পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Oختلاكية গাছের ডালপালা অনাবৃত শিরা-উপশিরার জালের মত প্রকাশ হুইয়া পড়িয়াছে। যেন তাহারা আকাশের দিকে সহস্ৰ অঙ্গুলি রিস্তার করিয়া নূতন প্রাণ ভিক্ষা করিতেছে। গঙ্গার ঠিক ধারে একটা বটগাছের বড় শিকড় গুড়ির মত মোটা হহয়! প্রায় হেলিয়া শুইয়া আছে । স্বরেশ বলিল, “এখানে পা ঝুলিয়ে বেশ বসা যায়। আপনারা যদি চান ত একটা শতরঞ্জিও পাতা যেতে পারে।” গাড়ীতে গদির তলায় শতরঞ্জি ছিল, সতু এতক্ষণে তবু একটা কাজের মত কাজ পাইয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে আনিতে দৌড়িল । ছুটিবার সঙ্গে সঙ্গেই সে ভাঙা গলায় গান ধরিয়াছিল,— *এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুণে, দেখা পেলেম ফাঙ্কনে ৷” শতরঞ্জি আসিয়া পৌছিলে মহেন্দ্র পালা করিয়া সকলের মুখের দিকে তাকাইয়া বলিল, “কে কোথায় বসবে বল, তার পর একটা ছবি তোলার ব্যবস্থা হবে।” স্বধীন্দ্রবাবু বলিলেন, “দেখ, আমার যদিও মনে হয়, “পাড়ার যত ছেলে এবং বুড়ো, সবার আমি একবয়সী যেন, তবুও সত্যি কথা বলতে গেলে আমি বুড়ো এ-কথা লুকানো যায় না। স্বতরাং আমি তোমাদের ছবির বাইরে থাকলেই ভাল। ঐ উচু বেদীটাতে আমার স্থান করে নিচ্ছি আমি । ওখান থেকে গঙ্গার ওপার পর্য্যস্ত সারাক্ষণ দেখা যায়।” নিখিল বলিল, “আমরা বেঁচে থাকতে থাকতে আপনি বুড়ো হতে পাবেন না। আপনার ধে রকম শরীর তাতে আমাদের চেয়ে আপনার আয়ু কম হবে না।” সতু বলিল, “আমি বিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে না বসে ঐ উচু ভালটাকে দোলন করে বসি।” হৈমন্তী তাহাকে দূরে ঠেলিয়া দিয়া বলিল, “হকুমানের যত উচু ডালে বসে মানুষের পক্ষে ততই নিরাপদ। তুমি সামনে থাকলে ত আমাদের আর সব ভাবনাই ভুলিয়ে দেবে।” নিখিল হাসিয়া বলিল, “কিন্তু মনে রাখবেন, এখানে আমরা শুধু ভাবনা ভাবতে আসি নি, অন্ত কিছু কিছু সাধু উদ্বেগুণ্ড আছে।” স্বরেশ সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে নিখিলের মুখের দিকে তাকাইয় প্রবাসী বলিল, “কি কি উদ্দেশ্য আছে নিৰ্ভয়ে ব’লে ফেল না । আশ্রমপীড়া না ঘটে এইটুকু মনে রাখলেই হ’ল।” তপন ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “একটা ত খুব নির্দোষ উদ্দেশু ছিল ছবিতোলা । তার জন্তে মস্তিষ্ক কি মাংসপেশী কোনটারই খাটুনি বেশী হ'ত না ।” স্বধা যেন অত্যন্ত ভয়ে ভয়েই বলিল, “মন্দির-টন্দির কিছুই দেখলাম না, আগেই ছবি তুলে কি হবে ?” মিলি আতঙ্কিত হইয়া বলিল, “কি যে তোমাদের সব ব্যবস্থা ? ঘুরে ঘুরে ধুলোয় আর হাওয়ায় চুলগুলো জটাইবুড়ীর মত হ’লে তার পর যা ছবি উঠবে, বাধিয়ে রাখবার মত।” হৈমন্তী বলিল, “আচ্ছা ভাই স্বরেশদ, দিদিকে রাগিয়ে কাজ নেই। ওর চেহারাটা অপারার মত থাকতে থাকতে ছবি তুলে ফেলাই ভাল।” - মিলি বলিল, “বাবা, তুমি ত ভাজা মাছটি উণ্টে খেতে জানতে না, তোমার মুখে এত কথা ফুটল কবে থেকে ’ প্রথম ছবিখানা তুলিল মহেন্দ্র, দ্বিতীয় নিখিল । নিখিল বলিল, “আমাদের দেশের সনাতন প্রথামত মেয়ের একদিকে ছেলেরা একদিকে দাড়াতে পাবে না। এক-এক জন মেয়ের পাশে এক-এক জন ছেলে । কে কার পাশে দাড়াবে বল ।” সতু গাছের উপর হইতে বলিল, “মিলিদিদি, তুমি ভাই তপনদার পাশে দাড়িও না, দোহাই, তাহলে Beauty and the Beast-এর উণ্টো ছবি হয়ে যাবে ” মহেন্দ্র বলিল, “এই বোকা ছেলেটাকে আজ না আনলেই ত হ’ত। কথা বলতেও শেখে নি।” স্বধা স্বভাবত গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, বেড়ানো-চেড়ানোর সময়েও প্রাকৃতিক দৃশু ও মানবস্তষ্ট শিল্পের সৌন্দৰ্য্য অনুভূতির দিকে তাহার যতটা মন, সঙ্গীদলের হাল্কা কথা ও হাসির স্বরের প্রতি তাহার তত মন নয়। কিন্তু আজ সে বিস্থিত হইয়া দেখিল যে আজিকার এই তুচ্ছ খুঁটিনাটি কথায় তাহার মনত বেশ আনন্দের সহিত যোগ দিতেছে। যে ষত হাল্কা হাসির দিকে কথার মোড় ফিরাইতেছে, তাহাকেই তত যেন বুদ্ধিমান ও বিবেচক বলিয়া বোধ হইতেছে। রাণী রাসমণির প্রকাও কালীমন্দির, দ্বাদশ শিবের মন্দির,