পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক কুটুম্ব শাসন করতে ? সে যখন বাড়ী নেই তখন আমরাই অভিভাবক। সৰ্ব্ব চৌধুরী বলিলেন–ছুড়ীটাও নাকি বড্ড বাড়িয়েছে : শুনতে পাই । কালীমৰ্ম্ম-জ্যাঠা বলিলেন—তাই ত শুনছি। খারাপ কিনা ? তাতে স্বামী ওই রকম। : কালীময়-জ্যাঠা আমাকে যতই বোকা ভাবুন আমার * কিন্তু বুঝিতে কিছুই বাকী রহিল না। খুড়ীমার উপর অভিমান চলিয় গেল, ভাবিলাম ইহারা হয়ত খুড়ীমাকে কোন একটা শক্ত কথা শুনাইবে কিংবা অপদস্থ করিবে । কথাটা খুড়ীমাকে জানাইয়। সাবধান করিয়া দিলে হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ভাবিয়াও দেপিলাম খুড়ীমাকে এ-কথা আমি বলিতে পারিব ন!—কোন মতেই নয় । { শাস্তিরামের উপর ভয়ানক রাগ হইল। তুমি কেন বাপু এখানে আসিয়াছ পরের সংসারের শাস্তি নষ্ট করিতে? নিজের দেশে কেন চলিয়া যাও না ? এত দিন কুটুম্ববাড়ী }পডিয়া থাকিতে লজ্জাও ভ হওয়া উচিত ছিল । ইহার কিছু দিন পরে আমি কাকার বাসায় থাকিয় লেখাপড়, করিব বলিয় গ্রাম হইতে চলিয়৷ গেলাম। ধাইবার আগে খুড়ানার সঙ্গে দেখা করিতে গেলাম। মাকে ছাড়িয় ঘাইতে স্বত কষ্ট হইতেছিল, খুড়ীমাকে ছাড়িয়া যাইতেও তেমনি । খুড়ীমা আদর করিয়া বলিলেন—পাবু, লেখাপড়া শিখে কত বিদ্বান হয়ে আসবে, কত বড় চাকুরী করবে ! মনে থাকবে ত খুড়ীমার কথা ? লাজুক মুগে বলিলাম—খুব মনে ভুলবে না খুড়ীমা । খুড়াম তাড়াতাড়ি কয়েক পা আগাঙ্গয়া আসিয়া বলিলেন—সত্যি বলছিস্ ভুলবি নে কখনও পাবু ? জোর গলায় বলিলাম— কক্ষনে না। বলিয়াই তাহার মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলাম তিনি সজল চোখে কিন্তু হাসিমুখে আমার দিকে চাহিয়া আছেন। সত্যই বলিতেছি অনিচ্ছার সহিত । t বয়েসটা t থাকবে। আমি চলিয়া আসিয়াছিলাম নিতাস্ত গ্রাম ছাড়িতে হইল বাবার কড়া খুড়ীমা BS হকুমে। খুড়ীমাকে কোন ভয়ানক বিপদের মুখে ফেলিয়া চলিয়! যাইতেছি আমার মন যেন বলিতেছিল। থাকিলেই বা ছেলেমানুষ কি করিতে পারিতাম ? মাস ছয়-সাত পরে গরমের ছুটিভে বাড়ী ফিরিয়া শুনিলাম মাঘ মাসে শান্তিরাম খুড়ীমাকে লইয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। কেহই তাহাদের কোন সন্ধান করে নাই, কোন আবশ্যক বিবেচনা করে নাই। খুড়ীমার ইতিহাসের এই শেষ। তার পর দু-এক বার খুড়ীমার সংবাদ যে নিতাস্ত না পাইয়াছি এমন নয়, যেমন, একবার যখন থার্ড ক্লাসে পড়ি তখন শুনিয়াছিলাম আমাদের গ্রামের কাহারা চাকদায় গঙ্গাস্নান করিতে গিয়া খুড়ীমাকে দেপিয়াছে—ভাল জাম-কাপড় পরনে, গায়ে এক-গা গহনা ইত্যাদি । আরও একবার ফাষ্ট ক্লাসে পড়িবার সময় গায়ে গুজব রটিয়াছিল কাচরাপাড়ার বাজারে খুড়ীমা’র সঙ্গে আমাদের অমূল্য জেলের মা না মসিীমার দেথা হইয়াছে, খুড়ীমার সে চেহারা আর নাহ, শাস্তিরাম নাকি ফেলিয়া পলাইয়াছে, ইত্যাদি । খুড়ীমার নিরুদ্দেশ হওয়ার ৮-সাত বছর পরের কথা এ-সব। কিন্তু এ-সব কথার কত দূর মুল্য আছে আমি জানি না। আমার ও মনে হয় না গ। ছাড়িয়া যাওয়ার পরে খুড়ীম কে কখনও কেই কোথাও দেখিয়াছে । ধাকৃ, এ অতি সাধারণ কথা । সব জায়গায় সচরাচর ঘটিয়৷ আসিতেছে, ইহার মধ্যে মৃতলত্ব কি আছে, তা নয় । আমার মনের সঙ্গে খুড়ামার এই ইতিহাসের সম্বন্ধ কিন্তু খুব সাধারণ নয়। আসল কথাটা সেপালেঙ্গ । বড় ত হইলাম, কলেজে পড়িলাম, কলিকাতায় আসিলাম। বাল্যের কত বন্ধুত্ব, কত গলাগলি ভাব, নূতন বন্ধুলাভের জোয়ারের মূপে কোথায় মিলাইয় গেল । খুড়ামাকে কিন্তু আমি ভুলিলাম না। এ-পবর কি কেউ জানে, কলেজের ছুটিতে দেশে ফিরিবার সময় নৈহাটা কি কাচরাপাড় ষ্টেশনে গাড়ী আসিলেই কত বার ভাবিয়াছি এই সব জায়গায় কোথাও হয়ন্ত বুড়া আছেন। নামিয়া কথন ও অনুসন্ধান করি নাঙ্গ বটে, বি মৃত্ত ব্যাকুল হইয়া ভাবিয়াছি তার কথা। কলিকাতার কোন কুপুরীর সহিত তাহার কোন যোগ আমি মনেও স্থান দিতে পারি