পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামমোহন রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষের ভূ-সংস্থানের মধ্যে একটি ঐক্য আছে। এর উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে সমুদ্রের বেষ্টন, পূৰ্ব্ব দিকে গভীর অরণ্য, কেবল পশ্চিমে দুর্গম গিরিসঙ্কটের পথ ভৌগোলিক আকৃতির দিক থেকে তার অখণ্ডত, কিন্তু লোকবসতির দিক থেকে সে ছিন্নবিচ্ছিন্ন। আচারে বিচারে, ধৰ্ম্মে ভাষায় ভারতবর্ষ পদে পদে খণ্ডিত । এখানে যারা পাশাপাশি আছে, তারা মিলতে চায় না। এই দুৰ্ব্বলতা দ্বারা ভারতবর্ষ ভারাক্রাস্ত, আত্মরক্ষায় অক্ষম । আর একটি দুৰ্গতি স্থায়ী হয়ে এ দেশকে জীর্ণ করেছে । অশধ গাছ পুরাতন মন্দিরকে সৰ্ব্বাঙ্গে বিদীর্ণ করে তাকে শিকড়ে শিকড়ে যেমন অঁাকড়ে থাকে তেমনি ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসীদের মূঢ় সংস্কার-জাল দেশের চিত্তকে বিচ্ছিন্ন ক'রে ফেলে জড়িয়ে রয়েছে । আগাছার মতো অন্ধসংস্কারের একটা জোর আছে, তার জন্য চাষ-আবাদের প্রয়োজন হয় ন, আপনি বেড়ে ওঠে, মরতে চায় না। কিন্তু বিশুদ্ধ জ্ঞানের ও ধৰ্ম্মের উৎকর্ষের জন্য নিরস্তর সাধনা চাই । আমাদের দুর্ভাগ্য দেশে যেখানে উদার ক্ষেত্রে ফল ফলতে পারত সেখানে সৰ্ব্বপ্রকার মুক্তির অন্তরায় উত্তঙ্গ হয়ে উঠে অস্বাস্থ্যকর নিবিড় জঙ্গল হয়ে আছে। এমন কি, এদেশে যারা বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় শিক্ষিত র্তাদেরও বহু লোকের মন গৃঢ়ভাবে আফিমের নেশার মতো তামসিকতার দ্বারা অভিভূত । এর সঙ্গে লড়াই করা দুঃসাধ্য । আৰ্য্যজাতি যাদের এক দিন পরাজিত করেছিলেন, অবশেষে তাদেরই প্রকৃতি জয়ী হয়েছে। সমস্ত দেশ জুড়ে ঘটিয়ে তুলেছে মারাত্মক আত্মবিচ্ছেদ। পরস্পরকে অবজ্ঞা করা এবং পাশ কাটিয়ে চলার যে দুর্ব্যবহার তা এই দেশের সকল জাতিকেই যুগ যুগ ধরে আঘাত করছে। আমরা যখন আজ রাষ্ট্রীয় ঐক্যের জন্ত বদ্ধপরিকর, তখন এ কথা আমাদের স্পষ্টভাবে বোঝা আবশ্বক যে, অস্তরের ঐক্য হারিয়ে শুধু বাহবিধির ঐক্যদ্বারা কোনো দেশ কখনই সৰ্ব্বজনীন একত্ববোধে মহাজাতীয় সার্থকতা পায় নি । আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র বহু উপরাষ্ট্রের সমবায়ে একটি প্রকাও রাষ্ট্র। যেন একটা বৃহৎ রেলোয়ে ট্রেন, অনেকগুলি ভিন্ন ভিন্ন গাড়ি পরস্পর সংবদ্ধ হয়ে চলেছে স্বনিদিষ্ট পথে । সম্ভব হয়েছে তার একমাত্র কারণ সেখানে সকলে শিক্ষায় দীক্ষায় নিবিড়ভাবে মিলে একজাতি হয়ে উঠেছে, মোটের উপরে ভাবনা ও বেদনার এক স্বায়ুমণ্ডলীর দ্বারা সেখানে জনচিত্তকলেবর অধিকৃত । তারা পরস্পর পরস্পরের একপথে চলবার বাধা নয়, পরস্পরের সঙ্গয় তারা। তাদের শক্তিসাফল্যের এই প্রধান কারণ। খণ্ডিত মন ও আচরণ নিয়ে আমাদের ইতিহাসের গোড়া থেকে আমরা বরাবর হারতে হারতে এসেছি। আর, আজই কি আমরা সকল খণ্ডতা সত্ত্বেও জিতে যাব, এমন দুরাশা পোষণ করতে পারি ? বিদেশীর অপমান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঐক্যের দরকার অাছে, এ কথা আমরা তর্কদ্বারা বুঝি, কিন্তু কোনো মতেই সেই অস্তর দিয়ে বুঝি নে যেখানে বিচ্ছেদের বিষ ছড়িয়ে আছে। বেহারের লোক, মাদ্রাজের লোক, মাড়োয়ারের লোককে আমরা পর ব’লেই জানি, তার প্রধান কারণ যে-আচারের দ্বারা আমাদের চিত্ত বিভক্ত সে-আচার কেবল যে স্বীকার করে না বুদ্ধিকে তা নয়, বুদ্ধির বিরুদ্ধে যায়। আমাদের ভেদের রেখা রক্তের লেখা দিয়ে লিখিত। মুঢ়তার গণ্ডির মতো দুলৰ্ভশ্য ব্যবধান আর কিছুই নেই। আমাদের দেশের হরিজন-সমস্ত এবং হিন্দু-মুসলমানসমস্তার মূলে যে মনোবিকার অাছে, তার মতো বর্বরতা পৃথিবীতে আর কী আছে জানি না। আমরা পরস্পরকে বিশ্বাস করতে পারি না, অথচ, সে-কথা স্বীকার না ক’রে নিজেদের বঞ্চনা করতে যাই। মনে করি, ইংলও স্বাধীন