পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরমহংসদেবের ঘরদ্বার ঘুরিয়ু সকলে নদীর ঘাটের দিকে চলিল। একদল মানুষকে ঘাটে নামিতে দেখিয়া কয়েকটা পানসী নৌকার মাঝি হাত তুলিয়া ডাকাডাকি স্বরু করিয়া দিল। তখন ভাট স্বল্প হইবার উপক্রম করিয়াছে। গঙ্গার ছোট ছোট ঢেউগুলি কচি ছেলের মত ক্রমাগত টলিয়া টলিয়া চলিতেছিল । একবার তীরের উপর আসিয়া আছাড় খাইয় পড়ে, আবার সরিয়া যায়। ছেলের বলিল, “মেীকো চড়তে হ’লে নেমে আসতে হবে, কিছু কাদাও ভাঙতে হবে।” মৃধা পাড়াগায়ের মেয়ে, তাহার ভয় কম, কোমরে আঁচল গুজিয়। একেবারে ঘাটের শেষ ধাপে নামিয়া গেল। একটা ষ্টীমার দুষ্ট ধারের জলে ঢেউ তুলিয়া মাঝখানে যেন প্রকাণ্ড চওড়া রাস্ত কাটিয়া দিয়া চলিয় গেল। দুই পাশের ভাঙা ঢেউ ফুলিয়া ফুলিয়া দুলিয়া দুলিয়া দুষ্ট তটে গিয়া গড়াইয়া পডিতে লাগিল। মুখার পায়ের উপরেই ঢেউগুলি আছড়াইয় পড়িতেছে দেখিয়া হৈমন্তী বলিল, “গঙ্গাদেবী কাকে প্রণাম জানাচ্ছেন কে জানে, তুমি ভাই ও প্রণাম চুরি ক’রে! না ।” মৃধা বলিল, “এ প্রণাম নয়, এ জাহ্নবীর ডাক, উত্তররামচরিতে পড় নি ? দেখ, দেখ, ঢেউয়ের চুড়াগুলি কেমন আঙুলের ডগার মত হয়ে হয়ে পড়ছে। দেবী জাহ্নবী সহস্ৰ অঙ্গুলি তুলে তার কন্যাকে ডাক দিচ্ছেন। ইচ্ছা করে ঝাপিয়ে পড়ি ।” এতগুলা কথা বলিয়াই স্বধা কেমন যেন লজ্জিত হইয়া পড়িল । চারিদিকে চাহিয়া দেথিলী তাহার কথা হৈমন্তী ছাড়া বেশী কেউ লক্ষ্য করে নাই। নিখিল ও স্বরেশ তখন নৌকার দর করিতে ব্যস্ত। অনেক দর-কষাকষির পর আট আনায় নৌকা ঠিক হইল। নিখিল ও মহেন্দ্রই একটু শক্ত গোছের মানুষ, তাহার দুই ধারে দাড়াইয়া মেয়েদের হাতে ধরিয়া নৌকায় তুলিয়া দিতে লাগিল। নৌকা এত টলে যে তাহার উপর স্থির হইয়া দাড়ানোই যায় না। মিলি ও হৈমন্তী নিখিলের হাত ধরিয়া ও মহেন্দ্রর কাধে ভর দিয়া টপ টপ, করিয়া নৌকায় উঠিয়া পড়িল ৷ ইতস্ততঃ করিতে লাগিল মধl 1 ছেলেদের সঙ্গে চলা-ফিরায় সে অভ্যস্ত ছিল না। ইহার ভিতর নিন্দ-প্রশংসার কোন কথা থাকিতে পারে কি নী এ চিন্তা স্পষ্ট করিয়া তাহার মনে উঠে নাই। একটা د -اس- و ۹ স্বাভাবিক সঙ্কোচ আপন হইতেই তাছাকে বাধা দিতেছিল । তদুপরি পিসিমার অতিরিক্ত সাবধানতার বাণী হয়ত তাহার মনে অলক্ষ্যে কিছু কাজ করিয়াছিল। * মহেন্দ্র হঠাৎ অগ্রসর হইয়া আসিয়া শক্ত করিয়া স্থধার হাত ধরিয়া বলিল, “দেখুন, ভীরুতা স্ত্রীলোকের ধৰ্ম্ম হ'লেও সব সময় এ ধৰ্ম্মে নিষ্ঠ রাখা বুদ্ধির পরিচয় নয়। আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন ?” মহেন্দ্রর হাতের তলায় সুধার হাত কঁপিয়া উঠিল ; জলে পড়ার ভয়ে নয়, সম্পূর্ণ অস্থান অচেন কি একটা ভয়ে বুকটা দুলিয়া উঠিল । এ অনুভূতি তাহার জীবনে একেবারে নূতন । স্বধ। উত্তর দিতে পারিল না ; নিখিল ও অগ্রসর হইয়া আসিল । “কিসের আপনার এত ভয় ? আচ্ছ, আমরা দু-জনেই আপনাকে তুলে দিচ্ছি। আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না । ওঙ্গে স্বরেণ, তোমরা কিন্তু এ সময়ে ম্যাপ নিতে চেষ্টা ক’রে না ।” নিখিল ও মহেন্দ্র ধর্থন সুধাকে মাটি হইতে প্রায়ু শূন্যে তুলিয়া ফেলিয়াছে, তখন মুধ ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “ণ, ন, আমি নিজেই পারব। আমাকে তুলে দিতে হবে না।” নিখিল নৌকার কাছে প্রায় কাদার মপো শধটা নাচু করিয়া অর্ধেক হাটু গাড়িয়া বসিতেই স্বধ| তাহার পিঠে ভর করিয়া উঠিয়া পড়িল । সর্বশেধে মঠে দ ও নিপিল মেীকার তক্তার উপর স্বধার তুষ্ট পাশে আসিয়া বসিয়া পড়িল । তপন বসিয়াছিল হৈমষ্ঠীর পাশে, আর স্বরেশ মিলির ও সতুর মাঝখানে । সুধার ইচ্ছা করিল, উঠিয়া গিয়া ঙ্গৈমস্থার পাশে বসে, নিখিল ও মহেন্দ্রর সঙ্গে গল্প করিতে ত সে আসে মাই, গল্প করিবার ক্ষমতাও ভাঙ্গর বেশী মাষ্ট । কিন্তু উঠিা গেলে শহরের ছেলের যে ইহাকে অপমান বলিয়া গ্রহণ করিতে পারে এ ভয়টাও ভাঙ্গর ঠিল । তাঙ্গর মনে আছে গত বৎসর আলিপুরের বাগানে বেড়াইতে গিয়া সে মহেন্দ্রর কেন লেনশেড থাইতে আপত্তি করিয়াছিল ভদ্রতা ভাবিয়া, কিন্তু তাহাতে মহেন্দ্র এমনই অপমানিত বোধ করিল যে রাগিয়া গেলাসমৃদ্ধ দূরে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিল। মঙ্গেই বলিয়াছিল, “আমি কি এমনই অস্পৃশু যে আমার হাতে জলও খাওয়া যায় না ।”