পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপস্থিত হয়। হৈমষ্ঠীকে হুধা ভালবাসিত, তাহাকে কাছে পাইলে আনন্দিত হইত। কিন্তু তাহার উপস্থিতিতে মনের সহজ আটপৌরে স্বণ্ডি ষেন কোথায় চলিয়া যাইত। সংসারের প্রাত্যহিক ধৰ্ম্ম তখন চোখে এত ছোট বলিয়া মনে হইত, | ঘরোয় প্রয়োজনের কথাবার্তা কানে এমনই বেস্করো শুনাইত ষে তাহার হাত পা মন সবই যেন অকস্মাৎ আড়ষ্ট হইয়া যাইত। দৈনন্দিন ব্যাপারে তাহাদের আর নিযুক্ত করা যাইত না । সেই জন্য এই সব চুল বাধা মুখ ধোওয়ার কাজ সে নেপথ্যে চুকাইয়া রাখিতেই ভালবাসে । সিঁড়িতে হৈমন্তীর উচু হিলের বিলাতী জুতার খট্‌খটু শব্দ ধ্বনিত হইয়া উঠিল । মৃদু একটা অঙ্গরাগের স্বগন্ধ হাওয়ায় ভাসিয়া ঘরে আসিল । স্বধার চেয়ে হৈমন্তী অনেকটা সহজ মানুষ ছিল । সিড়ি হইতেই একবার ডাকিয়া বলিল, “মাসিম, আমি মুধাকে নিতে এসেছি ।” ছোট খোকা একমাথা কোকড় চুল দুলাইয়া ছুটিয়া বাহির হইয়া বলিল, “হেমুদিদি, তোমার গলাটা বেশ সরু ! তুমি সোনার ঘড়ি পরেছ ” হৈমন্তী হাসিয়া তাহার হাতের ঘড়িটা খুলিয়া একবার খোকার হাতে বাধিয়া দিল। মহামায়া বলিলেন, “ফিরতে কি রাত হবে মা তোমাদের " হৈমন্ত্ৰী বলিল, “না, রাত হবে কেন ? অার হ’লেও আপনার ভয় নেই। আমি স্বধাকে নিজের হাতে ফিরিয়ে এনে আপনার বাড়ীতে দিয়ে যাব । আর আমরা ত একলা যাচ্ছি না। সঙ্গে ত সবাই রয়েছেন।” হৈমন্তীদের সিডান গাড়ীতে তাহার বাবা, ছোট ভাই ও একটি জেঠতুত বোন ছিলেন। স্থধাকে দেখিয়া তিন জনেই সমস্বরে কথা বলিয়া উঠিলেন। হৈমন্তীর এই দিদি মিলি বয়সে তাহার চেয়ে বছর-তিনের বড় । নিজের অস্তিত্ব ময্যাদা ও রূপগুণ সম্বন্ধে এমন আশ্চৰ্য্য সচেতন মানুষ খুব কম দেখা যায়। স্বধাকে দেখিয়াই সে একবার মাথার চুলের উপর সস্তপণে হাত বুলাইয়া, কানের নুতন গহনা দুইটি নাড়িয়া, গায়ের উপরের শাড়ীর ভাজ ও পাড়ের ভদটা ঠিক করিয়া লইয়া আবার চোখের দৃষ্টিটা এমন মোলায়েম করিয়া লইল যেন নিজের প্রসাধন সম্বন্ধে নিজে সে সম্পূর্ণই উদাসীন । মিলি বলিল, “ওয়াকিং শূ পরে এলে না কেন স্বধা ? এদিক্‌ ওদিক্‌ কত ঘোরাঘুরি করতে হবে, পাগুলো বেশ আরামে থাকত ” হৈমন্তী মৃধাকে জবাব দিবার বিড়ম্বন হইতে বাচাইবার জন্য বলিল, “বাঙালীর মেয়েরা শুধু-পায়ে হরিদ্বার থেকে কুমারিকা পৰ্য্যন্ত বেড়িয়েছে, তাদের চটিতে ত বিশ্ব বিজয় করা হয়ে যায়।” রণেন বাৰু বলিলেন, “তোমার রোদে রোদে ঘোরা অভ্যেস আছে ত মা ?” হৈমন্তীর ছোট ভাই সতু ভাঙা গলায় বলিল, “আমি কি খালি একলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে যাচ্ছি ? আমার দলের ত কই কেউ জুটল না। আপনার ভাইকেও যদি আনতেন ত একটু কাজ হ’ত ” গাড়ী সুধীন্দ্র বাবুর দরজায় আসিয়া দাড়াইল। এইখানে । তাহাকে তুলিয়া লইয়া এবং রণেন বাবুকে একটা দোকানে নামাইয়া দিয়া গাড়ী সোজা দক্ষিণেশ্বরে চলিয়া যাইবে । দক্ষিণেশ্বরের জীর্ণ ফটকের কাছে গাড়ী যখন পৌছাইল, তখন দেখা গেল ভিতরে ইহাদেরই অপেক্ষায় আর একদল মানুষ পথ চাহিয়া দাড়াইয়া আছে। গাড়ীটা দেখিয়াই চার জন যুবক ছুটিয়া আসিয়া প্রায় একই সঙ্গে দরজার হাতল ধরিয়া টান দিল। এ দলে একটিও মেয়ে নাই। নিখিল, স্বরেশ, তপন ও মহেন্দ্র চার জনে প্রায় সমবয়সী। ইহারা প্রায়ই হৈমন্ত্রীদের বাড়ী যাওয়া-আসা করে । মহেন্দ্র দূরসম্পর্কে সুধীন্দ্র বাবুর কি রকম যেন আত্মীয় হয়। র্তাহীদের বাড়ীতেই ছেলেবেলা হইতে বেশীর ভাগ সময় থাকিত, এখন পাস করিয়া নিজে একটা ছোট বাড়ী ভাড়া করিয়াছে। হৈমন্ত্রীকে এক সময় সে সংস্কৃত পড়াইত, সেই স্বত্রেই তাঁহাদের সঙ্গে পরিচয় । আজ ইহারা দক্ষিণেশ্বরে আসিবেন শুনিয়া মহেন্দ্র আপনা হইতেই তাহার তিন বন্ধুকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া অনিয়াছে। স্বধার সকলের সঙ্গে পরিচয় নাই কিন্তু হৈমন্তীর সকলেই পূৰ্ব্বপরিচিত। নিখিল দীর্ঘাকৃতি শ্যামবর্ণ সদাহাস্যমুখ স্থপুরুষ যুব, সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবীর উপর গলায় চামড়ার ব্যাণ্ডে ক্যামেরা বুলিতেছে, কথা হাসি ও ছবিতোলা কোন বিষয়েই কার্পণ্য নাই ।