গায়ের জোরে জাতার মত ঘুরানো হয়, কোথাও কোথাও উষ্ণবায়ু-যন্ত্র ( hot air motor )যোগেও চালানো হয় । তিব্বতে বিদ্যুৎশক্তির প্রচলন হষ্টলে তাহাও জপচক্রচালনে ব্যবহৃত হইবে সন্দেহ নাই । যক্ষশক্তিযোগে পুণ্যসঞ্চয়ে তিব্বত এখনও ভারত অপেক্ষ শতবর্ষ অগ্রগামী ! যাহা হউক, আমার কাছে মাণী (জপচক্র) ছিল না, তবে নেপাল হইতে এক জপমালা সঙ্গে আনিয়াছিলাম। পথে সময়ে অসময়ে ইহা ব্যবহার করিতাম, কিন্তু এতদিনে আসল স্বযোগ জুটিল। তিব্বতীয়ের অবলোকিতেশ্বরের মন্ত্র ( ওঁ মণি পদ্মে ই ) বা বজ্রসত্ত্বের মন্ত্র ( ওঁ বজ্রসত্ত্ব স্থ, ওঁ বজ্রগুরু পদ্মসিদ্ধি ই, ওঁ আী হু' ) জপ করে, আমি সে-স্থলে “নমে বুদ্ধায়” জপ করিতাম। তিব্বতী মালায় এক শত আট গুটিকা এবং একটি স্বমেরু থাকে। ইহা ভিন্ন তিন গুচ্ছে দশ-দশটি করিয়া রৌপ্য বা অন্ত ধাতুর পুতি মালার সঙ্গে বাধা। পুতিগুলি ছাগল বা হরিণের নরম চামড়ায় গাথা, এই জন্য কোন পুতি উপরে টানিয়া দিলে আটকাইয়া থাকে। একবার মালা জপ তইলে প্রথম গুচ্ছের প্রথম পুতিটি টানিয়া উপরে চড়ানো হয় এবং এইরূপে দশবার মালা জপ হইলে প্রখম গুচ্ছের দশটি পুতিই উপরে টানা হয়, তাহার অর্থ সহস্ৰাধিক মন্ত্রজপ হইল। প্রথম গুচ্ছের দশটি পুতিই উপরে উঠিলে দ্বিতীয়ের একটি উঠে, অর্থাং দ্বিতীয় দশটি উঠিলে দশ হাজার মন্ত্রজপ বুঝায় এবং ঐক্কপে তৃতীয় দশটি উঠিলে লক্ষাধিক মন্ত্ৰ জপ হয়। এখানে ঐরুপে কয়েক লক্ষ বার মন্ত্র জপ হইল। চুপ করিয়া বসিদ্ধা থাকা অপেক্ষ পুণ্যার্জন ভাল । পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, এখানে ব্রহ্মপুরের চড়া অতি বিস্তুত । স্রোত দুই ভাগে বিভক্ত, দুইটির উপরই রঙ্গু-সেতুতে লোক পারাপার হয়। পশু বা বৃহৎ মোট পারের জন্ত কিছু দূরে খেয়াঘাট আছে। ঘাট হইতে কিছু দূরে গ্রামের পাশে একটি পাহাড় একাকী ধাড়াইয়া আছে, তাহারই শিরে জোঙ, বা কলেক্টরী অর্থাৎ সেখানে নুতন গৃহনিৰ্ম্মাণ চলিতেছে এবং নিৰ্ম্মাণকার্য্যে ভোটায় নিয়ম অনুসারে বেগার-মজুরীতেই হইতেছে । এদেশে প্রত্যেক গৃহপিছু এক জন লোককে কিয়ংকাল সরকারী বেগার খাটিতে হয়, অবশু, যাহারা ধনী তাহারা অপরকে মজুরীর পয়সা দিয়া উদ্ধার পায় । ঐ সময় দলে দলে স্ত্রী পুরুষ (স্ত্রীলোকই বেশী) চমরীর পশমে তৈয়ারী থলীতে নদীতীরের পাথর বোঝাই করিয়া গান গাহিয়া জোঙ-এ লইয়া যাইতেছিল। কাজের সঙ্গে সঙ্গে লাফালাফি-গেলা, হামি-ঠাট্ট সবই চলিতেছিল । স্ত্রীলোকদের কাপড় টানিয়া উলঙ্গ করাও ইতাদের কাছে রহস্য মাত্র! স্নানের সময় স্ত্রীলোকদের দৃষ্টির মধ্যেই নগ্লাবস্থায় ছুটাছুটি, স্নান, কাদাছিটানো এসবও চলিতেছিল। সময় গ্রীষ্মকাল হইলেও নদীর জল অতিশয় ঠাণ্ড, সেজন্য আমি আল্লক্ষণ জলে থাকিতেও কষ্ট পাইতাম, কিন্তু ভোটীয় ছেলেরা বহুক্ষণ সীতার কাটিত দেখিতাম । ল্যসে গ্রামে প্রথম দিনই নমাজের আজানের ডাক শুনিয়াছিলাম, তখন সেটা নিজের ভ্রম ভাবিয়াছিলাম, পরে জানিলাম ঐ গ্রামে কয়েক ঘর মুসলমান ভোটীয়ের বাস